Category শিল্প-সাহিত্য

কবিদের মদ্যপান যৌনাচার: প্রসঙ্গ গিনসবার্গ ও মির্জা গালিব

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু মদপান ও যৌন সাহচর্য কি কবিদের অনিবার্য অনুসঙ্গ? বিশ্বের বহু সেরা কবির কবিতায় মদ ও মদ পরিবেশনকারিনী এবং অন্যান্য নারীর সদর্প উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। অনেক কবির কবিতায় দেখা যায় তারা কবি হয়েছেন শুধু নারীর কারণে। ভারতের বিখ্যাত গীতিকার আনন্দ বকশীর লেখা জনপ্রিয় এক গানের কথা হচ্ছে: “ম্যায় শায়ের তো নেহি/মগর এ্যয় হাসিন, জবসে দেখা ম্যায়নে তুঝকো/মুঝকো শায়েরি আ গেয়ি” (আমি তো কবি নই, কিন্তু ওগো সুন্দরী/যখন থেকে তোমাকে দেখেছি, আমার কবিত্ব এসে গেছে।) শুধু নারী নয়, অনেক বিখ্যাত কবির মাত্রাতিরক্ত টান ছিল শুধু পুরুষ সঙ্গ। তাদের মধ্যে বাঙালি কবিতাপ্রেমীদের অতি পরিচিত, বহু পুরস্কারে ভূষিত আমেরিকান কবির নাম অ্যালেন গিনসবার্গ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার কবিতা “সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড” এর কথা বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পক্ষে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। গিনসবার্গের সমকামী কর্মকাণ্ডে কোনো রাখঢাক ছিল না। ১৯৭১ সালেই দিল্লিতে তিনি খুশবন্ত সিং এর সঙ্গে সাক্ষাতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তার যৌনাকাংখার পূরণের জন্য পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজনের কথা জানালে খুশবন্তু সিং গিনসবার্গের কুরুচিতে ঘৃণা প্রকাশ করেন এবং তাকে তড়িঘড়ি বিদায় করেন। অ্যালেন গিনসবার্গের প্রিয় যৌনসঙ্গী ছিলেন তার চেয়ে বয়সে সাত বছরের ছোটো রুশ বংশোদ্ভুত আমেরিকান কবি ও অভিনেতা পিটার ওরলভস্কি। এই দু’জনের দীর্ঘকালীন বন্ধুত্ব ও যৌন সম্পর্ক কাহিনি হয়ে আছে। একবার পিটারকে কবি গিনসবার্গ লেখেন: “আমি তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করছি। তোমার হাত ও নগ্নতা এবং পরস্পরের জড়িয়ে থাকার অভাব বোধ করছি Ñ তোমাকে ছাড়া জীবন শূন্য…

প্রেমের তালায় জর্জরিত বিশ্বের বিখ্যাত সব সেতু

জবরদস্তি করে কি প্রেম হয়? জাদু-টোনা করেই বা কে কবে প্রেমে সফল হয়েছে? তবুও প্রেমের খাতিরে প্রেমিক-প্রেমিকা কি না করে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে জীবন দেওয়ার ঘটনা অনেক। প্রেম হয়ে গেলে তা অটুট রাখার পদ্ধতিও অনেক। ইউরোপ আমেরিকায় গত দুই দশকে প্রণয়রতদের প্রেম অটুট রাখা, অথবা অন্তত প্রেমের স্মারক হিসেবে বিখ্যাত সব সেতুতে তালা লাগিয়ে তালার চাপি পানিতে নিক্ষেপ করার ঘটনা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল এবং এর সেরা সাক্ষীতে পরিণত হয়েছিল ‘সেইন’ বা ‘সিন’ নদীর ওপর বিখ্যাত সেতু ‘ পন ডিজ আ” (Pont des Arts) যে সেতুর রেলিং, বেস্টনি জুড়ে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে প্রেমপাগল যুগলেরা ৭ লক্ষাধিক তালা লাগিয়ে সেতুটির অস্তিত্ব বিপন্ন করে ফেলেছিল। নগর কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপে ২০১৪ সালে সেতুটি তালামুক্ত হয়ে স্বস্তির দম ফেলেছে। তালা সরানোর কাজ করতে সেতুটি এক সপ্তাহের জন্য লোকজনের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে ব্রিজে নিরাপত্তামূলক কাচের প্যানেল লাগানো হয়েছে, যাতে তালা লাগানোর কোনো সুবিধা নেই। বহু ভাষায় কবিতা ও গানে তালা-চাবি প্রেমের ক্ষেত্রে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ইউরোপ আমেরিকায় প্রেমে তালা-চাবির প্রয়োগ ব্যাপক এবং অনেকটা সংক্রামক। শেষ পর্যন্ত প্রেমের পরিণতি যাই হোক না কেন, যখন একটি যুগল প্রেমে মত্ত তখন প্রেমকে আটকে রাখতে সেতুতে তালা ঝুলায়। শুধু প্রেমিক প্রেমিকা যুগল, বিবাহিত দম্পতিরাও এত তালা লাগায় যে নতুনরা আর তালা লাগানোর ঠাঁই পায় না। তারা তালার ওপর তালা লাগায়। তারা বিশ্বাস করে তাদের প্রেম সুপার গ্লুর মতো আটকে যাবে। কিন্তু ব্রিজ কর্তৃপক্ষ বা নগর…

