Category গল্প-উপন্যাস

মাই স্টোরি

[ভারতের বিখ্যাত লেখিকা কমলা দাশ ১৯৩৪ সালে কেরালার মালাবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালে মারা যান। অর্ধশতাধিক উপন্যাস ও বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কমলা দাশ লেখালেখি করেছেন মালয়ালম ভাষায় এবং তিনি মালয়ালম ভাষার সেরা সাহিত্যিকদের অন্যতম।  তার বহু গ্রন্থ ইংরেজিসহ ভারতের প্রধান ভাষাগুলোতে অনুদিত হয়েছে। কমলা দাশ ভারতীয় নারীসমাজের মুক্তির নতুন পথপ্রদর্শন করেছেন তার লেখনীর মাধ্যমে। তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাই স্টোরি’ সত্যের প্রতি তার প্রেমের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। লক্ষ লক্ষ ভারতীয় পাঠক তার এই গ্রন্থ পাঠ করে তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। সমালোচনার কণ্টক তাকে বিদ্ধ করেছে, ক্ষতবিক্ষত করেছে। হুমকির মুখে পড়েছেন। এক পর্যায়ে হিন্দুধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করায় ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নতুন নাম গ্রহণ করেন ‘কমলা সুরাইয়্।া’ তিনি বলেছেন যে ধর্মান্তুরিত হওয়ায় তার আত্মীয়স্বজনরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মৌলবাদী হিন্দুরা তাকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। ইসলাম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, ইসলামের সারল্য এবং এ ধর্মে নারীর নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা তাকে মুগ্ধ করেছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘প্রকৃত সত্য আল্লাহই ভালো জানেন।’ ভারতীয় সমাজে নারীর অমর্যাদাকর অবস্থা সম্পর্কে তার আত্মোপলব্ধি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিটি শয্যা হচ্ছে এক একটি ক্রুশ, যে ক্রুশে নারীকে প্রতিনিয়ত বিদ্ধ করা হচ্ছে। মানুষ লালসার শিকার হয়, প্রেমে পড়ে না। আর নারী আত্মবিধ্বংসী প্রকৃত প্রেমে বিধ্বস্ত হয়।” কমলা দাশ তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাই স্টোরি’র ভূমিকায় লিখেছেন, “প্রথম বার হৃদরোগে আক্রান্তু হবার পর ডাক্তার…

বিয়ে বাড়ির রোস্ট

বিয়ে বাড়ির মুরগীর রোস্ট ছিল রবিউলের অত্যাধিক পছন্দের। বলা যায় তখন একটা মুরগীর রোস্টের জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারতো ও! কিন্তু হলে কি হবে বরযাত্রী দলে তো নেয়া হয়নি ওকে। রবিউল বরযাত্রী দলে জায়গা পায়নি বলে বাড়িতে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেলেন দাদীমা। উনি নাতির মাথায় হাত দিয়ে স্বান্ত্বনার সুরে বললেন, ‘ভাই তোমার লাগি আমি রোস্ট বানায়া দিমু।’ রবিউল দাদীর কথায় বিশেষ গুরুত্ব দিল না। নয় বছর বয়সেই ও বুঝে গিয়েছিল, বাড়িতে দাদীর কথার কোন দাম নেই। তাছাড়া দাদী কি ভবিষ্যদ্বানী করেন, নিজেই সেটা পরে মনে রাখতে পারেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, বাড়ির বানানো রোস্ট বিয়ে বাড়ির রোস্টের মতো কখনই এতো মজা হয় না। গ্রামের কাদের গাজীর ছেলে কবির গাজীর বিয়েতে এক পরিবার থেকে একজন হিসেবে দাওয়াত পেয়েছে রবিউলের বাবা শফিকুল ইসলাম। মেয়েপক্ষ থেকে বরযাত্রী সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই সংখ্যা ধরে রাখতে হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা কাদের গাজির। যে সময়ের কথা বলছি তখন বিয়ের সময় জিজ্ঞাসা করা হত, কয়টা কোস্টার যাবে? কোস্টার মানে পরিবহণ রুটের বাস। কারো বিয়েতে দুইটা কোস্টার ভাড়া করা মানে তারা বেশী ধনী, দাপট আছে। আর তিনটা করা মানে বিদেশে আত্মীয় স্বজন আছে।। কবির গাজীর বিয়েতে একটা কোস্টার ভাড়া করা হয়েছিল, কারণ তারা মধ্যবিত্ত। একটা কোস্টার হওয়াতে জায়গা পর্যাপ্ত ছিল না। যে কারণে বাড়ি গুনে শুধু পরিবারের প্রধানকে বলা হয়েছিল। ছোটদের কাউকে বলা হয়নি। পরিবারের প্রধান হিসেবে দাওয়াত পেয়েছিল রবিউলের বাবা। দাওয়াত দিয়ে গাজি বাড়ির…

