শেখ সা’দীর বাণী

(মধ্য যুগে ফারসি ভাষার অন্যতম সেরা কবি শেখ সা’দীর পুরো নাম আবু মুহাম্মদ মোসলেহ আল-দীন বিন আবদুল্লাহ শিরাজি (জন্মধ ১২১০-মৃত্যু: ১২৯১)। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তিনি তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘গুলিস্তান’ ও ‘বুস্তান’ এর জন্য বিখ্যাত। তিনি “শব্দের কারিগর” হিসেবেও খ্যাত। নবীকরিম সা: এর শানে তাঁর লেখা “বালাগাল উলাবি জামালিহী —’ এক অনন্য সৃষ্টি।)

****
“একবার বাগদাদের প্রধান বাজারে আগুন লাগলে এক লোক আমার কাছে এসে বললো যে আমার দোকান আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমি উত্তরে বললাম, “আলহামদুলিল্লাহ!” — সকল প্রশংসা আল্লাহর। সেই মুহূর্তে আমি মানুষের সামনে লজ্জাবোধ করেছি যে আমি স্বার্থপরের মতো নিজের সুবিধা খুঁজেছি। আমি মাত্র একবার “আলহামদুলিল্লাহ” বলার জন্য আমাকে ক্ষমা করতে ত্রিশ বছর যাবত আল্লাহকে খুঁজছি।”

****
“এক দুরাচারী বাদশাহ তার এক অনুরাগীর কাছে জানতে চাইলেন যে বাদশাহ’র জন্য উত্তম ইবাদাত কি! লোকটি উত্তর দিলেন, “আপনার জন্য সেরা ইবাদাত হচ্ছে দিনের অর্ধেক সময় নিদ্রিত থাকা, তাহলে অন্তত কিছু সময় জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।”

****
“দশ জন দরবেশ একটি কম্বলের নিচে ঘুমাতে পারেন, কিন্তু দু’জন বাদশাহ একটি রাজ্য শাসন করতে পারেন না।”

****
“একটি মণির টুকরা কাদায় পড়ে গেলেও সেটি অমূল্য। কিন্তু ধূলি যদি বেহেশত থেকে পতিত হলেও তা মূল্যহীন।”

****
“সমুদ্রের গভীরে এত সম্পদ রয়েছে, যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। কিন্তু তুমি যদি নিরাপত্তা খোঁজো, তা পাবে সমুদ্র সৈকতে।”

****
“এক ছাত্র তার ওস্তাদকে বললো: “লোকজন আমাকে খুব বিরক্ত করে, অনেকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসে। তাদের আসা-যাওয়ায় আমার মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। এ অবস্থায় আমার করণীয় কি?” ওস্তাদ উত্তর দেন: “তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র তাদের প্রত্যেককে কিছু ধার দাও এবং যারা ধনী তাদের কাছে কিছু চাও, তাহলে তারা আর তোমার আশপাশে ভিড়বে না।”

****
“এক কৃপণ ব্যক্তি তার সকল সম্পদ জড়ো করে রেখেছিল এবং পরিবারের জন্য কিছুই ব্যয় করেনি। কিন্তু একদিন তার পুত্র সম্পদ লুকিয়ে রাখার স্থানের সন্ধান পায়। সে মাটি খুঁড়ে সকল সোনা তুলে নিয়ে সেখানে বড় আকারের একটি পাথর রেখে দেয় এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবন কাটাতে ব্যয় করতে থাকে। তার পিতা সম্পদ হারানোর দু:খে ভেঙে পড়লে পুত্র উচ্ছাসের সাথে তাকে বলে, “হে পিতা, সোনা ব্যয় করার জন্য! লুকিয়ে রাখার জন্য পাথরও ভালো!”

****
“কাঁচা কাঠ বাঁকানো যেতে পারে। কাঠ যদি শুকিয়ে যায়, তাহলে তা শুধু আগুন দিয়ে সোজা করা সম্ভব।”

****
“রসায়নবিদ হতাশা ও দু:খ নিয়ে মারা যায়, আর মূর্খ ধ্বংস্তুপের মাঝে ধনভাণ্ডার আবিস্কার করে।”

****
“মেঘ থেকে ঝরে পড়া এক ফোটা বৃষ্টি সমুদ্র দেখে লজ্জিত বোধ করে বলে, “যেখানে একটি সমুদ্র আছে, সেখানে আমি কি? সে যখন নিজেকে দুর্দশার চোখে দেখছিল তখন একটি ঝিনুক বৃষ্টির ফোটাকে আলিঙ্গন নিজের ভেতরে নিয়ে করে মুক্তায়।”

****
“মানুষের উদর যখন শূন্য থাকে তখন তার দেহ আত্মায় পরিণত হয়, আর উদর যখন পূর্ণ থাকে তখন আত্মা পরিণত হয় দেহে।”

****
“কখনো এত কঠোর হয়ো না যে লোকজন তোমাকে ঘৃণা করে; আবার এত নমনীয় হয়ো না যে লোকজন তোমার ওপর চড়াও হয়।”

****
“যে ব্যক্তি কোনো একগুঁয়ে ব্যক্তিকে উপদেশ দান করে, তাহলে বুঝতে হবে উপদেশের প্রয়োজন স্বয়ং তারই বেশি।”

****
“নিস্ফলা বৃক্ষে কেউ ঢিল ছোঁড়ে না।”

****
“তোমার যদি হাতিকে আপ্যায়নের সামর্থ না থাকে, তাহলে হাতি পালকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না।”

****
“অসুস্থ ব্যক্তির পাশে বসে এক ব্যক্তি সারারাত ধরে কাঁদলো। ভোরে দর্শনার্থীর মৃত্যু ঘটলো, আর অসুস্থ ব্যক্তি তখনও জীবিত ছিল।”

****
“এক চোর এক সুফির বাড়িতে ঢুকে চুরি করার মতো কিছু পেল না। যখন সে চলে যাচ্ছিল, সুফি দরবেশ চোরের হতাশা অনুভব করে তার দিকে নিজের কম্বল ছুঁড়ে দিলেন।”

অনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু