শেখ সা’দীর বাণী

(মধ্য যুগে ফারসি ভাষার অন্যতম সেরা কবি শেখ সা’দীর পুরো নাম আবু মুহাম্মদ মোসলেহ আল-দীন বিন আবদুল্লাহ শিরাজি (জন্মধ ১২১০-মৃত্যু: ১২৯১)। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তিনি তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘গুলিস্তান’ ও ‘বুস্তান’ এর জন্য বিখ্যাত। তিনি “শব্দের কারিগর” হিসেবেও খ্যাত। নবীকরিম সা: এর শানে তাঁর লেখা “বালাগাল উলাবি জামালিহী —’ এক অনন্য সৃষ্টি।) ****“একবার বাগদাদের প্রধান বাজারে আগুন লাগলে এক লোক আমার কাছে এসে বললো যে আমার দোকান আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমি উত্তরে বললাম, “আলহামদুলিল্লাহ!” — সকল প্রশংসা আল্লাহর। সেই মুহূর্তে আমি মানুষের সামনে লজ্জাবোধ করেছি যে আমি স্বার্থপরের মতো নিজের সুবিধা খুঁজেছি। আমি মাত্র একবার “আলহামদুলিল্লাহ” বলার জন্য আমাকে ক্ষমা করতে ত্রিশ বছর যাবত আল্লাহকে খুঁজছি।” ****“এক দুরাচারী বাদশাহ তার এক অনুরাগীর কাছে জানতে চাইলেন যে বাদশাহ’র জন্য উত্তম ইবাদাত কি! লোকটি উত্তর দিলেন, “আপনার জন্য সেরা ইবাদাত হচ্ছে দিনের অর্ধেক সময় নিদ্রিত থাকা, তাহলে অন্তত কিছু সময় জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।” ****“দশ জন দরবেশ একটি কম্বলের নিচে ঘুমাতে পারেন, কিন্তু দু’জন বাদশাহ একটি রাজ্য শাসন করতে পারেন না।” ****“একটি মণির টুকরা কাদায় পড়ে গেলেও সেটি অমূল্য। কিন্তু ধূলি যদি বেহেশত থেকে পতিত হলেও তা মূল্যহীন।” ****“সমুদ্রের গভীরে এত সম্পদ রয়েছে, যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। কিন্তু তুমি যদি নিরাপত্তা খোঁজো, তা পাবে সমুদ্র সৈকতে।” ****“এক ছাত্র তার ওস্তাদকে বললো: “লোকজন আমাকে খুব বিরক্ত করে, অনেকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসে। তাদের আসা-যাওয়ায় আমার মূল্যবান সময় নষ্ট…

বিচিত্র খবর-বিচিত্র তথ্য

টার্গেট ১০০ সন্তান: ৬০তম শিশুর জন্মের পর আরও স্ত্রী খুঁজছেন তিনি! নাম তার সরদার হাজী জান মুহাম্মাদ খান, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার বাসিন্দা। সম্প্রতি ৬০তম সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। তবে তার লক্ষ্য ১০০ সন্তানের বাবা হওয়া। লক্ষ্য পূরণে আরও স্ত্রী খুঁজছেন তিনি। জানা গেছে, বর্তমানে জান মুহাম্মাদের ঘরে আছে তিনজন স্ত্রী। এখন চতুর্থ স্ত্রী খুঁজছেন তিনি। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জান মুহাম্মাদের স্ত্রীরা এখন পর্যন্ত ৬০ সন্তানের জন্ম দিলেও তাদের মধ্যে ৫৫ জন বেঁচে আছে। তারা সবাই সুস্থ আছে। বাকি পাঁচজন মারা গেছে। এতসব স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একই বাড়িতে বাস করেন জান মুহাম্মদ। পঞ্চাশ বছর বয়সী সরদার জান মুহাম্মাদ খান কোয়েটা শহরের ইস্টার্ন বাইপাস এলাকার বাসিন্দা এবং খালজি গোত্রের একজন সদস্য। তিনি একজন ফার্মাসিস্ট। ওই এলাকায় তার একটি ক্লিনিক আছে। জান মুহাম্মাদ খান তার ৬০তম সন্তানের নাম রেখেছেন খুশহাল খান। তিনি বলেন, খুশালের জন্মের আগে তার মাকে আমি উমরাহ করতে নিয়ে গিয়েছিলাম, এজন্য তাকে (সদ্যোজাত সন্তানকে) আমি হাজী খুশাল খান ডাকব।  এতজন সন্তানের নাম মনে থাকে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন নয়? জান মুহাম্মাদ আরও জানান, তিনি চতুর্থ বিয়ে করতে চান এবং সেজন্য তিনি পাত্রী খুঁজছেন। তিনি বলেন, আমার সব বন্ধুকে বলে রেখেছি আমাকে চতুর্থ বিয়ের জন্য একজন পাত্রী খুঁজে দিতে। বয়স হয়ে যাচ্ছে, তাই তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজটা সারতে চাই। তিনি একাই কেবল আরও সন্তান চান বিষয়টি এমন নয়, তার স্ত্রীরাও একইভাবে আরও সন্তান চান। তাদের সন্তানদের মধ্যে পুত্রের চেয়ে কন্যার সংখ্যা…