একজন আপোষহীন খলি মন্তাজ

বিলেকাসা ঝলমলে বিশাল হলরুম। মানুষে ঠাসা, কিন্তু কোন ফিসফাস নেই, অন্য কোন শব্দ নেই। শব্দ শুধু একজনের কথার, সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছেন। তার প্রতিটি শব্দ যেন সবাই গিলে খাচ্ছেন। যিনি কথা বলছেন তিনিই খলি মন্তাজ। অনেকেই তাকে দেখেছে, হয়ত এই প্রথম তাকে শুনছে। অনেকে তাকে শুনেও থাকতে পারে, কিন্তু এই প্রথম তাকে দেখছে। কিন্তু আমি তাকে এই প্রথম দেখলাম, তাকে এই প্রথম শুনলাম, এবং আমি আনন্দে কাঁপলাম। খলি মন্তাজ, দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। পত্রিকা জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কি অদ্ভুত সুন্দর তার কথা, পত্রিকা বুঝবে শুধু দেশ এবং মানবতা, একটি পত্রিকা হল সমাজ এবং দেশের জন্যে এক কলুষমুক্ত দর্পণ, সাংবাদিক হবেন সত্যের বাহক, দেশ এবং মানবতার খাতিরে একজন সাংবাদিক কখনোই মিথ্যার সঙ্গে আপোষ করতে পারেন না, একটি পত্রিকার সম্পাদক … আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকার আপোষহীন সম্পাদক খলি মন্তাজকে। এত দিনেও কোন শিক্ষক আমাকে সাংবাদিকতা বা পত্রিকা নিয়ে এরকম কথা বলতে পারেননি। খলি মন্তাজের প্রতিটি কথা আমার হৃদয়ে নতুন ভাবে বাজতে থাকে। আমি ঠিক করে ফেলি, পাশ করেই আমি খলি মন্তাজের দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকায় জয়েন করব, খুব কাছ থেকে সাংবাদিকতা শিখব খলি মন্তাজের কাছে। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে আমার ঘুম আসে না। এত বড় অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার কথা না। আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান স্যারের কারণে আমি এই সুযোগ পেয়েছি। বিশেষ একটি কারণে তিনি আমাকে খুবই পছন্দ করেন। খলি মন্তাজের কথায় এখনো মোহাবিষ্ট…

সেই দৃষ্টি

মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আপনারা বিশ্বাস করুন বা না-ই করুন, আমি চাইনে কোন মানুষ আমার ততোটা প্রিয় হয়ে উঠুক যার প্রতিচ্ছবি আমার মনের মুকুরে অবরে সবরে প্রতিফলিত হবে। সেটা আমার সবচেয়ে বড় আপ্তজন মা-বাবারও না। কারণ আমি চাই না তাঁদের কারও প্রতিচ্ছবি আমার অন্তরে গেঁথে থাকুক। তাঁদের অবর্তমানে তাঁদের কথা স্মরণ করে আমি কষ্ট পাই। অথবা আমার অবর্তমানে তাঁরা কোন রকম আমার অভাববোধ করুন। যদিও আমি সেজদায় পড়ে আমার মা-বাবার জন্য দোয়া করি, রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।তবে সেজদায় পড়ে দোয়ার সময় ক্ষণিকের জন্য মা-বাবার আশীর্বাদাচ্ছন্ন মুখচ্ছবি আমার অন্তরে বাঙ্ময় হয়ে উঠে। আবার মুছে যায়। আমি তাঁদের মনে রাখতে চাই না। তাই কখনও তাঁদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলি না। কারণ চোখের দৃষ্টিই সর্বনাশা। সে মিথ্যে বলতে জানে না। সে সবসময় অকপট সত্য বলে। আমি যে আমার মা-বাবাকে জগতের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তা গোপন রাখার জন্যই তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলি না।এমনকি আমার বাবা কোন কারণে আমার প্রতি ক্রোধান্ধ হলেও তাঁর চোখের দিকে তাকাই না। অথবা আমার মা আমার জন্য দোয়া করে কেঁদে বুক ভাসালেও তাঁর মুখের দিকে তাকাই না। অথচ আমি জানি এবং মানি যে, মা-বাবার চোখের দিকে শ্রদ্ধাপূর্ণ ও মমত্ববোধের দৃষ্টিতে তাকালে চোখের জ্যোতি বাড়ে। পরম করুণাময় আল্লাহ্ পাকের করুণা লাভ করা যায়। আমি এমনই পামর যে জানি তবে মানি না। এর পরের স্তরের আমার আপ্তজন আমার সুপ্রিয় ভাই-বোন। আমি বড় কি ছোট, কোন ভাই-বোনের চোখের দিকে তাকাই না। অথচ…

