শশী থারুরের সাক্ষাৎকার : এক লাখ পাউন্ড ঘুষের বিনিময়ে ঢাকার নওয়াব বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করেছিলেন

শশী থারুরের সাক্ষাৎকার : এক লাখ পাউন্ড ঘুষের বিনিময়ে ঢাকার নওয়াব বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করেছিলেন
(ভারতীয় পার্লামেন্টে কংগ্রেস দলীয় সদস্য, জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, লেখক ও তুখোড় বক্তা শশী থারুর তাঁর যোগ্যতাবলেই এখন ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে এক আলোচিত ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৬ সালের ১০ মার্চ তিনি লন্ডনের কেরালার এক দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন দুই বছর তখন তাঁর বাবা-মা তাঁকে নিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন’স কলেজ থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর পিএইডি করেন মাত্র ২২ বছর বয়সে। পেশাজীবন শুরু করেন জাতিসংঘে এবং ২০০৬ সালে ভারত জাতিসংঘ মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার সেক্রেটারি অফ স্টেট কন্ডোলিজা রাইস বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র মহাসচিব হিসেবে কোনো শক্তিশালী ব্যক্তিকে দেখতে চায় না। এরপর থারুর জাতিসংঘের চাকুরি ছেড়ে ২০০৯ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং তখন থেকে তিনি তিন বার কেরালার একটি আসনে লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারে থারুর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
থারুর বহু সংখ্যক ফিকশন ও নন-ফিকশন গ্রন্থের রচয়িতা এবং ভারতের ইতিহাস, রাজনীতি, সংস্কৃতির ওপর, বিশেষ করে ব্রিটিশের ভারত লুণ্ঠনের ওপর তাঁর গ্রন্থ অত্যন্ত পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বেশ কয়েকটি দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখেন। থারুরের চাচা পরমেশ্বরন থারুর ভারতে ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’ এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শশী থারুরের বাবা ‘দ্য স্টেটসম্যান’ গ্রুপের বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন।)
“এন এরা অফ ডার্কনেস: দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার ইন ইন্ডিয়া”
শশী থারুরের অন্যতম আলোচিত গ্রন্থ “অ্যান এরা অফ ডার্কনেস: দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার ইন ইন্ডিয়া।” গ্রন্থটির বিষয়বস্তু ভারতীয় উপমহাদেশের যেকোনো পাঠককে আলোড়িত করবে। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের কাছে অতিরঞ্জিত ও কল্প-কাহিনিতে ভরপুর বলে মনে হবে। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের পুরো ইতিহাস বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে “অ্যান এরা অফ ডার্কনেস” এ, যাতে স্থান পেয়েছে ব্রিটিশের ভারত লুণ্ঠণ; ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কি ভারতে রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন করেছিল, নাকি তাদের আগমণের পূর্বেই ভারতে রাজনৈতিক ঐক্যের ধারণা বিরাজ করছিল; ব্রিটিশ কি আসলে গণতন্ত্র, আমাদের কি স্বাধীন সংবাদপত্র ছিল, আইন ও রাজনীতির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা কি ছিল; ব্রিটিশের বিভাজন করে শাসনের ধারণা; ব্রিটিশ কি ভারতকে নি:স্বার্থভাবে উন্নয়ন করতে চেয়েছিল? ব্রিটিশের উপস্থিতিতে অথবা ব্রিটিশ ছাড়া কি ভারত ভালো অবস্থায় থাকতো, উপমহাদেশের ওপর ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের মন্দ প্রতিক্রিয়াগুলো কি?
