মুসা আল হাফিজ
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) আধ্যাত্মিকতার মূলে আছে বিশ্ব নিয়ন্তার প্রতি বিশ্বাস। “সীমার মাঝে অসীম তুমি/বাজাও আপন সুর/আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ/ তাই এত মধুর।” এখানে ক্রিয়াশীল ছিলো জোড়াসাকুর ঠাকুর পরিবারের ভাব-সাধনা, ফার্সি কাব্য সংযোগ, উপনিষদ এবং ব্রাহ্ম সমাজ ও রাজা রামমোহন রায়ের (১৭৭২- ১৮৩৩) প্রভাব । রবীন্দ্র মনে আধ্যাত্মিক যে বোধ তৈরি হয়, তা ব্রাহ্মমতের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছিলো বৈদিক মন্ত্রের আত্মাকে । কিন্তু বৈদিক আচারের উপর প্রাধান্য দিয়েছিলো বেদান্তবাদী হৃদয়ের ধর্মকে।
“বৃথা আচার বিচার। সমাজের চেয়ে
হৃদয়ের নিত্য ধর্ম সত্য চিরদিন।”
হৃদয়ের ধর্মের অন্বেষা পরম সত্তা। যিনি সব মানুষের হৃদয়ে মহত্ত্বের ও শ্রেয়োবোধের প্রেরণা দিচ্ছেন। চিত্রার ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতায় তার পরিচয় আছে।
“কে সে? জানি না কে? চিনি নাই তারে
শুধু এইটুকু জানি তারি লাগি রাত্রি-অন্ধকারে
চলেছে মানবযাত্রী যুগ হতে যুগান্তর-পানে
ঝড়ঝঞ্ঝা বজ্রপাতে জ্বালায়ে ধরিয়া সাবধানে
অন্তরপ্রদীপখানি …।”
রবীন্দ্রনাথের মরমিতা গভীরভাবে উজ্জীবিত ও বিনির্মিত ছিলো ফারসি ও হিন্দি কবিতার সুফি ভাবরসে। শেখ সাদী (১২১০-১২৯১) হাফিজ (মৃত্যু : ১৩৮৯) বা রুমি (১২০৭Ñ ১২৭৩) প্রতিধ্বনিত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতায় কবিতায়। সুফিবাদর মন, তার অপার্থিব মিলন-তিয়াস এবং পরমানন্দময় ভাবাবেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ কতো গভীরভাবে একাত্ম ছিলেন, তার বিবৃতি নিজেই দিয়েছেন পারস্য যাত্রী সফরনামায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ ফারসি ভাষার বন্ধনে যুক্ত ছিলেন হাফিজ-রুমিদের অধ্যয়নে। বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোতে বাংলার সাথে ফারসি চর্চা হতো অষ্টাদশ শতকে, এমনকি ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকেও। মুসলমান কবিগণ তো বটেই, হিন্দু কবি ও শিক্ষিত শ্রেনি ফারসিকে উপেক্ষা করতেন না। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর (১৭১২-১৭৬০) ফারসি শিখেছিলেন এবং এ নিয়ে ছিলো তাঁর গর্ব, মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪- ১৮৭৩) শিখেছিলেন ফারসি ভাষা, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের (১৮৮২- ১৯২২) ফারসি দক্ষতা ছিলো প্রশংসনীয়।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ফারসি চর্চার ঐতিহ্য ছিলো পুরোনো। বাংলার পাশাপাশি ফারসিতেও কথা বলতেন এ পরিবারের সদস্যরা। সুফি কবিদের ভাবলোকের সাথে আত্মীয়তা পেতেছিলো রামমোহনের চিন্তা ও ভাববাদ। এরই প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকার ধারণ করে ঠাকুর পরিবার। রবীন্দ্রনাথের বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) ব্রাহ্মধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। এ পরিবারে রুমির ‘মসনভী’, ফেরদৌসির (৯৪০-১০২০ ‘শাহনামা’, হাফিজের ‘দিওয়ান’ এবং নেযামীর (আ. ১১৪১-১২০৯) ইউসুফ-জুলেখা-র মতো কাব্য পঠিত হতো। এ পঠন ছিলো এতোই মগ্নতা ও মুগ্ধতার, যা রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাফিজের সমগ্র ‘দিওয়ান’ মুখস্থকরণ থেকে স্পষ্ট হয়। তাঁকে বলা হতো ‘হাফিজে হাফেজ’। এ পরিবার মোঘল সংস্কৃতির দ্বারা কতো গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলো, তার বিবরণী দিয়েছেন বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ ও মুঘল সংস্কৃতি’ বইয়ে। ছেলেদের ফারসি ভাষা শিক্ষাদানের জন্য বাড়িতে ফারসি মুন্সীও নিয়োগ দিয়েছিলেন দেবেন্দ্রনাথ।
এই পরিবেশে রবীন্দ্রনাথের বেড়ে ওঠা ও বিকাশ। ফারসি সুফি কবিদের আপন জেনেই এবং তাঁদের ভাব ও সুরের সংহতির মধ্যে রবীন্দ্রনাথের মানসগঠন। এর অকুণ্ঠ উচ্চারণ প্রবীণ রবীন্দ্রনাথের কাছে শোনা যায়, যখন ইরানের সিরাজ শহরে সফররত রবীন্দ্রনাথ সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন। বক্তব্যে তিনি বলেন-
“আপনাদের পূর্বতন সূফীসাধক কবি ও রূপকার যাঁরা আমি তাঁদেরই আপন, এসেছি আধুনিক কালের ভাষা নিয়ে; তাই আমাকে স্বীকার করা আপনাদের পক্ষে কঠিন হবে না। (পারস্য যাত্রী” পৃষ্ঠা ৪১)
রবীন্দ্রনাথ যখন হাফিজের সমাধির পাশে গেলেন, তখন তার সে হাস্যোজ্জল চোখের সংকেত অনুভব করেন, যা তার মানসলোকে মুদ্রিত হয়ে আছে বহু আগ থেকে, নিজেকে হাফিজের পানশালার সখা হিসেবে করেন ব্যক্ত। কারণ তিনি তো হাফিজের চিরকালের জানা লোক :
“এই সমাধির পাশে বসে আমার মনের মধ্যে একটা চমক এসে পৌঁছল, এখানকার এই বসন্তপ্রভাতে সূর্যের আলোতে দূরকালের বসন্তদিন থেকে কবির হাস্যোজ্জ্বল চোখের সংকেত। মনে হল আমরা দুজনে একই পানশালার বন্ধু, অনেকবার নানা রসের অনেক পেয়ালা ভরতি করেছি। আমিও তো কতবার দেখেছি আচারনিষ্ঠ ধার্মিকদের কুটিল ভ্রূকুটি। তাদের বচনজালে আমাকে বাঁধতে পারে নি; আমি পলাতক, ছুটি নিয়েছি অবাধপ্রবাহিত আনন্দের হাওয়ায়। নিশ্চিত মনে হল, আজ কত-শত বৎসর পরে জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান পেরিয়ে এই কবরের পাশে এমন একজন মুসাফির এসেছে যে মানুষ হাফেজের চিরকালের জানা লোক।(পারস্য যাত্রী” পৃ ৪৩)
রবীন্দ্রনাথের উপর হাফিজের প্রভাব শুধু সূক্ষ্ম, তা নয়। সরাসরি প্রভাবও সোচ্চার। এর জ্বলন্ত স্বাক্ষর রয়েছে কবিতায় কবিতায়।আমরা পাঠ করতে পারি রবীন্দ্রনাথের কবিতা:
“ছিন্ন ক’রে লও হে মোরে,
আর বিলম্ব নয়।
ধুলায় পাছে ঝ’রে পড়ি
এই জাগে মোর ভয়।
এ ফুল তোমার মালার মাঝে
ঠাঁই পাবে কি জানি না যে,
তবু তোমার আঘাতটি তার
ভাগ্যে যেন রয়।
ছিন্ন করো, ছিন্ন করো,
আর বিলম্ব নয়।
কখন যে দিন ফুরিয়ে যাবে-
আসবে আঁধার ক’রে,
কখন্ তোমার পূজার বেলা
কাটবে অগোচরে।”
(গীতাঞ্জলি: গীত সংখ্যা ৮৭)
পাশাপাশি হাফিজের এই কবিতা পড়ূন :
“মিলনের বারতা কোথা? আমায় ঊর্ধ্বে নেবে ডেকে-
বরণ করতে তোমায়, ধুলোর ধরা ছেড়ে যাব ঊর্ধ্বলোকে!