মেয়ে

মুজতাহিদ ফারুকী দেখ দেখ, এর চোখ দুইটা; কী মায়াবী! শায়লা মন্ত্রমুগ্ধ স্বরে মাহতাবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।শায়লার কোলে বিড়ালের বাচ্চা। বুকের কাছে জড়িয়ে রেখেছে। ছোট্ট একটা প্রাণ। বড় বড় চোখ মেলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। কিছু কি বলতে চায়! জানার উপায় নেই। মুরাকামির কাফকা অন দ্য শোর উপন্যাসের বুড়ো নাকাতাই কেবল বিড়ালের ভাষা বোঝে। তাদের সঙ্গে কথা বলে। নবী সোলেমানের কথা আলাদা। তিনি সব প্রাণী ও জিনের ভাষা বুঝতেন। পিঁপড়ারও। কিন্তু জীবন ফিকশন না, ফ্যান্টাসিও না।মাহতাব ডিভানে শুয়ে, চোখের সামনে খোলা বই। একবার চোখ ফিরিয়ে দেখে। মুচকি হেসে বলে, সত্যি, খুব মায়াময়। একদম নিশি বিড়ালীনী।সে আবার বইয়ে মন দেয়।শায়লার গালে আবিরের লালিমা! অস্পষ্ট। ‘নিশি বিড়ালীনী’র রহস্যে রঙিন। শুধু ওরা দুজনেই জানে। বছর ত্রিশেক আগে মাহতাবের গ্রামের বাড়ি। শীতের রাত। জীর্ণ টিনের ঘর। ফুটোফাটা দিয়ে আসে হিম বাতাস। লেপকাঁথা মানতে চায় না। হাড় কাঁপে। ঘন হতে হতে মাহতাবের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়ে নতুন বউ শায়লা। দুটি শব্দ, নিশি, বিড়ালীনী, ধরে আছে সেইসব সোহাগ রাত, রোমাঞ্চের স্মৃতি! প্রথম বর্ষায় কদমের কুঁড়ি। শায়লা শুধু মৃদু হাসে। এক পলকে কূপিত কটাক্ষ ছুঁড়ে চলে যায় ভিন্ন প্রসঙ্গে। বিড়াল ছানার মাথায় গলায় হাত বুলিয়ে আবার মুখ খোলে, অ্যাই শোনো না, এটা ছেলে, নাকি মেয়ে?একটু থমকায় মাহতাব। তাই তো! কথাটা তো মনেই আসেনি। লেজ সরিয়ে দেখে নাও তো! আমি ঠিক বুঝি না। এত ছোট! আচ্ছা, বড় হোক, তখন এমনিতেই বোঝা যাবে।জিতু কিন্তু বলেছে, এটা মেয়ে বাচ্চা। তাই নাকি?…

অচিন গ্রাম

বিলেকাসা আমার জন্যে ঢাকা শহর এক করুণ রসিকতা! ঢাকাকে কখনোই আমি আমার শহর বলে ভাবতে পারি না। এখানে সবই আছে, শুধু প্রাণ ভরানো আনন্দ নেই; আবার বেশি টাকা পাই বলে আমি ঢাকা ছাড়তে চাই না, কম টাকায় চলতে পারব না বলে গ্রামেও যাই না। তবে গ্রাম দেখার জন্যে প্রাণ সব সময়ই ছটফট করে। সুযোগ পেলে আর ছাড়ি না। এবার আমন্ত্রণ পেলাম আমার বন্ধু সুমনের কাছ থেকে। সুমন থাকে গ্রামে। কিছুদিন আমাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিল। কিন্তু শেষ করতে পারেনি। ফিরে গেছে গ্রামে। যে কয়দিন হলে ছিল তাতেই ওর সঙ্গে ভালো একটু বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এই বন্ধুত্ব এখনো টিকে আছে। ঢাকায় এলে সুমন আমার বাসায় উঠে। তখন ওর চোখে আমি দেখতে পাই লাউ ডগার লকলকে সবুজ সুখ, ওর চেহারায় থাকে দিগন্ত ছোঁয়া সবুজ মাঠের উপর সোনালি রোদের ঝিলিক। বেশ কয়েকবারই আমাকে ওদের বাড়িতে যেতে বলেছে, আমিও যেতে রাজি হই, আমি মন থেকেই রাজি হই, কিন্তু শেষে আর যাওয়া হয়ে উঠেনি। এবার আর না গিয়ে পারলাম না। শরীর মন দুটোই ঢাকা ছাড়ার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছে। ও বলা মাত্র চলে গেলাম ওদের গ্রামে। আমার মেয়েটাও আসতে চেয়েছিল, কিছু একটা কিছু ভেবে ওকে না করেছি। সবাইকে রেখে আমি একাই এসেছি। দুইদিন মাত্র থাকব, আমার ইচ্ছা এর মধ্যে যত রকম করে পারি গ্রাম চেখে দেখব। জার্নির ধকলে একটানা লম্বা ঘুম। ঘুম ভেঙ্গে শুনি বাইরে চাপ কলের শব্দ। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ভোর পাঁচটা বাজে। সুমনকে…

