Category মতামত

অপসংস্কৃতির বেড়াজালে যুবসমাজ: উত্তরণের উপায়

আলী ওসমান শেফায়েত সংস্কৃতি একটি জাতির প্রাণ। আর সভ্যতা হলো সেই জাতির দেহ স্বরূপ। প্রাণহীন দেহসত্তার যেমন কোনো মূল্য নেই, দেহহীন আত্মাও তেমনি মূল্যহীন। তাই বলা যায়, সংস্কৃতি ও সভ্যতা অনেকাংশে পরষ্পরের পরিপূরক। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে আধুনিক বিশ্বে প্রতিযোগিতার ময়দানে একটি উন্নত জাতি হিসেবে পরিভ্রমণ করার জন্য সংস্কৃতির চর্চা ও মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সংস্কৃতিহীন জাতি প্রাণহীন জড় পদার্থের ন্যায়। যার কোনো কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। কোনো আত্মা যদি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তাহলে সে আত্মা যেমন ধীরে ধীরে অপ্রত্যাশিত, কিন্তু অপ্রতিরোধ্য গতিতে চিরস্থায়ী বাস্তবতা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, ঠিক তেমনি একটি জাতির আত্মা নামক সংস্কৃতি যদি অপসংস্কৃতির মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে সে জাতিও ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে কিংবা অন্য জাতির উপনিবেশে পরিণত হবে, সন্দেহ নাই। মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় দেশ। এ দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ একত্রে বসবাস করে। আর এর ৯১% মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ার কারণেই এদেশে গ্রহণীয় সংস্কৃতি ইসলামী ভাবধারার হওয়ায় স্বাভাবিক। যার মূল সুর হলো তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত। যার জন্য মানুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রকৃতিগতভাবে সেদিকেই ধাবমান। কিন্তু পাশ্চাত্য সংস্কৃতিমনা ও সুবিধাবাদী কিছু বুদ্ধিজীবীদের প্রহরায় ইসলামী সংস্কৃতির মূলস্তম্ভ তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের শিক্ষা থেকে জাতি আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। অন্যদিকে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস দেশের সহজ-সরল মানুষদেরকে অক্টোপাসের ন্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে ও সাক্ষাৎ ধ্বংসের মুখে নিপতিত করছে। তথাকথিত আধুনিকতা, অপসংস্কৃতি ও সভ্যতা নামের অন্ধকার বেড়াজালে বন্দি হয়ে, মুসলিম জাতি আজ…

আমার রাজনৈতিক চেতনা

আমি রাজনীতিবিদ নই, কিন্তু আমি আপাদমস্তক রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ। স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকে আমার মাঝে এ চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর দু:শাসন দেখে দেখে যখন যৌবনে পা দিয়েছি, তখন জাতীয়তাবোধের চেতনা আমাকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে লড়তে নিয়ে গেছে রণাঙ্গনে। হ্যাঁ, অসম সাহসে ভর দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। দেশকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার সশস্ত্র সংগ্রামে শরীক আমার অনেক সহযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেছে। তাদের এ আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়নি। আমরা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পৃথিবীর দেশে দেশে আজ উড়তে থাকা লাল-সবুজ পতাকা একজন মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক হিসেবে আমাকে গর্বিত করে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্ধশত বছর অতিক্রম করেছে। কিন্তু ফেলে আসা পঞ্চাশ বছরেও কি আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি? সামগ্রিক মূল্যায়নে একথা স্বীকার করতেই হবে যে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছি। আজ বিদেশি শাসকরা দেশ শাসন না করলেও যে রাজনৈতিক দলগুলোর শিখণ্ডিরা বাংলাদেশকে শাসন করছেন, তাদের আচার আচরণই প্রমাণ করে যে তারা দেশ শাসন করেন নিজেদেরকে জমিদার এবং জনগণকে প্রজা ভেবে। ক্ষমতার মোহে তারা জনগণকে তোয়াক্কা করেন না, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনের বিষয়বস্তুতে পরিণত করেন। রাজনীতিবিদদের এ মানসিকতা নতুন কিছু নয়। পাকিস্তান আমলে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে যখন দেনদরবার চলছিল তখনো তারা তাদের ক্ষমতার জন্য যতটা প্রয়োজন ততটুকু গ্রহণ করে পাকিস্তানি হানাদারের সঙ্গে আপস করে নিরাপদ দূরত্ব বজায়…

ভোট কিংবা ব্যাংক লোপাট: ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান  সাম্প্রতিক ও অতীতের কিছু ঘটনা আমাকে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’ প্রবাদবাক্যটির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। প্রথম ঘটনাটি বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ও এর পরবর্তী ঘটনা নিয়ে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক এবারট স্টিফটুং (এফইএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে দেখতে চায় জাপান। তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে আমরা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কথা শুনেছি, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও শুনিনি। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না।’ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রদূত নাওকিকে ডেকে পররাষ্ট্র সচিব সাক্ষাৎ করেন। উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডেকেছিলাম। তাঁকে যা যা বলা দরকার আমরা বলেছি।’ ঘটনার ওপর প্রলেপ দেওয়ার জন্য জাপানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা দুষ্ট লোকের ভুল তথ্যে ‘সাদামনে’ বলেছেন বলে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘কিন্তু তিনি আসলে বাংলাদেশের একজন ভালো বন্ধু।’ তত দিনে জাপানের শিনানো নদীতে অনেক জল গড়িয়ে গেছে, খবর আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফর স্থগিত করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে যাওয়ার কথা ছিল। ওপরের ঘটনাপ্রবাহ আমাকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে গুলশানে একটি নৈশভোজ-পূর্ব ককটেলসে আমাদের একজন ঝানু কূটনীতিবিদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের আলোচনার কথা মনে করিয়ে দেয়। স্মৃতি থেকে বলছি। কূটনীতিবিদটি ছিলেন পররাষ্ট্র…