dhakadigest

dhakadigest

সাদি মোহাম্মদের আত্মহনন ও বিষন্নতা

শিল্পী সাদি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু খ্যাতি, অর্জন ও আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তাসত্বেও বিষন্নতা যে মানুষকে চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে, তার প্রমাণ খ্যাতিমান রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সাদি মোহাম্মদের আত্মহননের ঘটনা। বিশ্বে বহু সফল ব্যক্তি বিষন্নতার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। নোবেল পুরস্কার লাভ করেও আমেরিকান ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিষন্নতা কাটেনি। মাথায় গুলি করে মরে গেছেন। ইংলিশ কবি ভার্জিনিয়া ওলফ বিষন্নতার শিকার হয়েছিলেন এবং সুইসাইড নোট লিখে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। ফ্রাঞ্জ কাফকা বহুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তিনি তার চিকিৎসককে পর্যন্ত বলেছিলেন, তাকে আফিমের ওভারডোজ দিতে, যাতে তিনি তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারেন। লিও টলস্টয় সম্পর্কেও বলা হয় যে তিনি জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আত্মহত্যা করতে ভীত ছিলেন। জাপানের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক ইওকিও মিশিমা আত্মহত্যা করেছেন। আমি সঙ্গীত প্রেমিক হলেও বলতে দ্বিধা নেই যে আমি বাংলা গান কমই শুনি। এই কম শোনার মধ্যেও সাদি মোহাম্মদের কণ্ঠে অনেক রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনেছি। গানের মধ্যে তার যে মগ্নতা থাকতো, যে কারণে মনে হতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝি গানগুলো তার জন্যই লিখেছেন। শেষ পর্যন্ত সঙ্গীতে মগ্নতাও সাদি মোহাম্মদের বিষন্নতায় তাকে আশ্রয় দেয়নি। সঙ্গীতের প্রতি তার প্রেম ও আবেগজাত যে আস্থা ছিল, সে আস্থাও তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কেউ বিষন্ন হয়ে পড়লে তা যদি তার প্রিয়ভাজনদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে, তাহলে সেক্ষেত্রে তার উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরিচর্যা এবং তাকে সঙ্গ দেওয়া জরুরী ছিল। সাদি মোহাম্মদের ক্ষেত্রে নি:সন্দেহে এসবের ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে তিনি জীবনকে আর উপভোগ্য বিবেচনা…

কবিদের মদ্যপান যৌনাচার: প্রসঙ্গ গিনসবার্গ ও মির্জা গালিব

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু মদপান ও যৌন সাহচর্য কি কবিদের অনিবার্য অনুসঙ্গ? বিশ্বের বহু সেরা কবির কবিতায় মদ ও মদ পরিবেশনকারিনী এবং অন্যান্য নারীর সদর্প উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। অনেক কবির কবিতায় দেখা যায় তারা কবি হয়েছেন শুধু নারীর কারণে। ভারতের বিখ্যাত গীতিকার আনন্দ বকশীর লেখা জনপ্রিয় এক গানের কথা হচ্ছে: “ম্যায় শায়ের তো নেহি/মগর এ্যয় হাসিন, জবসে দেখা ম্যায়নে তুঝকো/মুঝকো শায়েরি আ গেয়ি” (আমি তো কবি নই, কিন্তু ওগো সুন্দরী/যখন থেকে তোমাকে দেখেছি, আমার কবিত্ব এসে গেছে।) শুধু নারী নয়, অনেক বিখ্যাত কবির মাত্রাতিরক্ত টান ছিল শুধু পুরুষ সঙ্গ। তাদের মধ্যে বাঙালি কবিতাপ্রেমীদের অতি পরিচিত, বহু পুরস্কারে ভূষিত আমেরিকান কবির নাম অ্যালেন গিনসবার্গ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার কবিতা “সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড” এর কথা বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পক্ষে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। গিনসবার্গের সমকামী কর্মকাণ্ডে কোনো রাখঢাক ছিল না। ১৯৭১ সালেই দিল্লিতে তিনি খুশবন্ত সিং এর সঙ্গে সাক্ষাতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তার যৌনাকাংখার পূরণের জন্য পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজনের কথা জানালে খুশবন্তু সিং গিনসবার্গের কুরুচিতে ঘৃণা প্রকাশ করেন এবং তাকে তড়িঘড়ি বিদায় করেন। অ্যালেন গিনসবার্গের প্রিয় যৌনসঙ্গী ছিলেন তার চেয়ে বয়সে সাত বছরের ছোটো রুশ বংশোদ্ভুত আমেরিকান কবি ও অভিনেতা পিটার ওরলভস্কি। এই দু’জনের দীর্ঘকালীন বন্ধুত্ব ও যৌন সম্পর্ক কাহিনি হয়ে আছে। একবার পিটারকে কবি গিনসবার্গ লেখেন: “আমি তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করছি। তোমার হাত ও নগ্নতা এবং পরস্পরের জড়িয়ে থাকার অভাব বোধ করছি Ñ তোমাকে ছাড়া জীবন শূন্য…