দাম্ভিকতা ও রাশিচক্র

কারও দাম্ভিক বা আত্মম্ভরী মনোভাব কি আসলে নিজের প্রতি তার অবিচল আস্থার অভিব্যক্তি? বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত। অনেকে বলেন, এটি মানুষের ব্যক্তিত্বের বৈকল্য, এক ধরনের মানসিক ব্যাধি। একটি বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই যে ওইসব লোকজনই দাম্ভিক বা নার্সিসটিক (Narcissistic), যারা নিজেদের ভালোবাসেন এবং নিজেদের বিষয়াবলী ছাড়া অন্য কারও বিষয়ে তারা শুধু অমনোযোগীই নন, নিজের ওপর চরম আস্থার মুখোশের আড়ালে তারা তাদের সামান্য সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ব্যাপারটি বেশ জটিল। দাম্ভিক লোকজন দৃশ্যত আন্তরিক হলেও আবেগশূন্য; ‘ইয়েস,’ ‘নো,’ ‘ভেরিগুড’ এর বাইরে অগ্রসর হন না; তারা আত্মমগ্নতা ও আত্মতৃপ্তির মাঝে থাকেন। দাম্ভিকতা বা আত্ম-অহমিকার প্রধান লক্ষণগুলোর একটি হলো, এ ধরনের মানুষ তাদের আচরণ সম্পর্কে অবহিত, কিন্তু তারা এটা নিয়ে মাথা ঘামান না, কারণ তারা তাদের বৈশিষ্ট বা স্বভাবকে অস্বাভাবিক বা অবাঞ্ছিত বলে মনে করেন না।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক প্রিয়ভাজন প্রফেসর আশরাফ আহমেদ, যিনি বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপচিালকের দায়িত্বও পালন করেছেন, তাঁর ‘আত্মঅহমিকা’ নিবন্ধটি সম্পাদনা করতে গিয়ে বিষয়টির ওপর আরও কিছুটা আলোকপাত করার ইচ্ছা জাগ্রত হলো। কারণ আমি ‘খুদী’ বা ‘আমিত্ব’ নিয়ে কবি আল্লামা ইকবালের কবিতার নিচের অংশটুকু আমি প্রায়ই উচ্চারণ করি, চর্চা করি এবং আমার ঘনিষ্টজনদের আমল করতে বলি। কবিতাংশ হচ্ছে: “খুদী কো কর বুলন্দ ইতনা,কে হর তকদীর সে পেহলে,খুদা বান্দা সে খুদ পুছে,বাতা তেরি রেজা ক্যয়া হ্যায়?” (তোমার আমিত্বকে এত দৃঢ় করো,যাতে প্রতিবার ভাগ্য নির্ধারণের আগেআল্লাহ স্বয়ং তোমার কাছে জানতে চানবলো, তুমি কি চাও?) আমি জানি না,…

অপসংস্কৃতির বেড়াজালে যুবসমাজ: উত্তরণের উপায়

আলী ওসমান শেফায়েত সংস্কৃতি একটি জাতির প্রাণ। আর সভ্যতা হলো সেই জাতির দেহ স্বরূপ। প্রাণহীন দেহসত্তার যেমন কোনো মূল্য নেই, দেহহীন আত্মাও তেমনি মূল্যহীন। তাই বলা যায়, সংস্কৃতি ও সভ্যতা অনেকাংশে পরষ্পরের পরিপূরক। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে আধুনিক বিশ্বে প্রতিযোগিতার ময়দানে একটি উন্নত জাতি হিসেবে পরিভ্রমণ করার জন্য সংস্কৃতির চর্চা ও মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সংস্কৃতিহীন জাতি প্রাণহীন জড় পদার্থের ন্যায়। যার কোনো কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। কোনো আত্মা যদি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তাহলে সে আত্মা যেমন ধীরে ধীরে অপ্রত্যাশিত, কিন্তু অপ্রতিরোধ্য গতিতে চিরস্থায়ী বাস্তবতা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, ঠিক তেমনি একটি জাতির আত্মা নামক সংস্কৃতি যদি অপসংস্কৃতির মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে সে জাতিও ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে কিংবা অন্য জাতির উপনিবেশে পরিণত হবে, সন্দেহ নাই। মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় দেশ। এ দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ একত্রে বসবাস করে। আর এর ৯১% মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ার কারণেই এদেশে গ্রহণীয় সংস্কৃতি ইসলামী ভাবধারার হওয়ায় স্বাভাবিক। যার মূল সুর হলো তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত। যার জন্য মানুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রকৃতিগতভাবে সেদিকেই ধাবমান। কিন্তু পাশ্চাত্য সংস্কৃতিমনা ও সুবিধাবাদী কিছু বুদ্ধিজীবীদের প্রহরায় ইসলামী সংস্কৃতির মূলস্তম্ভ তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের শিক্ষা থেকে জাতি আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। অন্যদিকে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস দেশের সহজ-সরল মানুষদেরকে অক্টোপাসের ন্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে ও সাক্ষাৎ ধ্বংসের মুখে নিপতিত করছে। তথাকথিত আধুনিকতা, অপসংস্কৃতি ও সভ্যতা নামের অন্ধকার বেড়াজালে বন্দি হয়ে, মুসলিম জাতি আজ…

আমার রাজনৈতিক চেতনা

আমি রাজনীতিবিদ নই, কিন্তু আমি আপাদমস্তক রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ। স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকে আমার মাঝে এ চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর দু:শাসন দেখে দেখে যখন যৌবনে পা দিয়েছি, তখন জাতীয়তাবোধের চেতনা আমাকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে লড়তে নিয়ে গেছে রণাঙ্গনে। হ্যাঁ, অসম সাহসে ভর দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। দেশকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার সশস্ত্র সংগ্রামে শরীক আমার অনেক সহযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেছে। তাদের এ আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়নি। আমরা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পৃথিবীর দেশে দেশে আজ উড়তে থাকা লাল-সবুজ পতাকা একজন মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক হিসেবে আমাকে গর্বিত করে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্ধশত বছর অতিক্রম করেছে। কিন্তু ফেলে আসা পঞ্চাশ বছরেও কি আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি? সামগ্রিক মূল্যায়নে একথা স্বীকার করতেই হবে যে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছি। আজ বিদেশি শাসকরা দেশ শাসন না করলেও যে রাজনৈতিক দলগুলোর শিখণ্ডিরা বাংলাদেশকে শাসন করছেন, তাদের আচার আচরণই প্রমাণ করে যে তারা দেশ শাসন করেন নিজেদেরকে জমিদার এবং জনগণকে প্রজা ভেবে। ক্ষমতার মোহে তারা জনগণকে তোয়াক্কা করেন না, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনের বিষয়বস্তুতে পরিণত করেন। রাজনীতিবিদদের এ মানসিকতা নতুন কিছু নয়। পাকিস্তান আমলে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে যখন দেনদরবার চলছিল তখনো তারা তাদের ক্ষমতার জন্য যতটা প্রয়োজন ততটুকু গ্রহণ করে পাকিস্তানি হানাদারের সঙ্গে আপস করে নিরাপদ দূরত্ব বজায়…

গোলাম আলীর কণ্ঠে দুটি গজল ও নুসরত ফতেহ আলী খানের দুটি কাওয়ালি

উপমহাদেশের বিখ্যাত গজল শিল্পী গোলাম আলী ও কাওয়ালি পরিবেশক নুসরত ফতেহ আলী খানের কণ্ঠে বেশ কিছু খ্যাতিমান কবি ও গীতিকারের কবিতা গজল ও কাওয়ালি প্রেমিকদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। অনেকে হয়তো গজল ও কাওয়ালির কথাগুলো যথাযথভাবে বুঝতে পারেন না, তা সত্বেও তারা আবেগ-তাড়িত হন। অনেকে আমাকে অনুরোধ করেন এগুলোর বাংলা তরজমা করে দিতে। আমি স্বউদ্যোগে তা করি, কেউ অনুরোধ করলে আরও অনুপ্রাণিত হই। এখানো গোলাম আলীর গাওয়া দুটি জনপ্রিয় গজল ও নুসরত ফতেহ আলী খানের দুটি জনপ্রিয় কাওয়ালির উর্দু উচ্চারণসহ বাংলা তরজমা উপস্থাপন করলাম। সাথে এগুলোর রচয়িতাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও যোগ করেছি। আশা করি পাঠকরা সাদরে গ্রহণ করবেন। আকবর ইলাহাবাদী (১৮৪৬-১৯২১) বিখ্যাত উর্দু কবি আকবর ইলাহাবাদী ১৮৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে আইন পেশায় যোগ দেন। এক পর্যায়ে তিনি তহশিলদার ও মুন্সেফ হিসেবেও কাজ করেন এবং তাঁর চাকুরি জীবন শেষ হয় একজন দায়রা জজ হিসেবে। ১৯২১ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর রচিত একটি কবিতা গোলাম আলীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। হাঙ্গামা কিউ বাড়পা “হাঙ্গামা হ্যায় কিউ বাড়পা, থোড়ি সি জো পী লি হ্যায়,ডাকা তো নেহি ডালা, চোরি তো নেহি কিয়া ÑÑউস মায় সে নেহি মতলব দিল জিস সে হো বেগানামাকসুদ হ্যায় উস মায় সে,সুরজ মে লাগে ধাবা ফিতরাত কে কারিশমে হ্যায়বুত হামকো কাহে কাফির,বুত হামকো কাহে কাফির আল্লাহ কি মরজি হ্যায়,না তজরুবা কারি যে ওয়াইজ কি ইয়ে বাতেঁ…

সূর্যের মতো উজ্জ্বল তরবারির মতো শানিত

মূল: অনিতা আমিরেজওয়ানি অনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু [ইরানের সাফাভি রাজবংশের প্রথম পর্যায়ের ইতিহাসের আলোকে লেখা অনিতা আমিরেজওয়ানির উপন্যাস ‘ইক্যুয়াল অফ দ্যা সান’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। সাফাভি রাজবংশের (স্থায়িত্ব: ১৫০১-১৭২২) অন্যতম সম্রাট তাহমাস শাহের (১৫১৪-১৫৭৬) কন্যা শাহজাদি পারী খান খানুম ১৫৪৮ সাল থেকে ১৫৭৮ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তিনি তাঁর সৎ ভাই ইসমাইল শাহকে বিষয় প্রয়োগে হত্যা করেছিলেন বলে সমসাময়িক ইতিহাসবিদরা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস পর পারীকে তাঁর সৎ ভাই মোহাম্মদ শাহ ও তাঁর স্ত্রী মাহদ-এ-ওলিয়া’র আদেশে হত্যা করা হয়। পারীর মৃত্যুর পর মাহদ-এ-ওলিয়া ইরানের কার্যত শাসকে পরিণত হন এবং দেড় বছর পর তিনিও নিহত হন। ] শাহজাদি পারী খানম চৌদ্দ বছর বয়সেই তেজস্বী, উদারতার গুণসম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি তীরন্দাজীসহ যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেছিলেন। তিনি ইরান শাহের বিশ্বস্ত পরামর্শকে পরিণত হন। তাঁর মাঝে কবি প্রতিভাও ছিল, কথার জাদুতে তিনি সকলকে মুগ্ধ করতে পারতেন। মহান এক রাজবংশে তাঁর জন্ম, যে বংশে বহু সাহসী নারীর জন্ম হয়েছে। তাঁর দাদি তাজলু খানুম মোসেলু, তাঁর দশ বছর বয়সী পুত্র তাহমাসকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করতে ভূমিকা রেখেছেন এবং ফুফু মাহিন বানু আমৃত্যু শাহ আহমাসকে পরামর্শ দিয়েছেন। চৌদ্দ বছর বয়সে পারী তাঁর ফুফুর স্থলে পিতা তাহমাসকে পরামর্শ দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন এবং পরবর্তী চৌদ্দ বছরে পিতার মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন তাঁর সকল সৎমাকে পেছনে ফেলে। পারীর তৎপরতা তাঁর বংশের সকল নারীর ভূমিকাকে ম্লান করে দিয়েছিল, কারণ তাঁর সাহসিকতার সীমা পরিসীমা ছিল না। শাহজাদি পরীর…