বলতে দ্বিধা নেই যে শশী থারুরের প্রতিটি গ্রন্থের বর্ণনাশৈলির মতো “অ্যান এরা অফ ডার্কনেস” এর চমৎকার বর্ণনা অত্যন্ত সুখপাঠ্য। প্রতিটি প্যারা এবং প্রতিটি বাক্য প্রমাণ করে যে গ্রন্থটি রচনা করতে তাঁকে কতটা গবেষণা করতে হয়েছে। আমরা ব্রিটিশ রাজের কথা ভাবলে তাদের ভারত বিজয় ও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথাই প্রথম ভাবি। কিন্তু “অ্যান এরা অফ ডার্কনেস” পাঠককে এর চেয়ে বিস্তৃত ক্ষেত্রে নিয়ে যায়। যেখানে সমালোচনা প্রয়োজন, সেখানে তিনি সমালোচনা করেছেন এবং তার সমালোচনার তীর তার নিজ দল কংগ্রেস এবং গান্ধী ও নেহরুর মতো ব্যক্তিত্বকেও বিদ্ধ করেছে। তার সমালোচনা গঠনমূলক, কারণ তিনি প্রতিটি সমালোচনায় বিকল্প প্রস্তাবনা উল্লেখ করেছেন। ব্রিটিশ লুটেরারা ভারতকে শাসনের নামে যেভাবে ভারতীয়দের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, যেভাবে ভারতের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, সেজন্য তিনি তাঁর গ্রন্থে ব্রিটিশের উদ্দেশে বলেছেন ভারতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য।
২০১৬ সালে তার “অ্যান এরা অফ ডার্কনেস” প্রকাশিত হওয়ার পর ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স শশী থারুরের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। পাঠকদের কাছে সেটি উপস্থাপন করছি:
প্রশ্ন: কোন বিষয়গুলো আপনাকে “অ্যান এরা অফ ডার্কনেস” লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে?
উত্তর: আসলে এটা আমার প্রকাশকের চিন্তার ফসল। আমি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলাম। সত্য বলতে কি, ব্যাপারটি নিয়ে আমি আদৌ মাথা ঘামাইনি – আমাকে যে এটা নিয়ে অনেক গবেষণা করতে হয়েছে, তাও নয়। আমি যে কথাগুলো বলেছি, আমার মনে হয়, উপমহাদেশের শিক্ষিত মানুষ কমবেশি এ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু আমার বক্তৃতাটি ভাইরাল হওয়ার পর আমার প্রকাশক আমাকে ফোন করে বলেন, “আপনি কি এটিকে একটি বই হিসেবে লিখতে চান?” আমি তাকে বলি, “এগুলো কি সবাই জানে না?” তিনি বলেন, “না, তারা যদি জানতেন, তাহলে আপনার বক্তৃতা ভাইরাল হতো না।” তার কথার যৌক্তিকতা ছিল।
প্রশ্ন: বইটি লেখা আপনার জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল? আপনি কি ধরনের গবেষণা করেছেন?
উত্তর: পনেরো মিনিটের বক্তৃতা এবং এরপর ৩৩৩ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ রচনার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা অবশ্যই করতে হয়েছে। এজন্য আমাকে যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়েছে, তার প্রথমটি ছিল, আমার নিজের যুক্তিগুলো যে যথার্থ তা প্রমাণ করা। আমি বলতে চাই যে, আমার যুক্তিগুলো মূলত আমার পড়াশোনার ভিত্তিতে, যা আমি হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, সাম্প্রতিককালের কোনোকিছু পড়ার ভিত্তিতে নয়। আমাকে অনুভব করতে হয়েছে যে আমি যা পড়েছি, সে ঘটনাগুলো সঠিক, যে সংখ্যাগুলো জেনেছি সেগুলো ভুল নয় এবং তারিখগুলোও যথার্থ। দ্বিতীয়ত: এক্ষেত্রে পেশাদার ইতিহাসবিদদের পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজ। আমি গবেষকদের জন্য লিখিনি, সেজন্য পাণ্ডিত্যের ধারে কাছে যাইনি। বিগত পনেরো বছরে ভারতের ইতিহাস এবং বিশেষ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারত দখল ও শাসনের ওপর যেসব কাজ হয়েছে আমি সেসবকে এই গ্রন্থে তুলে ধরেছি, তা না হলে এ বিষয়গুলোর অনেক কিছুর সঙ্গে আমি পরিচিত ছিলাম না।
প্রশ্ন: আপনি কি কোনো তথ্য বা কাহিনি বা উপাত্ত পেয়েছেন, যা অত্যন্ত মজার এবং চমকে দেওয়ার মতো, যা আপনার গ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত করেছেন?