বাঙালি মুসলমানদের ‘স্বাধীনতা’

সাঈদ তারেক প্রতিবেশী দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থানের প্রেক্ষাপটে ‘বা্ঙালি মুসলমান’ কথাটা আবার নতুন করে উঠে এসেছে। কতটা সমীচিন কতটা উচিত অনুচিত সে বিতর্ক ছাপিয়ে বাস্তবতা হচ্ছে নানা মহলে এ নিয়ে কানাঘুষা ফিসফাস আলোচনা সমালোচনা থেমে নেই। সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় নানা মত হতাশা ক্ষোভ। কেউ বলবেন ‘বা্ঙালি তো ‘বা্ঙালিই, তাকে আবার হিন্দু মুসলমান বলে ভাগ করা কেন। না, জাতিগতভাবে কোন বিভক্তি নেই। তবে ধর্মবিশ্বাষের ভিত্তিতে এমন একটা পরিচয় তো আছেই। এটা বাস্তবতা। এই বাস্তবতা কখনও কখনও প্রকট হয়ে ওঠে যখন সমাজে বৈষম্যের সৃস্টি হয়। এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আমি কিছুটা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি বাঙালির জাতিগত ও ধর্মভিত্তিক পরিচয়ের উদ্ভব এবং বিকাশের। তাদের গড়ে ওঠা স্ব-অধীনতা এবং হাজার বছরের পথচলার। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বঙ্গ বাঙালা বা প্রাচীন চায়নীজ পূঁথিসাহিত্যে উল্লেখিত মাঙ্কালা অঞ্চলের ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও বঙ্গ রাজ্য গঠনের শুরু মাত্র হাজার বছর আগে। আজকের যে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মিলে বৃহত্তর বাংলা- গোড়াতে এটা কোন একক দেশ বা এক রাজ্য ছিল না। অঙ্গ বঙ্গ সমতট হরিকেল পুন্ড্রবর্ধন তিরাভুক্তি রাধা প্রাগজোতিষি গঙ্গার্দী সুহমা- প্রভৃতি অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন রাজা বা শাষকরা শাষন করতেন। এদের মধ্যে প্রতিযোগীতা ছিল, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হতো, এক রাজা অন্য রাজ্য দখল করে নিতো। সপ্তম শতকে রাজা শশাঙ্ক এই রাজ্যগুলোকে একীভূত করে গৌড়িয় সাম্রাজ্য গঠনের মাধ্যমে বৃহত্তর বাংলা রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর গোটা দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃস্টি হয়। উদ্ভব ঘটে গৌড়িয় পাল সাম্রাজ্যের। কিন্তু…

আল্লাহ হারিয়ে গেছেন!