মাই স্টোরি

[ভারতের বিখ্যাত লেখিকা কমলা দাশ ১৯৩৪ সালে কেরালার মালাবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালে মারা যান। অর্ধশতাধিক উপন্যাস ও বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কমলা দাশ লেখালেখি করেছেন মালয়ালম ভাষায় এবং তিনি মালয়ালম ভাষার সেরা সাহিত্যিকদের অন্যতম।  তার বহু গ্রন্থ ইংরেজিসহ ভারতের প্রধান ভাষাগুলোতে অনুদিত হয়েছে। কমলা দাশ ভারতীয় নারীসমাজের মুক্তির নতুন পথপ্রদর্শন করেছেন তার লেখনীর মাধ্যমে। তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাই স্টোরি’ সত্যের প্রতি তার প্রেমের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। লক্ষ লক্ষ ভারতীয় পাঠক তার এই গ্রন্থ পাঠ করে তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। সমালোচনার কণ্টক তাকে বিদ্ধ করেছে, ক্ষতবিক্ষত করেছে। হুমকির মুখে পড়েছেন। এক পর্যায়ে হিন্দুধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করায় ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নতুন নাম গ্রহণ করেন ‘কমলা সুরাইয়্।া’ তিনি বলেছেন যে ধর্মান্তুরিত হওয়ায় তার আত্মীয়স্বজনরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মৌলবাদী হিন্দুরা তাকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। ইসলাম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, ইসলামের সারল্য এবং এ ধর্মে নারীর নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা তাকে মুগ্ধ করেছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘প্রকৃত সত্য আল্লাহই ভালো জানেন।’ ভারতীয় সমাজে নারীর অমর্যাদাকর অবস্থা সম্পর্কে তার আত্মোপলব্ধি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিটি শয্যা হচ্ছে এক একটি ক্রুশ, যে ক্রুশে নারীকে প্রতিনিয়ত বিদ্ধ করা হচ্ছে। মানুষ লালসার শিকার হয়, প্রেমে পড়ে না। আর নারী আত্মবিধ্বংসী প্রকৃত প্রেমে বিধ্বস্ত হয়।” কমলা দাশ তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাই স্টোরি’র ভূমিকায় লিখেছেন, “প্রথম বার হৃদরোগে আক্রান্তু হবার পর ডাক্তার…

