dhakadigest

dhakadigest

পানি-অস্তিত্বের এক দৈব উপাদান

আবদুল আউয়াল মিন্টু দৈব, অদ্ভুত ও বিচিত্রতা হলো পানির অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের গ্রহের বিবর্তনের মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। পানির ভৌত এবং রাসায়নিক প্রকৃতি, আকৃতি, আচরণ ও চরিত্র এবং এর বহুমুখী ব্যবহার আমাদের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। তাই পানি, প্রাণের জন্ম ও বিকাশ এবং বাস্তুতন্ত্রের (Ecosystems) জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ। অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই প্রাণের সাথে পানির একটি মিথোজীবী (Symbiotic) সম্পর্ক আছে। প্রতিটি জীবের প্রতিটি জীবন্ত কোষের (Cell) অন্ত:স্থলের কাজ থেকে শুরু করে, গোটা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র সৃষ্টি ও টিকিয়ে রাখা, এ সবই পানির ওপর নির্ভরশীল। জীবনের অস্তিত্ব রক্ষার চূড়ান্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, মহাবিশ্বের সাধারণ দু’টি উপাদান যেমন; হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে পানির সৃষ্টি। পানি এক অনন্য, অসাধারণ ও নিখুঁত পদার্থ, যা আমাদের জীবনকে টিকিয়ে রাখে। পানির বৈশিষ্ট্যপানির বৈশিষ্ট্য একেবারেই অনন্য। এই অসাধারণ বৈশিষ্ট্য অন্য সব পদার্থ থেকে একেবারেই আলাদা। এই বৈশিষ্ট্যগুলো পানিকে তরল অবস্থা থেকে বরফের কঠিন অবস্থা; বরফ থেকে তরলে পরিণত; আবার তরল থেকে বাষ্পে পরিণত করতে পারে। তারপর আবার বাষ্প থেকে তরল অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। আর এই তরল পানি হলো; আমাদের পৃথিবীর সব জীবের প্রাণের কেন্দ্রবিন্দু। মূলত এই “একক, অসাধারণ ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের শক্তিগুণে” একদিকে যেমন পানির প্রতিটি অণু (Molecule) এককভাবে কাজ করতে পারে, আবার একইসাথে অন্য পদার্থের অণুর সাথে ক্রিয়া-প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে একত্রে কাজ করার ক্ষমতা রাখে। পানির এই অনন্য বৈশিষ্ট্য অন্য যেকোনো পদার্থ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বতন্ত্র।…

শেরে বাংলা উর্দুকে বাঙালি মুসলমানদের শিক্ষার মাধ্যম করতে চেয়েছিলেন

(১৯৩৯ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্সে প্রদত্ত ভাষণ) উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার কারণে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মুসলিম লীগ নেতা খাজা নাজিমুদ্দিন এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছিল এবং বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন শুরু করেছিল, তা ক্রমে পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে এবং শেষপর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচণ্ড সংগ্রামের রূপ নিয়েছিল। কিন্তু শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ১৯৩৯ সালে যখন বঙ্গীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন, তখন অবিভক্ত বাংলায় বাঙালি মুসলমানদের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উর্দু চালু করার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।  ১৯৩৯ সালের ২৯-৩১ সেপ্টেম্বর কলকাতার মোহাম্মদ আলী পার্কে অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশনাল কনফারেন্সের ৫২তম বার্ষিক অধিবেশনে প্রদত্ত সভাপতির ভাষণে শেরে বাংলা ফজলুল হক বলেন, “আমি জানি, বাংলার মুসলমানসহ অনেকে চান যে স্কুলে উর্দু বাধ্যতামূলক করা হোক। কিন্তু বর্ণহিন্দুদের একাধিপত্যবাদী গোষ্ঠী, যারা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে পৈতৃক উত্তরাধিকারে পরিণত করেছে এবং বাঙ্গলার স্কুলের পাঠ্যক্রমের উপর আধিপত্য বিস্তার করে আছে, তারা চায় না মুসলমানদের এই ইচ্ছা পূরণ হোক। যেখান থেকে উর্দুর বিরোধিতা হচ্ছে তা দূর করা হলে বাংলায় মুসলমানদের জন্য উর্দুকে একটি বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে জারি করার পথে আর কোনো বাধা থাকবে না।” উর্দুতে দেওয়া শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের ভাষণের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো। তাঁর ভাষণ বাংলায় অনুবাদ করেছেন কাজী একরাম   ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,  আমি, বাংলার মুসলমানদের পক্ষ থেকে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশনাল কনফারেন্সের এই ৫২ তম…

