কবিতা

তুমি আছো বধির

মাহবুব হাসান

মাহবুব হাসান

শীত-বাতাসের কামড়ে ঝরছে গাছের পাতা

দিনগুলো ঘোলা আর শিশার মতো শিরশিরে ভয়

আমাকে গেঁথে ফেলে শিক-কাবাবের মতো ঝলসে দেয়,

শুধু আমাকেই? না, তোমাকেও গাঁথে?

ক্ষমতার শিরে বসে তুমি শীতার্ত, ক্ষুধার্ত, ঘরহীন মানুষেরে

তুমি বোঝো?

বোঝো??

বোঝো???

তুমি তো নিঘর এক, সুদূরের কেউ একজন,তোমাকে চেনে না কেউ,

তবু তোমার আশায় দিন কাটায়, রাত উজাড় কওে দেয়!


কে তোমাকে পায়?

কে জিগাতে পারে তার কষ্টের কথা তোমার কাছে?

কে তার ক্ষুধার যন্ত্রণার সেরেনাদ শোনাতে পারে?

কে পারে বলতে এই আসন্ন বরফ-কালের ভেজা পরিবেশে

তার নিঘর জীবনের আর্তির শ্বাস কতো কষ্টের হোলিতে গাঁথা?

তোমার কর্ণ গহ্বর আছে, কিন্তু সেখানে গরিব মানুষের চিৎকার পশে না।

তোমার চোখ আছে, কিন্তু সেখানে কোনো দৃষ্টি নেই।

তোমার আনন্দ বোধ আছে,হাস্যরস তৈরির ক্ষমতাও আছে,

কিন্তু নেই সেখানে মানুষের জন্য অবাক করা ভালোবাসা।

তোমার হৃদয় আছে, কিন্তু সেখানে নেই কিছু অনুভূতির তার,

যাতে বাজতে পারে গরিব মানুষের বেদনার ধ্বনিপুঞ্জ

আলাউদ্দিন খাঁ’র সেতারের মতো অনর্গল,

আর তুমি,

ওই যে নীলাকাশের মতোই পরাবাস্তবতার নিখিলে বসে

শুধু দেখো মানুষের অধঃপতনের কারুকলা!

তোমার ষোলকলা পূর্ণ হবে কবে?

সনেটের দিন

রেজাউদ্দিন স্টালিন 

রেজাউদ্দিন স্টালিন

সনেটের দিন শেষ-কার তবে শুরু;

সোনালি মোড়কে পেলে-নতুনের স্বাদ

কিছুটা মিলবে,বোধে ছড়াবে অগুরু।

পাঠক খু্ঁজবে ছন্দে আছে নাকি খাদ?

অক্ষরবৃত্তের কাছে স্বরবৃত্ত শিশু,

মাত্রাবৃত্ত শ্রম দেয় কুলিনের ঘরে।

মুক্তছন্দ কি উদার ক্ষমাশীল যিশু-

তাকেই আঁকড়ে আছিবাহিরে অন্তরে।

আমরা কোথায় যাবো হাভাতে বর্ণের

কতটুকু আঁকা যায়- আকালের ছবি?

জ্বরা দুঃখ মারী থেকে অতিক্রমণের-

পথ কোন ছন্দে আছে খুঁজবেন কবি।

এখন সোনালি স্বপ্নে ডুবে আছে মন,

ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করো হে মধুসূদন।

কবিতা
কাজী জহিরুল ইসলাম  

কাজী জহিরুল ইসলাম  

কবিতা আমার বোধের ধারালো তির
শিকারের খোঁজে নিশানা লক্ষ্যে তাক
আমাকে সে রাখে সারাক্ষণ অস্থির
অদেখা আড়ালে নিজে থাকে নির্বাক।
আমি তার খোঁজে বনে-পর্বতে যাই
পাবে না আমাকে খুঁজে কোনোখানে তুমি
কেননা আমি যে এই পৃথিবীতে নাই
তবু তার খোঁজে ডেকে তুলি মরুভূমি।
আবার কখনও একা যদি যাই দূরে
পেছনে দাঁড়িয়ে নরোম কণ্ঠে ডাকে
কোথায় পালাবে একা একা ভবঘুরে?
আমি তো রয়েছি সব রাস্তারই বাঁকে।
উঁচু দালানের ছাদে উঠে দাঁড়ালেই
পাশে এসে বসে গম্ভীর মুখ করে
পৃথিবীতে আর কোনো উচ্চতা নেই
এমন কী নেই আছে যত অম্বরে।
ক্ষুদ্র-তুচ্ছ তৃণলতা কাছে পেলে
হেসে হেসে বলে এর চেয়ে আমি ছোটো
অচ্ছুৎ, নীচ আমি খুবই এলেবেলে
আমি সুন্দর আমি খুব উদ্ভটও।
গভীরের চেয়ে অধিক গভীর আমি
সূর্যের চেয়ে অধিক উষ্ণ বুক
হীরে-জহরত নিতান্ত কমদামী
বোকা আমি খুব লোকে বলে উল্লুক।
উত্তর মেরু কতোটা শীতল বলো
তার চেয়ে শত-সহস্র গুন আমি
আমিই আঁধার আমি খুব উজ্জ্বলও
জানি আমি সব মানুষের ভণ্ডামি।