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু শিরোনামটি আমার নয়। বিখ্যাত সিন্ধি লেখক অমর জালীল (পুরো নাম কাজী আমির আবদুল জালীল) এর একটি ছোটগল্পের শিরোনাম সিন্ধি ভাষায় “খুদা গুম থি ওয়াইয়ো” যার উর্দু “খুদা গুম হো গ্যায়া হ্যায়” অর্থ্যাৎ “আল্লাহ হারিয়ে গেছেন।” অমর জালীলের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় আশির দশকের শুরুতে। খুশবন্ত সিং সম্পাদিত ভারতের বিড়লা গ্রুপের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ইলাসট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়া’য় অমর জালীলের বেশ কিছু ছোট গল্পের ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করে মুগ্ধ হয়েছি। তার একটি গল্প ছিল “দ্য বাংলো ইন কুইন্স রোড” বা ‘কুইন্স রোডের বাংলো’। গল্পটির কাহিনি ছিল যে, করাচির কুইন্স রোডের একটি সুন্দর বাড়িতে বিদেশি পতিতারা অভিজাত খদ্দেরদের চিত্ত বিনোদনে বা দেহদানে নিয়োজিত ছিলেন। গল্পের নায়ক পতিতাদের ‘পিম্প’ বা ভাড়ুয়ার মাধ্যমে সেখানে যান। পতিতা তার খদ্দেরকে সেবা দিতে আসেন। সুন্দরী তরুণী পতিতা আরবি ভাষায় খদ্দেরকে স্বাগত জানিয়ে তার পরিচয় দেন যে, তিনি লেবানন থেকে আগত। কিন্তু খদ্দের তার মুখে আরবি শুনে চমকে উঠেন এবং তার সেবা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। উভয়ের বচসায় ভাড়ুয়ার আবির্ভাব ঘটে এবং কারণ জানতে চাইলে খদ্দের তাকে জানান যে, কোরআনের ভাষায় কথা বলে এমন নারীকে শয্যায় নিয়ে তিনি তার পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের অবমাননা করতে পারেন না এবং নিজের পাপের পাল্লা ভারি করতে চান না। লেবানিজ সুন্দরী তার ভাড়ুয়ার কাছে খদ্দেরের বক্তব্য তরজমা করে দিতে বলেন এবং ভাড়ুয়া তাকে খদ্দেরের আপত্তির কথা বুঝিয়ে বললে পতিতা ক্ষেপে খদ্দেরকে গালিগালাজ করে যা বলেন, তার মর্ম হচ্ছে, তিনি তার দেহ বিক্রি…

কিছু এর রেখে যাই

আলী আহমাদ রুশদী আলী আহমাদ রুশদী প্রায় বারো বছর আগে একবার মনে হয়েছিল দিন ফুরিয়ে আসছে, অথচ কোথাও কি তেমন করে আমার চিহ্ন থাকবে? বহু বছর পর কেউ কি জানবে যে আমিও ছিলাম? সে সময় প্রথম শুরু করেছিলাম এই স্মৃতিকথা লেখা। মনে হয়েছিল আমার জীবন থেকেও হয়তো কারো জানার কিছু থাকবে, অথবা নিছক সময় কাটানোর জন্যই কেউ হয়তো পড়ে দেখবে। কিন্তু তারপরে সাংসারিক নানা ব্যস্ততায় লেখাটা আর শেষ করা হয় নি। কিছুদিন ধরে আমার স্ত্রী, তিন মেয়ে এবং জামাতা আশিক জানতে চাইতো লেখাটা কতদূর হলো। তারা প্রায়ই উতসাহ দিত লেখাটা শেষ করার জন্য। আমি খুব একটা যে আমল দিতাম তা না, মনে হতো এই সাধারণ একটা জীবনের গল্প জেনে কার কি লাভ হবে? এই ব্যস্ত সময়ে কার অবসর আছে অবিখ্যাত অপরিচিত কাউকে জানবার? তবুও মানুষ তো নিজের ছায়া দেখতে ভালোবাসে। অন্যদের চোখে পরিচিতির আভাস দেখতে চায়। মাঝেমাঝেই আমার লেখার কিছু অংশ ফেসবুকে শেয়ার করেছি। কিছু কিছু প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল অথবা খবরের কাগজে। সবসময়েই দেখেছি বহু মানুষ লেখাগুলো আগ্রহের সাথে পড়ছেন, সুন্দর মন্তব্য করছেন। এতে করে খুব উতসাহ পেলাম, মনে হলো এবার ঠিকঠাকভাবে শেষ করি লেখাটা। আমার বড় নাতনি করিমুন্নেসা এখন মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সে লেখাপড়া করছে সাহিত্য ও দর্শন নিয়ে। আমার জীবন, আমার অতীত, আমার কাজ নিয়ে তার প্রবল আগ্রহ। তার জন্ম এই দেশে, এই সময়ে, অথচ তার পূর্বসূরীদের সময় নিয়ে সে জানতে চায়। আমার ছোট…