প্রাণ আমার নীড় চেনা সেই পাখির মতো স্বর্গ কামনায়,
ধরার ফাঁদ এড়িয়ে কেবল ঊর্ধ্বপানেই ধায়।
ডাকবে যখন প্রণয় স্বরে তোমার চরণসেবায়,
সুদূও পানে উঠবো ফেলে ক্ষণ কালের সীমায়
বাধা জগৎ-সংসার আর নশ্বর এ জীবন;
হে প্রভু! তোমার করুণা মেঘ হতে করো বর্ষণ।”
সরাসরি প্রভাব কেবল হাফিজ রেখেছেন , তা নয়। রবীন্দ্রনাথকে কাব্য-ভাবনা ও উপাদান সরবরাহ করেছেন হাকিম সানাই (১০৮০-১১৩১), শেখ সাদী, আমীর খসরুন(১২৫৩-১৩২৫), জালালুদ্দীন রুমি প্রমুখ। একটি দৃষ্টান্ত দেয়া যাক শেখ সাদী ও রবীন্দ্রনাথের কাব্যমিলের।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :
“গগনতল গিয়েছে মেঘে ভরি,
বাদল-জল পড়িছে ঝরি ঝরি।
এ ঘোর রাতে কিসের লাগি
পরান মম সহসা জাগি
এমন কেন করিছে মরি মরি।”
সুফি কবি শেখ সাদী লিখেছিলেন:
“মেঘ থেকে এক বিন্দু বারি পড়ে ঝরে
সাগরের বিশালতা দেখে সে লাজে বুঝি মরে :
কী অসীম এ সাগর আর আমি কত হীন!
যেথায় এ সাগর বিরাজে আমি সেথা লীন।”
হাফিজ বা রুমীর সাথে রবীন্দ্রনাথের নানা কাব্যের মিল এতো প্রগাঢ় ও প্রখর, যা খোলা চোখেই ধরা পড়ে। মিলগুলো চিত্র নির্মাণের ধারা ও ধরণে, কাব্য-স্থাপত্যের বৈচিত্রে, গতিবিধির বর্ণিলতায় এবং গভীরতার সংগঠনেও সক্রিয়। পারস্যে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন “আপনাদের পূর্বতন সূফি-সাধক কবি ও রূপকার যাঁরা, আমি তাঁদেরই আপন, এসেছি আধুনিক কালের ভাষা নিয়ে।’ সেই যে তাদের সখা হিসেবে রবীন্দ্রনাথ নিজেকে ব্যক্ত করলেন, তার কবিতা সেটা করে আরো বেশি। সেখানে রবীন্দ্রনাথের মনোলোকে গভীর শেকড় পেতে সুউচ্চ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সুফিবাদ ও ব্রাহ্মবাদ । যদি সেই সব মহান কবির সাথে রবীন্দ্রনাথের মিল সন্ধান করা হয় তাদের অলৌকিক জ্যোতির্ময়তাকে বাণী দান, রস, রসাবেগ, রসবোধ ও চিত্তের বেদনা এবং মহত্ত্বের অধিষ্ঠানে একে অন্যকে প্রতিফলিত করণের দিক থেকে, তাহলে বহু ক্ষেত্রে হাফিজ-রুমি থেকে রবীন্দ্রনাথকে আলাদা করা কঠিন হবে খুবই কঠিন। যেভাবে হুসাইন ইবনে মনসুর হাল্লাজের (৮৫৮- ৯২২) পরমের সাথে একাত্মবোধের আনাল হক জাতীয় কাব্য থেকে আলাদা করা কঠিন হয় রবীন্দ্রনাথের উচ্চারণকে, যখন তিনি বলেন:
“তুমি আর আমি/মাঝে কেহ নাই/কোন বাধা নাই ভুবনে।”
কীভাবে রবীন্দ্রনাথে রুমির প্রভাবকে উপেক্ষা করা যায়, যখন রুমির প্রতিধ্বনি রবীন্দ্রনাথে হয় বারবার, সরাসরি; পার্থক্য থাকে শুধু ভাষার। রুমি তার দিওয়ানে লিখেন:
“বায্ আঁ, বায আঁ
হর আঁচে হাস্তি বায আঁ।
গর কাফির গর গবর ওয়া
বুত পরস্তি বায আঁ।
ইঁ দরগাহে মা দরগাহে
না উমেদি নিস্ত।
ছদবার গর তাওবাহ শিকস্তি বায আঁ।”
বাংলা অর্থ:
“এসো এসো সকল মানুষ
সকল জাতির সব
অবিশ্বাসী, আগুনসেবী
মূর্তি-পূজারী -সব!
এসো হে এই পূণ্যতীর্থে
নেই নিরাশার লেশ
ত্বরায় এসো, আমার নীড়ে
নেই করুণার শেষ!
তওবা যদি ভাঙ্গো শতো
তবুও এসো এসো
মঙ্গলঘাটে পুন্য পরশে
পবিত্রতায় মেশো।”
ভারত তীর্থ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেন :
“এসো হে আর্য, এসো অনার্য
হিন্দু মুসলমান,
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ
এসো এসো খ্রিস্টান।
মা’র অভিষেক এসো এসো ত্বরা
মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা
সবার পরশে পবিত্র করা তীর্থ নীড়ে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।”
রুমির ভাবকথায় রবীন্দ্রনাথ দান করেন আধুনিক ভাষারূপ।
যেমন দিওয়ানে রুমি লিখেন:
“শেষে, রাত্রিতলে
তোমার মুখের মোহন মায়া
আমার হৃদে জ্বলে!