মুলায়েম সিং যাদবের রাজনীতি এবং মুসলমান

মাসুম মুরাদাবাদী  ভারতের সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়েম সিং যাদব ১০ অক্টোবর ৮২ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি তিনবার ভারতের সবচেয়ে বড় জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং একবার দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৭ সালে কমিউনিস্ট নেতা কমরেড হরকিষেণ সিং সুরজিতের সাহায্যে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের খুব কাছাকাছি চলে গেছিলেন তিনি; কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিং ও লালুপ্রসাদ যাদব তার এ ইচ্ছা পূরণ হতে দেননি। একজন স্কুলশিক্ষক হিসেবে জীবন শুরু করা মুলায়েম সিং রাজনীতির শিখরে কিভাবে পৌঁছলেন, সে কাহিনী যেমন চিত্তাকর্ষক, তেমনি শিক্ষণীয়। তার জীবনের সবচেয়ে কষ্টদায়ক মুহূর্ত ছিল, যখন তার পুত্র অখিলেশ যাদব তাকে অক্ষম করে দিয়ে সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্ব হাতিয়ে নেন। এ পরিস্থিতিতে তীব্রভাবে অস্থির হয়ে তিনি তার এক ঘনিষ্ঠ কর্মীকে বলেছিলেন, ‘আমি কি এখন আত্মহত্যা করব’? তিনি সমাজবাদী পার্টিকে বেশ কষ্ট ও পরিশ্রম করে গড়ে তোলেন। আর ইউপির মুসলমান তার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পুঁজি ছিল। মুসলিম ভোটের বদৌলতে তিনি তিনবার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার পর্যন্ত পৌঁছেন এবং ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ২২টি আসনে জয়লাভ করেন। আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে যেসব রাজনীতিবিদকে খুব কাছে থেকে দেখেছি, তাদের মধ্যে মুলায়েম সিংয়ের নাম সবার শীর্ষে। এটি সম্ভবত ১৯৯৪ সালের ঘটনা। দিল্লিতে মুলায়েম সিং যাদব এমন একজন ব্যক্তির সন্ধানে ছিলেন, যিনি উর্দু ভাষায় পারদর্শী হওয়ার পাশাপাশি সুন্দর হস্তলিপিতে লিখতেও পারেন। মূলত তৎকালীন শাহী ইমাম সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ বুখারি তাকে মুসলিম সমস্যার ওপর উর্দুতে একটি পত্র লিখেছিলেন। ওই পত্রের জবাব তিনি উর্দুতে দিতে চাচ্ছিলেন। কেউ এ কাজে অধমের নাম প্রস্তাব করেন। এক দিন সকালে সমাজবাদী পার্টির অফিস…

ভোট কিংবা ব্যাংক লোপাট: ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান  সাম্প্রতিক ও অতীতের কিছু ঘটনা আমাকে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’ প্রবাদবাক্যটির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। প্রথম ঘটনাটি বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ও এর পরবর্তী ঘটনা নিয়ে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক এবারট স্টিফটুং (এফইএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে দেখতে চায় জাপান। তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে আমরা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কথা শুনেছি, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও শুনিনি। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না।’ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রদূত নাওকিকে ডেকে পররাষ্ট্র সচিব সাক্ষাৎ করেন। উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডেকেছিলাম। তাঁকে যা যা বলা দরকার আমরা বলেছি।’ ঘটনার ওপর প্রলেপ দেওয়ার জন্য জাপানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা দুষ্ট লোকের ভুল তথ্যে ‘সাদামনে’ বলেছেন বলে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘কিন্তু তিনি আসলে বাংলাদেশের একজন ভালো বন্ধু।’ তত দিনে জাপানের শিনানো নদীতে অনেক জল গড়িয়ে গেছে, খবর আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফর স্থগিত করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে যাওয়ার কথা ছিল। ওপরের ঘটনাপ্রবাহ আমাকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে গুলশানে একটি নৈশভোজ-পূর্ব ককটেলসে আমাদের একজন ঝানু কূটনীতিবিদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের আলোচনার কথা মনে করিয়ে দেয়। স্মৃতি থেকে বলছি। কূটনীতিবিদটি ছিলেন পররাষ্ট্র…