বিয়ে বাড়ির রোস্ট

বিয়ে বাড়ির মুরগীর রোস্ট ছিল রবিউলের অত্যাধিক পছন্দের। বলা যায় তখন একটা মুরগীর রোস্টের জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারতো ও! কিন্তু হলে কি হবে বরযাত্রী দলে তো নেয়া হয়নি ওকে। রবিউল বরযাত্রী দলে জায়গা পায়নি বলে বাড়িতে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেলেন দাদীমা। উনি নাতির মাথায় হাত দিয়ে স্বান্ত্বনার সুরে বললেন, ‘ভাই তোমার লাগি আমি রোস্ট বানায়া দিমু।’ রবিউল দাদীর কথায় বিশেষ গুরুত্ব দিল না। নয় বছর বয়সেই ও বুঝে গিয়েছিল, বাড়িতে দাদীর কথার কোন দাম নেই। তাছাড়া দাদী কি ভবিষ্যদ্বানী করেন, নিজেই সেটা পরে মনে রাখতে পারেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, বাড়ির বানানো রোস্ট বিয়ে বাড়ির রোস্টের মতো কখনই এতো মজা হয় না। গ্রামের কাদের গাজীর ছেলে কবির গাজীর বিয়েতে এক পরিবার থেকে একজন হিসেবে দাওয়াত পেয়েছে রবিউলের বাবা শফিকুল ইসলাম। মেয়েপক্ষ থেকে বরযাত্রী সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই সংখ্যা ধরে রাখতে হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা কাদের গাজির। যে সময়ের কথা বলছি তখন বিয়ের সময় জিজ্ঞাসা করা হত, কয়টা কোস্টার যাবে? কোস্টার মানে পরিবহণ রুটের বাস। কারো বিয়েতে দুইটা কোস্টার ভাড়া করা মানে তারা বেশী ধনী, দাপট আছে। আর তিনটা করা মানে বিদেশে আত্মীয় স্বজন আছে।। কবির গাজীর বিয়েতে একটা কোস্টার ভাড়া করা হয়েছিল, কারণ তারা মধ্যবিত্ত। একটা কোস্টার হওয়াতে জায়গা পর্যাপ্ত ছিল না। যে কারণে বাড়ি গুনে শুধু পরিবারের প্রধানকে বলা হয়েছিল। ছোটদের কাউকে বলা হয়নি। পরিবারের প্রধান হিসেবে দাওয়াত পেয়েছিল রবিউলের বাবা। দাওয়াত দিয়ে গাজি বাড়ির…

একজন আপোষহীন খলি মন্তাজ

বিলেকাসা ঝলমলে বিশাল হলরুম। মানুষে ঠাসা, কিন্তু কোন ফিসফাস নেই, অন্য কোন শব্দ নেই। শব্দ শুধু একজনের কথার, সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছেন। তার প্রতিটি শব্দ যেন সবাই গিলে খাচ্ছেন। যিনি কথা বলছেন তিনিই খলি মন্তাজ। অনেকেই তাকে দেখেছে, হয়ত এই প্রথম তাকে শুনছে। অনেকে তাকে শুনেও থাকতে পারে, কিন্তু এই প্রথম তাকে দেখছে। কিন্তু আমি তাকে এই প্রথম দেখলাম, তাকে এই প্রথম শুনলাম, এবং আমি আনন্দে কাঁপলাম। খলি মন্তাজ, দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। পত্রিকা জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কি অদ্ভুত সুন্দর তার কথা, পত্রিকা বুঝবে শুধু দেশ এবং মানবতা, একটি পত্রিকা হল সমাজ এবং দেশের জন্যে এক কলুষমুক্ত দর্পণ, সাংবাদিক হবেন সত্যের বাহক, দেশ এবং মানবতার খাতিরে একজন সাংবাদিক কখনোই মিথ্যার সঙ্গে আপোষ করতে পারেন না, একটি পত্রিকার সম্পাদক … আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকার আপোষহীন সম্পাদক খলি মন্তাজকে। এত দিনেও কোন শিক্ষক আমাকে সাংবাদিকতা বা পত্রিকা নিয়ে এরকম কথা বলতে পারেননি। খলি মন্তাজের প্রতিটি কথা আমার হৃদয়ে নতুন ভাবে বাজতে থাকে। আমি ঠিক করে ফেলি, পাশ করেই আমি খলি মন্তাজের দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকায় জয়েন করব, খুব কাছ থেকে সাংবাদিকতা শিখব খলি মন্তাজের কাছে। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে আমার ঘুম আসে না। এত বড় অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার কথা না। আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান স্যারের কারণে আমি এই সুযোগ পেয়েছি। বিশেষ একটি কারণে তিনি আমাকে খুবই পছন্দ করেন। খলি মন্তাজের কথায় এখনো মোহাবিষ্ট…