মৃত্যু নিয়ে রুমির ভাবনা

(মৃত্যু অনন্তের সঙ্গে আমাদের বিয়ের মতো)

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

জীবজগতে একমাত্র মৃত্যুই অনিবার্য সত্য। জীবনের অংশ এবং আমাদের জীবনের কোনো এক পর্যায়ে মৃত্যু আসবে। কোরআনে বলা হয়েছে, “কুল্ল নাফসিন যায়িকাতুল মওত,” (প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।” ভগবদ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “মৃত্যুকে আমাদের নিত্যসঙ্গী বলেই মনে হয়, আমাদের জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছি।”

মৃত্যু সম্পর্কে পৃথিবীর সকল ধর্মবিশ্বাসে মোটামুটি অভিন্ন কথাই বলা হয়েছে, তা সত্বেও অধিকাংশ মানুষের কাছে মৃত্যু এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এতটাই ভয়ের যে আমরা মৃত্যু নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলি। মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়ার সকল জাগতিক উপায় ব্যর্থ হওয়ার পরও মানুষ মৃত্যু থেকে পালানোর চেষ্টা করতে ছাড়ে না। এমনকি যারা কোনো স্রষ্টায় বিশ্বাস করে না, তারা সৃষ্টিকর্তার “শাহী” দরবারে রোনাজারি করে: “আল্লাহ বাঁচাও! ভগবান রক্ষা করো! ইশ্বর পরিত্রাণ দাও!” কিন্তু মৃত্যু পিছু ছাড়ে না।

মৃত্যু যেহেতু অবশ্যম্ভাবী, অতএব প্রত্যেকের যা প্রয়োজন তা হলো, সেই অনিবার্যতার জন্য প্রস্তুত থাকা। আমরা মৃত্যুকে এড়াতে পারি না, কিন্তু মৃত্যুর জন্য নিজেদের ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারি। আটশ বছর আগের সুফি কবি জালালুদ্দীন রুমি তাঁর অসংখ্য কবিতায় মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, মৃত্যু ভয়ভীতির কোনো ব্যাপার নয়, মৃত্যু অনন্তের সঙ্গে মিলন। তাঁর উদ্ধৃতি মৃত্যু ভয়ে কাতর মানুষের অন্তর্দৃষ্টিকে খুলে হৃদয়কে ভীতিমুক্ত করে আত্মাকে প্রশান্ত করার উৎস হতে পারে।

মৃত্যু নিয়ে রুমির উদ্ধৃতি পাঠ করুন, মতামত দিন ও শেয়ার করুন:

১, “আমাদের মৃত্যু অনন্তের সঙ্গে আমাদের বিয়ের মতো।”

২. “সুখে মৃত্যুবরণ করো এবং সামনে তাকিয়ে দেখা তুমি নতুন ও উত্তম এক অবয়ব লাভ করতে যাচ্ছো। তুমি যখন পশ্চিমে অস্ত যাও কেবল তখনই তোমার পক্ষে পূর্বদিকে উদিত হওয়া সম্ভব।”

৩. “আমি জানি যে, প্রতিটি জীব মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কিন্তু জীবনের স্বাদ লাভ করবে কেবল অল্প সংখ্যক মানুষ।”

৪. “মৃত্যু নিয়ে প্রত্যেকে এত ভীত, কিন্তু প্রকৃত সুফিরা মৃত্যুর ব্যাপারে হাসে; কোনোকিছুই তাদের হৃদয়কে সন্ত্রস্ত করে না। ঝিনুকের ওপর যত আঘাতই করা হোক, তাতে মুক্তার কোনো ক্ষতি হয় না।”

৫. “তোমার জন্য আমার যেমন ভালোবাসা, আমি সেই ভালোবাসার মধ্যেই মরে যাব: মেঘ খণ্ড যেভাবে সূর্যের আলোতে দ্রবীভূত হয়ে যায়।”

৬. “আমি খনিজ হিসেবে মারা যাই এবং বৃক্ষ হয়ে জন্ম নেই; আমি বৃক্ষ হিসেবে মারা যাই এবং প্রাণী হিসেবে ফিরে আসি; আমি প্রাণী হিসেবে মারা যাই এবং মানুষ হয়ে জন্ম লাভ করি। আমার ভয় করার কী আছে? মৃত্যুতে কখন আমি ক্ষুদ্র হয়েছি?”

৭. “আমার জীবনের শেষ প্রান্তে অবশিষ্ট থাকে শুধু একটি নি:শ্বাস, যদি তুমি আসো, আমি ওঠে বসবো এবং গান গাইবো।”

৮. “পৃথিবী একটি খেলার মাঠ এবং মৃত্যু হচ্ছে রাত।”

৯. আমি মৃত ছিলাম, এরপর জীবিত হলাম। আমি কাঁদলাম, এরপর হেসে ওঠলাম।

১০. “লোভ একজন মানুষকে অন্ধ ও আহম্মকে পরিণত করে এবং তাকে মৃত্যুর সহজ শিকারে পরিণত করে।”

১১. “এই স্থান একটি স্বপ্ন। একজন নিদ্রিত ব্যক্তিই কেবল এটিকে বাস্তব মনে করে। এরপর মৃত্যু আসে ভোরের মতো এবং তুমি হাসতে হাসতে জেগে ওঠো, কারণ তুমি যা ভেবেছিলে তা ছিল তোমার দু:খ।”

১২. “মৃত্যুর ফেরেশতার আগমণ ঘটে এবং আমি আনন্দে লাফিয়ে ওঠি।”

১৩. “আমি মৃত্যুর বিস্তৃত সমতলে পা রেখে শূন্যতার মাঝে কোনো বিশালতা শব্দ শুনতে পেয়েছি।”

১৪. “তোমাকে যা দেওয়া হয়েছিল, মৃত্যু সেগুলো নিয়ে নেওয়ার আগে, তোমার যা দেওয়ার আছে তা দিয়ে দাও।”

১৫. “চলে যাওয়ার সঙ্গে মৃত্যুর কিছুই করণীয় নেই। সূর্য অস্ত যায় এবং চাঁদ ডুবে যায়, কিন্তু তারা কখনো চলে যায় না।”

১৬. “মৃত্যু মানে একত্রিত হওয়া। সমাধি কারাগারের মতো, কিন্তু এটাই মিলনের জন্য মুক্তির স্থান।”

১৭, “আমার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তুমি চিরকাল কেঁদো না। কারণ আমি সেখানে নেই। আমি মরিনি।”