প্রেমের তালায় জর্জরিত বিশ্বের বিখ্যাত সব সেতু

জবরদস্তি করে কি প্রেম হয়? জাদু-টোনা করেই বা কে কবে প্রেমে সফল হয়েছে? তবুও প্রেমের খাতিরে প্রেমিক-প্রেমিকা কি না করে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে জীবন দেওয়ার ঘটনা অনেক। প্রেম হয়ে গেলে তা অটুট রাখার পদ্ধতিও অনেক। ইউরোপ আমেরিকায় গত দুই দশকে প্রণয়রতদের প্রেম অটুট রাখা, অথবা অন্তত প্রেমের স্মারক হিসেবে বিখ্যাত সব সেতুতে তালা লাগিয়ে তালার চাপি পানিতে নিক্ষেপ করার ঘটনা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল এবং এর সেরা সাক্ষীতে পরিণত হয়েছিল ‘সেইন’ বা ‘সিন’ নদীর ওপর বিখ্যাত সেতু ‘ পন ডিজ আ” (Pont des Arts) যে সেতুর রেলিং, বেস্টনি জুড়ে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে প্রেমপাগল যুগলেরা ৭ লক্ষাধিক তালা লাগিয়ে সেতুটির অস্তিত্ব বিপন্ন করে ফেলেছিল। নগর কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপে ২০১৪ সালে সেতুটি তালামুক্ত হয়ে স্বস্তির দম ফেলেছে। তালা সরানোর কাজ করতে সেতুটি এক সপ্তাহের জন্য লোকজনের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে ব্রিজে নিরাপত্তামূলক কাচের প্যানেল লাগানো হয়েছে, যাতে তালা লাগানোর কোনো সুবিধা নেই। বহু ভাষায় কবিতা ও গানে তালা-চাবি প্রেমের ক্ষেত্রে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ইউরোপ আমেরিকায় প্রেমে তালা-চাবির প্রয়োগ ব্যাপক এবং অনেকটা সংক্রামক। শেষ পর্যন্ত প্রেমের পরিণতি যাই হোক না কেন, যখন একটি যুগল প্রেমে মত্ত তখন প্রেমকে আটকে রাখতে সেতুতে তালা ঝুলায়। শুধু প্রেমিক প্রেমিকা যুগল, বিবাহিত দম্পতিরাও এত তালা লাগায় যে নতুনরা আর তালা লাগানোর ঠাঁই পায় না। তারা তালার ওপর তালা লাগায়। তারা বিশ্বাস করে তাদের প্রেম সুপার গ্লুর মতো আটকে যাবে। কিন্তু ব্রিজ কর্তৃপক্ষ বা নগর…

উম্মে তাসবিহ’র দিনলিপি

উম্মে তাসবিহ ২৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার ২০২২ ইদানীং ভাই-বোনে একটা মজার খেলা পেয়েছি। গুগল ম্যাপ দিয়ে নানান জায়গা জুম করে করে খুঁজে দেখি। আমাদের নানী বাড়ি, দাদা বাড়ি, আমাদের বাসা, আমার দাদার বাড়ির নদী, আমার নানার বাড়ির কাছে স্টেডিয়ামে যেখানে প্রতি বছর বৈদ্যরা আসে, এমনকি পেয়ারাবাগ রেইলগেট! আজ সন্ধ্যায় আমার ভাই এক বিহ্বল সংবাদ নিয়ে এলো। স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে দেখি সেই ছোট, শান্ত দেলদুয়ার বাজারে আমার খালুর দোকান দেখা যায়। সেখানে সব দৃশ্য স্বাভাবিক, দোকানে মালের স্তুপ, কিছু গাঠরি গামছা দিয়ে ঢাকা, বোধহয় নতুন মাল কেনা হয়েছিল তখন কিন্তু গোছানো হয়ে ওঠেনি। দোকানে আমার খালু তখন অনুপস্থিত। কে জানে কোথায় গিয়েছেন! সব কিছু স্বাভাবিক। আশেপাশে গুটিকয়েক মানুষ দেখা যায়, আরেকটু জুম করলে বৈদ্যুতিক খাম্বার গায়ে আমার খালুর চাচা, মেম্বার পদপ্রার্থী ‘মেনহাজ খান সাহেব’ এর নির্বাচনী পোস্টারও দেখতে পাওয়া যায়- এই সবের মাঝে শুধু বুকের মধ্যে খচ করে লাগে একটা বাজারের ব্যাগ। জায়েদ আল- সাবিদ ফ্যাশন, আমার খালুর দোকানে সারি করে রাখা লাল রঙের টুলগুলোর একটার উপর রাখা আমার নানার বাজারের ব্যাগ। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিটা দশ মাস আগের। আমার নানা মারা গেছেন প্রায় চার মাস হয়ে এলো। দশ মাস আগে কি আমার নানা বাজারে যেতে পারতেন? না! এই ব্যাগটা নিয়ে আমার নানা যখন সুস্থ ছিলেন, বাজার করতে যেতেন। অর্ধেক বাজার হলে আমার খালুর দোকানে ব্যাগ রেখে কখনো বাকি বাজার করতে যেতেন, কখনো বসে জিরোতেন। দশ মাস আগে যখন এই ছবি তোলা…