মনোজগতে একা
আশরাফ আল দীন  

আশরাফ আল দীন  

তুমি তো আমার চিরদিনের ভালোবাসা,
অন্তহীন আকাঙ্ক্ষা অপেক্ষা আর আশা!
তুমি তো হায় চেনা অচেনা আর পাওয়া
না-পাওয়ার অন্তর্জগতে ঘোলাটে প্রত্যাশা!
তোমার কথা তোমার ছবি, আঁকা ছিল
আমার নিজের কল্পলোকের গল্প গাঁথায়;
অবোধ-কালের অবাক করা রূপক কথায়,
উঠতি বয়েস চোখ জোড়া সব অলীকতায়!
খেয়ালী কবির ছন্দকলার সজীবতায়,
সাগরপারের স্বপ্নগুলোর নীরবতায়!
দীর্ঘ জীবন কেটেই গেল তুমি ছাড়া–
কী’বা তাতে দুঃখ এমন!
তুমি আজো আছো কবির হৃদয় পাতায়।

এক পশলা বৃষ্টি চাই
মির্জা মুহাম্মদ নুরুন্নবী নুর  

মির্জা মুহাম্মদ নুরুন্নবী নুর

আজকে আমার একটা ভাঙাকুলা চাই
মনের কোনে অসংখ্য ময়লার দানা
ঝেড়ে ঝেড়ে কুলাতে বের করে দিয়ে
মনটাকে আলোর পরশে রাঙাতে চাই!  

একটু ভালোবাসার সোহাগ পেতে চাই
বাবা-মায়ের আদর হারা টোকাই আমি
একচালা একটা ভাঙা কুঁড়ে ঘর পেলে
সেখানেই শান্তিতে একটারাত ঘুমাতে চাই!  
ধরাতে এক পশলা বৃষ্টির সজিবতা চাই
আঁধার রাতের পথিক আমরা আজ
রহম করমের পরশ হতে অনেক দূরে
তাই ভালোবাসার একমুঠো হাতছানি চাই!

পিরামিড

আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন 

 আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন 

কবিতার পর্ব গুলো পিরামিডের মতো দাঁড়িয়ে

স্থান করে নিচ্ছে একে একে পর্বতাকারে,

স্বীকৃতি আর সনদও বাড়ছে ক্রমান্বয়ে।

মানুষগুলো কাতারে কাতারে দাঁড়িয়ে 

যেভাবে সেদিন ফেরেস্তারা সফ করে দাঁড়াবে

ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে কেউ কোনো কথা বলবে না

অপেক্ষা করছে মুক্তির; বাক স্বাধীনতা চায় সবাই।

বলার স্বাধীনতা চলার স্বাধীনতা কর্মের স্বাধীনতা 

ভাঙা সেতুর মতো দাঁড়িয়ে দেশ

মাঝখানে বিধ্বস্ত। 

রক্ষা করা যায়না মনের সাথে মনের সম্পর্ক,

আতঙ্কে কাটে বৃদ্ধারও জীবন।

প্রতিবাদের ভাষা কবিতা হয়ে ওঠেছে যখন

পত্রিকাগুলো সীমাবদ্ধতায় আর অভাবে ভোগে কাগজের

বোবা ভাষা উড়ে আকাশে বাতাসে

কান্নার শব্দগুলোও ম্রীয়মান;

অপেক্ষায় আছে জনতা- ব্রাজিলের মতো ধপাস করে পড়ার অপেক্ষা।

মানুষের কষ্টগুলো পিরামিডের মতো দাঁড়িয়ে, 

তলাবিহীন ঝুড়ির মাঠ ঘাট চৌচির

ফল ফসলেও স্বাদ নেই নেই রঙ,

অপেক্ষা শুধু পীরামিডের ওপার থেকে নতুন দিনের সূর্য ওঠার।

কষ্টের পিরামিড গলে পড়বে বরফের মতো

পাষাণ অহংকারের হবে পতন।