একটি পুত্র সন্তানের জন্যে

মূল: খুশবন্ত সিং অনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ঈশ্বর ও ধর্মের ব্যাপারে দেবীলালের গভীর আগ্রহ। তরুণ বয়সেই তিনি অস্তিত্বের সংকট নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এ ব্যাপারে বন্ধুবান্ধব, মন্দিরের পূজারি ও মসজিদের ইমাম সাহেবদের সাথে যুক্তিতর্কে লিপ্ত হতেন। প্রশ্ন করতেন, আসলেই কি ঈশ্বর আছেন? একেক জনের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর পেতেন। কোনো ব্যাখ্যাই দেবীলালকে সন্তুষ্ট করতে পারতো না। দেবী লাল উপসংহারে পৌছলেন, ঈশ্বর খামখেয়ালি। দেবীলাল কীভাবে বিশ্বাসীতে পরিণত হলেন, সেটি নিয়েই এই কাহিনী। দেবীলালের বাবা জলন্ধরের শহরতলিতে অবস্থিত এক সরকারি স্কুলে উর্দু ও ইতিহাস পড়াতেন। পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্যে বাবাকে সংগ্রামরত দেখতে দেখতে দেবীলাল বড়ো হয়েছেন। তাদের সব আত্মীয়স্বজন সম্পন্ন মানুষ এবং তারা তাদেরকে দেখত করুণার দৃষ্টিতে। ফলে তিনি ঈশ্বরের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। কিন্তু ম্যাট্রিক পাস করে কলেজে পড়াশোনার জন্যে বৃত্তি লাভ করার পর তিনি সর্বশক্তিমানকে তার সন্দেহ থেকে মুক্তি দেন। গ্যাজুয়েশন লাভের পর দেবীলাল পাঞ্জাবের রাজধানী চণ্ডীগড়ে ড্রাফটসম্যানের চাকরি পেলেন মাসিক দু’শ টাকা বেতনে। এক বছর পর তিনি জানকী নামে সাদামাটা চেহারার একটি মেয়েকে বিয়ে করলেন বাবা মার ইচ্ছায়। ধনী পরিবারের একমাত্র কন্যা জানকী সাথে নগদ অর্থসহ অনেক যৌতুক আনেন। নিজের সঞ্চয় এবং যৌতুকের অর্থে চণ্ডীগড়ের পাশেই মোহালিতে জমি কিনে একটি বাড়ি তৈরি করে জানকীকে নিয়ে সেখানে উঠলেন। দেবীলালের স্ত্রী হিসেবে জানকী গর্বিত। স্বামীর প্রয়োজনের ব্যাপারে তিনি সতর্ক ও যত্নশীল। হিন্দু স্ত্রী হিসেবে বেশি কামুকতা প্রদর্শন করেন না, কিন্তু স্বামী সঙ্গমে আগ্রহ দেখালেই বিছানায় শুয়ে সালোয়ার খুলে দুই পা প্রসারিত করে…