সাত হাজার বছর আগে ভারতে মুসলিম ছিল না, সংঘাত ছিল

সঙ্গীতা বন্দোপাধ্যায় 5 হাজার বছর আগে ইসলামের জন্ম হয়নি। 5 হাজার বছর আগে পৃথিবীতে একটাও মুসলমান ছিল না। মাত্র দেড় হাজার বছর আগেই পৃথিবীতে একজনও মুসলমান ছিল না। অর্থাৎ পাঁচ হাজার বছর আগে এই ভারতবর্ষেও কোন মুসলমান ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু পাঁচ হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধটা হয়েছিল। কাদের মধ্যে হয়েছিল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ? কৃষ্ণের সময়, দ্বাপর যুগের শেষে সনাতন ধর্মাবলম্বী একই পরিবারের রক্ত সম্পর্কিত ভাইয়ে– ভাইয়ে যে যুদ্ধ হয়েছিল, যে নারকীয় আত্মীয় নিধন নির্বিচারে আসমুদ্রহিমাচলের মানুষের চোখের সামনে সংঘটিত হয়েছিল তারই নাম কুরুক্ষেত্র। ইগোর লড়াই, ক্ষমতার লড়াই, কুৎসা, ষড়যন্ত্র, সিংহাসন দখলের রাজনীতি, প্রেম, যৌন ঈর্ষা, ব্যভিচার, বহুগামীতা, হত্যাযজ্ঞ– মহাভারত এই, বা হয়ত তার থেকে অনেক, অনেক বেশি কিছু, কিন্তু যাইইহোক, যে রক্ত গঙ্গা বয়েছিল তাতে মুসলিমদের কোন হাত ছিল না। রাম। আজ যে নামটাকে জপমালা বানিয়ে ভারতবর্ষ ক্রমশ সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ, দাঙ্গাবাজ হয়ে উঠছে, সেই রামের সময়, রামায়ণের সময়ও ভারতবর্ষে একজনও মুসলমান ছিল না। প্রায় 7000 বছর আগে রামের জীবনে কোন মুসলমান না থাকা স্বত্তেও রামকে প্রাসাদ রাজনীতি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিজের পরিবারকে ফেলে, রাজসুখ ফেলে নির্বাসনে যেতে হয়েছিল। একে বলে Palace Ordeals. পৃথিবীতে একজন মুসলমান না থাকা স্বত্তেও রামকে স্বধর্ম, স্বজাতির মানুষের হাতে হেনস্থা হয়ে বনবাসে গিয়ে পর্ণ– কুটিরে থেকে, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, হিংস্র জন্তু জানোয়ারদের মাঝখানে সীতাসহ বসবাস করতে হয়। রাজা দশরথ মুসলমান ছিলেন না, কিন্তু তাঁর তিনজন রানী ছিলেন। এবং তিনি তার লিবিডোর কারণে বলুন, হৃদয়ের দুর্বলতার কারণে বলুন, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বলুন সন্তানকে সাপ, শ্বাপদের মধ্যে, দৈত্য, দানো, রাক্ষস, খোক্ষসের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন। পার্টিসানের পর পূর্ব পাকিস্তান আর পাকিস্তান মিলে তৈরি হল একটা রাষ্ট্র। দুটো দেশই তৈরি হল মুসলমানদের জন্য। ভারতের মূল ভূখণ্ড হিন্দুদের ( সাংবিধানিক সেকুলার)। পূর্ব পাকিস্তান আর পাকিস্তান মুসলমানদের। কিন্তু ধর্মের মিল কী তাদের এক দেশ, এক জাতি হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে পারল? পারল না। ধর্মীয় ঐক্য বলে আদৌ যদি কিছু থাকে তা একটা প্রতিপক্ষ তৈরি করে নিয়ে কিছুকাল বজায় থাকে ঠিকই, কিন্তু সেই প্রতিপক্ষ সরে যাওয়ার পর ধর্মীয় ঐক্য ভূলুন্ঠিত হতে দশ মাস সময় লাগে না। ইতিহাস কি দেখাচ্ছে আমাদের? মুসলমানকে মুসলমানের হাতে তুলে দিয়ে কি হল তার পরিণতি? 