উত্তর: আমার কাছে সবকিছুই মজার তথ্য ছিল, কিন্তু আমাকে বিস্মিত করার বা চমকে দেওয়ার মতো কি কিছু ছিল? হ্যাঁ, আমার মনে হয়, বেশ কিছু বিষয় আসলেই চমকে দেওয়ার মতো ছিল। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলতে পারি, ‘বিভাজন সৃষ্টি করে শাসন’ করার নীতির পুরো ব্যাপারটি চমকে দেওয়ার মতো, যা ১৮৫৭-৫৮ সালের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সচেতনভাবে এই নীতি গ্রহণ করেছিল। আমি সবসময় সচেতন ছিলাম যে ব্রিটিশ হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত সচেতনভাবেই এই নীতি বেছে নিয়েছিল এবং এর বিস্তারিত প্রচেষ্টা আসলেই চমকে দেওয়ার মতো। যেমন ব্রিটিশ যখন ১৯০৫ সালে বাংলাকে ভাগ করে এবং ঢাকার নওয়াব, যিনি পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের নেতা ছিলেন, তিনি এর প্রবল প্রতিবাদ করেন। ব্রিটিশ তার কণ্ঠরোধ করতে তাঁকে এক লাখ পাউন্ড ঘুষ দেয় এবং তিনি তার সুর পরিবর্তন করেন। এ ঘটনার ওপর ১৯০৮ সালে একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক রিপোর্ট করেন, কিন্তু আমি আগে কখনো এ বিষয়টি জানতাম না। এ ধরনের কিছু ঘটনার বিস্তারিত আমি জানতে পারি এই গ্রন্থ রচনার সময় এবং এর ফলে আমার নিজের জ্ঞান ঘনীভূত হয় সমসাময়িক ঘটনার বিস্তারিত পাঠ করার পর, যা আমি আগে আন্ডার গ্রাজুয়েট ক্লাসে ইতিহাস পড়ার সময়, এবং বিশেষ করে ইন্টারনেট আবিস্কারের আগে জানতে পারিনি। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতব্দীর অনেক কিছু এখন যা সহজে পাওয়া যাচ্ছে তা আগে সম্ভব ছিল না।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে নতুন অন্তদৃষ্টি। অতএব তথ্য সহজলভ্য হওয়ায় আমি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি যে হিন্দু মুসলিম বিভাজনকে ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিতভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। তা সত্বেও আমার পক্ষে এখনো পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়নি যে এই বিভাজন শুধুমাত্র ব্রিটিশ উদ্ভাবন ছিল কি না। কারণ ভারতে জাতিভেদ সম্পর্কে আমাদের শেখানো হয়েছে যে এটি হাজার হাজার বছর আগে থেকেই ছিল এবং আমরা সবসময় এর চর্চা করেছি। কিন্তু বাস্তবে ব্রিটিশের ভারতে আগমণের বহু আগে থেকে এই জাতিভেদ প্রথা কমবেশি শিথিল ছিল এবং কিছুটা অস্পষ্ট ছিল। এর মধ্যেও সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা এবং সমাজে জাতিভেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও ছিল। ব্রিটিশের কাজ ছিল জাতিভেদ প্রথাকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আত্মসচেতনতা বাড়িয়ে তুলে তাদের সুবিধার জন্য কাজে লাগানো এবং তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার চেতনা জাগিয়ে তোলা।
প্রশ্ন: ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ভারতে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করার কথা স্বীকার করতে এবং এজন্য ভারতের কাছে ক্ষমা চাইতে বার বার অস্বীকার করে এসেছে কেন?
উত্তর: আমার ধারণা, এর আংশিক কারণ ব্রিটিশের সাফল্য। উনিশ শতক থেকে তারা ভারতে তাদের উদ্যোগে অতি সফল ছিল এবং এটাকে তারা তাদের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য অনিবার্য ভেবেছিল। তারা বিশ্বকে এবং বিশেষ করে পাশ্চাত্যকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য মানবিক, নি:স্বার্থ Ñ যা সত্য থেকে বহু দূরে। কারণ আসলে তারা অত্যন্ত লোভী, অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক ও নিজেদের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকামী ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ জনগণ জানে না যে ভারতে ব্রিটিশ শাসন কতটা নির্মম ছিল। অতএব তারা এ ব্যাপারে তারা অসচেতন যে তাদেরকে ভারতবাসীর কাছে কোনোকিছুর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। এসবের ওপরে স্থান পেয়েছে চাপিয়ে দেওয়া বিশ্বাস, যা তারা “ইন্ডিয়ান সামারস,” এবং “জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন” এর মতো টেলিভিশন ড্রামা থেকে শিখেছে, যেগুলো বই হিসেবে যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ এবং ভারতের অনেক বাস্তব বিষয় ওঠে এসেছে। কিন্তু যখন বইগুলোকে টেলিভিশনে নাটকের আকারে প্রদর্শন করা হয়েছে তখন ভারতের জাতীয়তাবাদী বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণ পরিহার করা হয়েছে এবং ব্রিটিশ যুক্তিগুলোকে প্রধান করে দেখানো হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন যে ভারতীয় উপমহাদেশের জনগোষ্ঠী এবং শাসকগণ ভারতে ব্রিটিশের আধিপত্য বিস্তারকে মোকাবিলা করার জন্য ভিন্ন কিছু করতে পারতেন? আপনি যদি পেছনের দিকে যান, তাহলে তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কি হবে?