বিপজ্জনক সময়ের সামনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র

ডক্টর জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি ‘একদলের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা’র দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। বিরোধীরা নির্বাচন বয়কট করলেও, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ আরও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে শেখ হাসিনা শিগগিরই সমসাময়িক ইতিহাসের সবথেকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নারী সরকার প্রধান হয়ে উঠবেন। কিন্তু এমন রাজনৈতিক আধিপত্যের ঝুঁকিও রয়েছে। সারা বিশ্বেই এই এক দলের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রায়ই এমন সব রোগের বিকাশ ঘটায়, যা দেশের শাসনব্যবস্থার ক্ষতি করে। তবে রাজনীতি, সরকার এবং অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা এই সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করতে পারে।বাংলাদেশের এক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থাযদিও এই এক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। তবে এটিকে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে, যেখানে একটি নির্দিষ্ট দল বড় একটি সময়ের জন্য রাজনীতি, সংসদ, সরকার এবং নীতিনির্ধারণে আধিপত্য বিস্তার করে। ৭ই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ জয়ের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। যদিও আওয়ামী লীগ এখন ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে কম সংসদীয় আসন দখল করে আছে, তবে এর রাজনৈতিক আধিপত্য আসলে অনেক বেশি।গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে এবারেরটিসহ মোট দুটি নির্বাচন বয়কট করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নির্বাচনে বিএনপি সদস্যদের যোগদানে প্ররোচিত করতে এবং পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য ব্যানারের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কিছু আসনে তার সদস্যদের দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ।ফলস্বরূপ নির্বাচনে কিছু সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে, বিশেষ করে স্বতন্ত্র এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীদের…

বিচিত্র খবর-বিচিত্র তথ্য

টার্গেট ১০০ সন্তান: ৬০তম শিশুর জন্মের পর আরও স্ত্রী খুঁজছেন তিনি! নাম তার সরদার হাজী জান মুহাম্মাদ খান, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার বাসিন্দা। সম্প্রতি ৬০তম সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। তবে তার লক্ষ্য ১০০ সন্তানের বাবা হওয়া। লক্ষ্য পূরণে আরও স্ত্রী খুঁজছেন তিনি। জানা গেছে, বর্তমানে জান মুহাম্মাদের ঘরে আছে তিনজন স্ত্রী। এখন চতুর্থ স্ত্রী খুঁজছেন তিনি। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জান মুহাম্মাদের স্ত্রীরা এখন পর্যন্ত ৬০ সন্তানের জন্ম দিলেও তাদের মধ্যে ৫৫ জন বেঁচে আছে। তারা সবাই সুস্থ আছে। বাকি পাঁচজন মারা গেছে। এতসব স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একই বাড়িতে বাস করেন জান মুহাম্মদ। পঞ্চাশ বছর বয়সী সরদার জান মুহাম্মাদ খান কোয়েটা শহরের ইস্টার্ন বাইপাস এলাকার বাসিন্দা এবং খালজি গোত্রের একজন সদস্য। তিনি একজন ফার্মাসিস্ট। ওই এলাকায় তার একটি ক্লিনিক আছে। জান মুহাম্মাদ খান তার ৬০তম সন্তানের নাম রেখেছেন খুশহাল খান। তিনি বলেন, খুশালের জন্মের আগে তার মাকে আমি উমরাহ করতে নিয়ে গিয়েছিলাম, এজন্য তাকে (সদ্যোজাত সন্তানকে) আমি হাজী খুশাল খান ডাকব।  এতজন সন্তানের নাম মনে থাকে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন নয়? জান মুহাম্মাদ আরও জানান, তিনি চতুর্থ বিয়ে করতে চান এবং সেজন্য তিনি পাত্রী খুঁজছেন। তিনি বলেন, আমার সব বন্ধুকে বলে রেখেছি আমাকে চতুর্থ বিয়ের জন্য একজন পাত্রী খুঁজে দিতে। বয়স হয়ে যাচ্ছে, তাই তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজটা সারতে চাই। তিনি একাই কেবল আরও সন্তান চান বিষয়টি এমন নয়, তার স্ত্রীরাও একইভাবে আরও সন্তান চান। তাদের সন্তানদের মধ্যে পুত্রের চেয়ে কন্যার সংখ্যা…