30 লক্ষ হত্যা। 7 লক্ষ নারী ধর্ষণ। একটা এমন মুক্তি যুদ্ধ যার স্মৃতি এখনো গোটা বাংলাদেশকে তাড়া করে বেড়ায়। মুসলমান মানেই তার মানে মুসলমানের রক্ষাকর্তা নয়! মুসলমান মানেই তার মানে মুসলমানের মান, সম্মান, ধন, প্রাণের জিম্মা নয়! মুসলমানও মুসলমানের দুঃস্বপ্নের কারণ হতে পারে। নারী পুরুষের মধ্যে প্রেম, প্রীতি, শরীর, মন জড়িয়ে কি যে একটা ব্যাপার হয়। কিন্তু আবার ছাড়াছাড়িও হয়ে যায় কেমন। হিন্দু ছেলে, হিন্দু মেয়ে। তাও ডিভোর্স হয় কেন? মুসলিম ছেলে, মুসলিম মেয়ে। তাও তালাক হয় কেন? তার মানে হিন্দু বা মুসলিম হওয়াটাই এক সঙ্গে থেকে যাওয়ার একমাত্র ক্রাইটেরিয়া নয়? হিন্দু বা মুসলিম হওয়াটাই সম্পর্কে টিকে থাকার একমাত্র যোগ্যতা নয়? ধর্ম এক হওয়ার পরও এত বিরোধ তৈরি হয়? ধর্ম এক হয়েও এত বিশ্বাসঘাতকতা করে মানুষ একে অন্যের সঙ্গে? এত ক্ষতি করে? এত আঘাত দেয়? দেয়। কারণ ধর্মের মিল আসলে একটা মিথ্যে মিল। সাজানো ব্যাপার। ধর্মের মিল বলে আসলে কিছুই হয় না। ধর্মের মিল মনের মিল তৈরি করতে পারে না। একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যদি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি সমস্ত জীবনে যতবার অপমানিত হয়েছি, যতবার প্রবঞ্চিত হয়েছি, যতবার আমার মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে গেছে, যতবার আমার স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যত অন্যায় হয়েছে আমার সঙ্গে, অফিসে, কলেজে, কোর্ট–কাছারিতে, বাসে, ট্রামে, পুলিশ স্টেশনে, পরিবারের ভেতরে,বাইরে– সমস্ত খারাপ ব্যবহার, যাবতীয় অসভ্যতা, কূটকচালি, নোংরা সম্ভাষণ – যা যা সহ্য করতে করতে আমাকে পথ চলতে হয়েছে, সব কিছুই কি আমার কাছে মুসলিমদের কাছ থেকে এসেছিল? তাই কি আসে? নাহ! মুসলমানরাও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এই একই প্রশ্ন করুন নিজেকে। দেখবেন উত্তর হবে একই। না। না। আর না। দেখবেন আপনার জীবনের যাবতীয় অভিশপ্ত ঘটনার দায় হিন্দুর নয়। দেখবেন আপনার চারপাশের যে মানুষ গুলোর ব্যবহারে কান্না গলায় এসে আটকে গেছিল তারা সবাই হিন্দু ছিল না। 7000 বছর আগেও ভাইয়ে ভাইয়ে মিল ছিল না। আজও নেই। পরেও থাকবে না। ক্ষমতা, অর্থ, ধনসম্পত্তি, নারী– এসব নিয়ে মানুষে মানুষে ক্ষমতা দখলের প্রলয় চলবেই। তারপরও শুধু রাজনীতি পয়েন্ট আউট করে দেবে Hindu’s eniemy Muslim, Muslim’s eniemy Hindu.