মসজিদে বসে মদ পান করতে দাও (মির্জা গালিব)

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষার সকল বিখ্যাত মুসলিম কবি তাদের অসংখ্য কবিতায় মদ (শরাব) ও মদ পরিবেশনকারী বালিকাদের (সাকি) কথা বলেছেন। সূফি কবিতায় দুটিরই উপস্থিতি আরো বেশি। অথচ শরাব ও সাকির সঙ্গে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। কবিরা মদ ও মাতাল হওয়াকে রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন, প্রকৃত মদ ও মাতলামির কথা বলেননি। প্রেমের মদ বা সুরা পানকে উল্লেখ করা হয়েছে আধ্যাত্মিকতার উন্মোচন এবং চিরন্তন সত্তাকে স্বীকার করার উপায় হিসেবে, যা আল্লাহর প্রতি পরম ভালোবাসার অভিব্যক্তি। আমি বেশ ক’জন বিখ্যাত উর্দু কবির কবিতাংশ তুলে ধরছি। আশা করি পাঠকদের ভালো লাগবে। ১“জাহিদ, শরাব পিনে দে মসজিদ মে বৈঠ কর,ইয়া ও জাগাহ বাতা’ জাহা পর খুদা না হো।” — মির্জা গালিব(পরহেজগার, মসজিদে বসে মদিরা সেবন করতে দাও,তা না হলে বলো, কোথায় খোদা নেই?) ২“গো হাথ কোন জামবিশ নেহি আখোঁ মে তো দম হ্যায়,রেহনে দো আভি সাগর-ও-মীনা মেরে আগে।” —- মির্জা গালিব(আমার হাত স্থবির হয়ে গেলেও আমার চোখ এখনো দেখতে পায়,আমার সামনে এখন রেখে দাও সুরাভর্তি সোরাহি ও পানপাত্র।) ৩“ওহ চিজ জিস কে লিয়ে হাম কো বেহিশ হ্যায় আজিজসিবায়ে বাদা-এ-গুফতাম-এ-মুশক-বু ক্যয়া হ্যায়। — মির্জা গালিব(যে বস্তুর জন্য এমনকি বেহেশত আমাদের এত প্রিয়,সুরার এই সুগন্ধির কাছে মৃগনাভির সুবাসও ম্রিয়মান।) ৪.“পিয়োঁ শরাব আগার খুম ভি দেখ লু দো চার,ইয়ে শিসা-ও-কাদা-ও-কুজা-ও-সুবু ক্যয়া হ্যায়।” —- মির্জা গালিব(মদিরা পান করো, এবং দু’চার কলসি পান করে ফেলো,কাঁচের ছোট্ট পানপাত্র, সোরাহির কথা বলে কী লাভ?) ৫“গালিব ছুট্টি শরাব পর…


যে কল্পকাহিনি নিছক কল্পনা নয়

সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বিশ শতকে লেখা দুটি কল্পকাহিনির নাম আমরা অনেকেই জানি। একটি জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ এবং আরেকটি অল্ডাস হাক্সলির ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’। দুটিই ডিসটোপিয়া অর্থাৎ আমরা যাকে ইউটোপিয়া বা স্বর্গরাজ্য বলি, তার উল্টোটা। তবে এই দুটি বইয়ের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। এর কারণ, অরওয়েলের মাথায় ছিল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র আর হাক্সলি ভেবেছেন প্রযুক্তিশাসিত রাষ্ট্রের কথা। সেই হিসেবে হাক্সলিই এখন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে। এর ঘটনাগুলো ঘটে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিশাসিত লন্ডন শহরে। সেখানে মানুষের জন্মটাও নিয়ন্ত্রিত। কে কোন জাতের মানুষ হবে, সেটা জন্ম থেকেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয় বৈজ্ঞানিকভাবে। সে অনুযায়ী, তাদের বুদ্ধিমত্তা, চাকরি-বাকরি, ভোগবিলাসের ধরনও ঠিক হয়ে যায়। সেই সমাজে একগামিতা অবৈধ এবং শারীরিক সুখভোগই সেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বার্নার্ড মার্ক্স একজন আলফা প্লাস মানের উচ্চ শ্রেণির বিশেষজ্ঞ। একসময় তার আর এ সমাজকে ভালো লাগে না। সে শহর থেকে বেরিয়ে ‘স্যাভেজ রিজার্ভেশন’ বলে একটা জায়গায় যায়। ওখানে জন নামের একজন তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সে জানতে পারে, সে তাদের ডিরেক্টরের সন্তান। একগামিতা অবৈধ বলে জনকে ডিরেক্টর তার সন্তান বলে পরিচয় না দিয়ে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছে। জনকে বার্নার্ড তাদের মূল সমাজ ‘ওয়ার্ল্ড স্টেট’-এ নিয়ে আসে। জন এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে না এবং সে এমন কিছু কাজ করে, যার কারণে বার্নার্ড ও তার বন্ধুকে নির্বাসনে যেতে হয়। আর সে নিজে আত্মহত্যা করে। বলাবাহুল্য, এই সামান্য বর্ণনা বই দুটো বোঝার জন্য…