একজন আপোষহীন খলি মন্তাজ

বিলেকাসা ঝলমলে বিশাল হলরুম। মানুষে ঠাসা, কিন্তু কোন ফিসফাস নেই, অন্য কোন শব্দ নেই। শব্দ শুধু একজনের কথার, সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছেন। তার প্রতিটি শব্দ যেন সবাই গিলে খাচ্ছেন। যিনি কথা বলছেন তিনিই খলি মন্তাজ। অনেকেই তাকে দেখেছে, হয়ত এই প্রথম তাকে শুনছে। অনেকে তাকে শুনেও থাকতে পারে, কিন্তু এই প্রথম তাকে দেখছে। কিন্তু আমি তাকে এই প্রথম দেখলাম, তাকে এই প্রথম শুনলাম, এবং আমি আনন্দে কাঁপলাম। খলি মন্তাজ, দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। পত্রিকা জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কি অদ্ভুত সুন্দর তার কথা, পত্রিকা বুঝবে শুধু দেশ এবং মানবতা, একটি পত্রিকা হল সমাজ এবং দেশের জন্যে এক কলুষমুক্ত দর্পণ, সাংবাদিক হবেন সত্যের বাহক, দেশ এবং মানবতার খাতিরে একজন সাংবাদিক কখনোই মিথ্যার সঙ্গে আপোষ করতে পারেন না, একটি পত্রিকার সম্পাদক … আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকার আপোষহীন সম্পাদক খলি মন্তাজকে। এত দিনেও কোন শিক্ষক আমাকে সাংবাদিকতা বা পত্রিকা নিয়ে এরকম কথা বলতে পারেননি। খলি মন্তাজের প্রতিটি কথা আমার হৃদয়ে নতুন ভাবে বাজতে থাকে। আমি ঠিক করে ফেলি, পাশ করেই আমি খলি মন্তাজের দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকায় জয়েন করব, খুব কাছ থেকে সাংবাদিকতা শিখব খলি মন্তাজের কাছে। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে আমার ঘুম আসে না। এত বড় অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার কথা না। আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান স্যারের কারণে আমি এই সুযোগ পেয়েছি। বিশেষ একটি কারণে তিনি আমাকে খুবই পছন্দ করেন। খলি মন্তাজের কথায় এখনো মোহাবিষ্ট…

কারাউইন : পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

হাবিব রহমান কিছু কিছু দেশ তাদের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে গর্ব করে। যেমন – নেপাল গর্ব করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট নিয়ে। যুক্তরাজ্য গর্ব করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্রিটিশ মিউজিয়াম নিয়ে। সৌদি আরব গর্ব করে জনসংখ্যার তুলনায় আয়তনে বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। আর উত্তর আফ্রিকার মুসলিম প্রধান দেশ মরক্কো গর্ব করে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিদার অনেক দেশ। যেমন – চীনাদের দাবি সাংহাইয়ের হাইয়ার স্কুল-ই পৃথিবীর প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ২২৫৭ সালে। পাকিস্তানের দাবি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের প্রথম। ভারতীয়দের দাবি বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য দলিলদস্তাবেজ পরীক্ষা করে, গিনেস বুকের রেকর্ড অনুসারে মরক্কার ফেজ নগরীর কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ই পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো-ও এই ধারণাকেই স্বীকৃতি দিয়েছে। আমার বিশ্ব ভ্রমণের তালিকায় প্রথম দ্রষ্টব্য থাকে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যভুক্ত স্থান। তারা অনেক গবেষণা করে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে এসব স্থানগুলোর স্বীকৃতি দেয়। তাই মরক্কো ভ্রমণের তালিকায় তানজিয়ার এবং ক্যাসাব্লাঙ্কা পরিদর্শনের পর এই দেশটিতে আমার গন্তব্যস্থল ছিল ফেজ নগরী। শুধু পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় দেখাই নয়, এটি একাধারে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শহর। হ্যান্ডিক্র্যাফটস ক্যাপিটাল হিসেবেও রয়েছে এর সুনাম। ফেজ নগরীর প্রধান আকর্ষণ চতুর্দিকে দেয়াল ঘেরা বাজার যা মেদিনা নামে পরিচিত। তাছাড়া লাল টুপি, ফেজ টুপি বা রুমি টুপির ইতিহাস-ও দেশটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ক্যাসাব্লাঙ্কা থেকে ফেজ নগরীর দূরত্ব ১৫৩ মাইল বা ২৪৬ কিলোমিটার। খোঁজ নিয়ে…