রবি কিরণ

বিলেকাসা ভোলার সাথে আমার পরিচয় অনেকদিনের। বলতে গেলে শিশুকাল থেকেই। ভোলা ছিল খুব কৌতূহল প্রিয়। যে কাজ অন্যে করতে ভয় পায় সেটা তার করা চায়ই। ভয় বলে ওর মনে কিছু ছিল না। আর ছিল উদার – চিন্তায় কোন ফাঁক ছিল না। ও আমার কাছে প্রায়ই আসতো। আমি চা বানাতাম বেলি ফুল ভেজানো পানি দিয়ে। চাটা আমরা খেতাম হালকা আর ঠাণ্ডা করে। বরফ মেশানো পানিতে বেলি ফুল ভিজিয়ে রাখতাম কতক্ষণ। তারপর কড়া চা ঢেলে দিতাম। চা-টা হয়ে যেত ঠাণ্ডা আর হালকা। এটা আমাদের দুজনেরই খুব প্রিয়। ভোলা সবসময় হাসিখুশি থাকলেও আজ ওকে দেখাচ্ছে কেমন বিষণ্ণ আর ক্লান্ত। চা বানিয়ে দিলাম, তাতেও কোন উৎসাহ পাচ্ছে না। বললাম এত চিন্তা কিসের। চা-টা খাও তারপর বল। এতক্ষনে বুঝতে পারলাম ওর কেন এত চিন্তা। চা খাওয়া শেষ হলে ও আর বসলো না। আমিও আর জোর করিনি। শুধু বললাম রবিকে আমার কাছে একবার পাঠাতে। যদিও আমরা কাছাকাছি বয়সের, ভোলা আমাকে খুব মানত। ও যখন ঠিক করলো কালাপানি পাড়ি দিয়ে ইংরেজদের দেশে যাবে, প্রথমেই এসে আমাকে বলল। আমি বললাম বেশত ঘুরে আসো। ও খুশী মনে চলে গেল। মনে হল ও সিদ্ধান্তটা আগেই নিয়েছে। আমার কাছে এসেছিল মরাল সাপোর্টের জন্য। ও ঠিকই একদিন ইংরেজদের দেশে গেল। ফিরে এসে ওর গল্প আর গল্প। তিনমাস ধরে একটানা বলে গেল ইংরেজদের কথা, মেমসাহেবদের কথা। আমার জন্য এনেছিল পশমি একটা সাদা সুয়েটার। যেমন সুন্দর আর তেমনি মোলায়েম। একদিন বিকালে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল।…

মা’র কাছে ফেরা

মুজতাহিদ ফারুকী বাঁ হাতের কব্জিতে ঝকঝকে রুপালি চেনে আটকানো রোলেক্সের অস্তিত্ব একটু আগেও অনুভব করছিলাম। কেউ একজন কেবলই সেটা খুলে নিলো। ব্যাক পকেট হাতড়ে নিয়ে নিলো অল লেদার ডানহিল মানিব্যাগটাও। ওতে হাজার দশেক টাকা আছে। কিছুই করার নেই। নকিয়া এন-৭০ সেটটা কেড়ে নিয়েছে একদম শুরুতে। বিভীষিকাময় এই দুঃস্বপ্নের রাতের তখনই শুরু। এখন ক’টা বাজে আমি জানি না। একটাও হতে পারে। দু’টোও।সবশেষ যখন বাঁ হাতের কব্জি উল্টেছি, রোলেক্সের বড় ডায়ালে মিনিটের কাটা তখন মধ্যরাতের জুড়ি ভেঙ্গে মাত্র পাঁচ ঘর এগিয়েছে। তারও প্রায় দশ মিনিট আগে থেকে ধানন্ডির ২ নম্বর সড়কের একটি গলিতে দাঁড়িয়ে আমি। খুব বিরক্ত লাগছে। ড্রাইবার খোকন জানিয়েছে, রাত সাড়ে ন’টায় সে মা’কে নামিয়েছে উত্তরায় নাজলির বাসায়। ছোট মেয়ের কাছে যাবার জন্য মা খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। পাঠিয়ে দিয়েছি। ক’টা দিন নাজলির পুঁচকেগুলোর সঙ্গে কিটিকুটি খুনসুটি করে এলে একঘেঁয়েমি কাটবে। কিন্তু রাত সাড়ে ন’টার পর উত্তরা থেকে ধানমন্ডি দুই নম্বরে আসতে তো ১২টা বাজার কথা নয়। কেন দেরি হচ্ছে? হলোই যদি, জানাবে না! মোবাইলটা আছে কি করতে! চাকা পাঙচার, যানজট বা অন্য কোনো সমস্যা হলে ফোন তো করতে পারে! তা-ও করছে না। এর আগে ওকে অনেকবার বলা হয়েছে, কাজ হয়নি। ছেলেটা ফোন করতে ভুলে যায় অথবা কে জানে, হয়তো গরজই করে না ! এই নবাবপুত্রকে আজই ফাইন্যাল ওয়ার্নিং দিয়ে দেবো। হয় প্রয়োজনের সময় ফোনটা ব্যবহার করবে, না হয় চাকরি নট্। তার আগে, একবার ফোন করে দেখি। সেলফোনটা চোখের সামনে…