তোমার সৌম্য স্বরূপ ফোটে
ভাসতে শেখায় খুব
তোমার আলিঙ্গনে আমি
তোমাতে দেই ডুব।
তোমার হাসি ঢাকে আমায়
বহায় গভীর ধারা
আনন্দ -বাঁধহারা!”
রবীন্দ্রনাথও এমনই এক অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন, এমনই এক আমি ও তুমির মধ্য দিয়ে, এমন এক অনুভূতিতে, এমনই এক বয়ন ও বয়ানের মধ্য দিয়ে এমনই এক উপসংহারে এগিয়ে যান। যখন লিখেন:
“শেষে গভীর ঘুমের মধ্য হতে
ফুটল যখন আঁখি
চেয়ে দেখি, কখন এসে
তুমি আছ শিয়র দেশে,
তোমার হাসি দিয়ে আমার
অচৈতন্য ঢাকি।”
(ইংরেজি গীতাঞ্জলির রচনা সংখ্যা ৪৮-এর মূল বাংলা গীত)
এরপর রুমিতে দেখি নিদারুণ প্রশ্নের জোয়ার :
“সামনে তোমার হৃদয় আমার
কেন জানি নত
নিজের থেকেই নীরবতায় রত
কীসে সেজন গড়া?
কোন আরকের সে !
জল না অনল নাকি কেবল
মাংস নীরব সে?”
একই চরিত্রের বিহ্বলতা বাঙময় ময় রবীন্দ্রনাথে, বহু শতাব্দীর ওপার হতে ।
“ওগো মৌন, না যদি কও
না-ই কহিলে কথা।
বঙ্গ ভরি বইব আমি
তোমার নীরবতা।
স্তব্ধ হয়ে রইব পড়ে,
রজনী রয় যেমন করে
জ্বালিয়ে তারা নিমেষহারা
ধৈর্যে অবনতা।”
(বাংলা গীতাঞ্জলির ৭১ নম্বর গীত)
মহান স্রষ্টার প্রশংসা করতে গিয়ে ইবনে আরাবি, শেখ সাদী, হাফিজ, রুমি, জামী সৃষ্টির সকল বস্তুতে, সকল ক্ষুদ্র কণা, অনু কণাতে সৃষ্টির তুচ্ছতম বস্তুটির মধ্যেও পরম মহত্ত্বের সন্ধান করেছেন। রবীন্দ্রনাথে আমরা শুনি :
“আজি যার জীবনের কথা তুচ্ছতম
সেদিন শুনবে তাহা কবিত্বের সম।”
এসব কবি ছিলেন হামাউস্ত পন্থী। তারা বিশ্ব জগতকে যেমন এক করে দেখেন, তেমনি একই ছন্দ ও একই লয় শুনতে পান জগতের সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে । রবীন্দ্রনাথের কাব্যে আমরা শুনি:
“এ বিশ্বরে দেখি তার সমগ্র স্বরূপে
ছন্দ নাহি ভাঙ্গে তার সুর নাহি বাঁধে।”
হাফিজ ও রুমি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে গভীর প্রভাব রেখেছেন শুধু পঙক্তি ও ভাব সরবরাহ করে নয়। বরং সুরে, ছন্দে, সংগীতের মনোরমায়, বিভিন্ন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে সচেতনতায় ও মনোযোগে। এ প্রভাব স্পষ্ট, আবার প্রচ্ছন্ন। কারণ দুই ভাষার ভিন্ন ভিন্ন কবিতে এই মিল একই ধারায় ব্যক্ত হবার নয়। তাদের প্রভাব প্রধানত রবীন্দ্রকাব্যের অন্তর্বয়নে, ঐন্দ্রজালিকতায়, ভাষার সতেজ শিহরণে ও গীতিলাবণ্যে। বাংলা কাব্যে গীতল প্রতিভায় রবীন্দ্রনাথ যা, ফারসি কাব্যে হাফিজ ঠিক তা। তবে হাফিজের উদগতি ঘটেছে গজলে; ছন্দ ও সুরের সর্বোচ্চ বিভূতিতে। রবীন্দ্রনাথের উদগতি গীতিকাব্যে-সুখদ কবিতায়, যন্ত্রে, বাদনে, সংগীতের সূক্ষ্মতায়। সূক্ষ্মতা ও গীতিময়তা হাফিজের এমন এক সম্পদ , যা সমানভাবে প্লাবিত করেছিলো ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি গ্যাটেকে (১৭৪৯- ১৮৩২) বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথকে।
লেখক: সাহিত্য সমালোচক, গবেষক, ধর্মতাত্ত্বিক