রবীন্দ্র মানসে সুফি প্রভাব

মুসা আল হাফিজ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১)  আধ্যাত্মিকতার মূলে আছে বিশ্ব নিয়ন্তার প্রতি বিশ্বাস। “সীমার মাঝে অসীম তুমি/বাজাও আপন সুর/আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ/ তাই এত মধুর।” এখানে ক্রিয়াশীল ছিলো  জোড়াসাকুর ঠাকুর পরিবারের ভাব-সাধনা,  ফার্সি কাব্য সংযোগ, উপনিষদ এবং  ব্রাহ্ম সমাজ ও রাজা   রামমোহন রায়ের (১৭৭২- ১৮৩৩) প্রভাব ।  রবীন্দ্র মনে আধ্যাত্মিক যে বোধ  তৈরি হয়, তা ব্রাহ্মমতের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছিলো  বৈদিক মন্ত্রের আত্মাকে । কিন্তু  বৈদিক আচারের উপর প্রাধান্য দিয়েছিলো বেদান্তবাদী হৃদয়ের ধর্মকে। “বৃথা আচার বিচার। সমাজের চেয়ে হৃদয়ের নিত্য ধর্ম সত্য চিরদিন।” হৃদয়ের ধর্মের অন্বেষা  পরম সত্তা। যিনি সব মানুষের হৃদয়ে মহত্ত্বের ও শ্রেয়োবোধের প্রেরণা দিচ্ছেন। চিত্রার ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতায় তার পরিচয় আছে। “কে সে? জানি না কে? চিনি নাই তারে শুধু এইটুকু জানি তারি লাগি রাত্রি-অন্ধকারে চলেছে মানবযাত্রী যুগ হতে যুগান্তর-পানে ঝড়ঝঞ্ঝা বজ্রপাতে জ্বালায়ে ধরিয়া সাবধানে অন্তরপ্রদীপখানি …।” রবীন্দ্রনাথের মরমিতা গভীরভাবে উজ্জীবিত ও বিনির্মিত ছিলো ফারসি ও হিন্দি কবিতার সুফি ভাবরসে। শেখ সাদী  (১২১০-১২৯১) হাফিজ (মৃত্যু :  ১৩৮৯) বা  রুমি (১২০৭Ñ  ১২৭৩) প্রতিধ্বনিত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতায় কবিতায়।   সুফিবাদর মন, তার  অপার্থিব মিলন-তিয়াস এবং  পরমানন্দময় ভাবাবেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ কতো গভীরভাবে একাত্ম ছিলেন, তার বিবৃতি নিজেই দিয়েছেন  পারস্য যাত্রী সফরনামায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ ফারসি ভাষার বন্ধনে যুক্ত ছিলেন হাফিজ-রুমিদের অধ্যয়নে। বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোতে বাংলার সাথে ফারসি চর্চা হতো অষ্টাদশ শতকে, এমনকি ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকেও। মুসলমান কবিগণ তো বটেই, হিন্দু কবি ও শিক্ষিত শ্রেনি ফারসিকে উপেক্ষা করতেন না। ভারতচন্দ্র…