উত্তর: বিপুল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ভারতবাসী ব্রিটিশের আধিপত্য ঠেকাতে যা করেছে, সেজন্য তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা পোষণ করি। আপনি জানেন যে উনিশ শতকের প্রথম দিকে, যখন ব্রিটিশ শাসনের বয়স মাত্র কয়েক দশক হয়েছে, ওই সময়ে বাংলায় রেনেসাঁর উদ্ভব ঘটেছে। আমাদের জনগণ চুপচাপ থেকেও উপনিবেশবাদীদের ভাষা শিখেছে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করার উদ্দেশে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ আমাদের সমাজ সংস্কার করে যে রূপ দিতে যাচ্ছিল তা চ্যালেঞ্জ করা জরুরী হয়ে ওঠেছিল। তা থেকে বোঝা যায় যে অনেক উপনিবেশের তুলনায় ভারতে এভাবে মোকাবিলা করার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল অনেক আগে এবং যেখানে যারা ব্রিটিশ শাসন কাঠামোর মধ্যে এ ধরনের মোকাবিলা করতে চেষ্টা করেছে, সর্বত্র তা ব্যর্থ হয়েছিল। ভারতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। কারণ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে ব্রিটিশ সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছিল যে আমাদের পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক উপায় অবলম্বনে সহসা তেমন ফলোদয় হবে না। অতএব তখন আমাদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তির দিকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পথ বেছে নিতে হয়েছে। এর চমৎকার একটি দৃষ্টান্ত ছিল ব্রিটিশ ব্যবস্থার মধ্যে থেকে দাদাভাই নওরোজির প্রদর্শিত পথ অনুসরণ। তিনি নিজে ইংলিশ-প্রেমিক হয়ে তার কাজ শুরু করেন এবং এত এগিয়ে যান যে এক পর্যায়ে তিনি ব্রিটিশে প্রচণ্ড সমালোচকে পরিণত হন, যারা ভারতে দারিদ্রের সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু জনগণ তা বিস্মৃত হয়েছিল। জনগণের এই বিস্মৃতির সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ এমন একটি চিত্র উপস্থাপন করে যে ভারত সবসময় দরিদ্র ছিল। কিন্তু বাস্তবে ভারত কখনোই দরিদ্র ছিল না। ব্রিটিশ যখন ভারতে আসে তখন ভারত ছিল বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ এবং তারা এ দেশকে দরিদ্রতম দেশে পরিণত করে।
প্রশ্ন: এমন একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারত এমন পর্যুদস্ত ও ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল যে ব্রিটিশকে বাধ্য হয়ে ভারত ত্যাগ করতে হয়েছিল এবং তাদের পক্ষে ভারত এবং অন্যান্য উপনিবেশ দখলে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
উত্তর: ভারতে যদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন না হতো, তাহলে সাম্রাজ্য ধরে রাখতে ব্রিটিশকে এতটা বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়তে হতো না। যেহেতু ভারতে একটি প্রচণ্ড জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠেছিল এবং আন্দোলনকারীরা ব্রিটিশের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের হাত থেকে অধিকতর স্বাধীনতা আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছিল, সেজন্য সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ জনগণের অবস্থা ছিল এর বিপরীত। আমি অনেক ব্রিটিশ লোকজনের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়েছি যে ১৯৪০ সালেও তারা আশা করেছেন যে ভারতে ব্রিটিশ শাসন আরো এক হাজার পর্যন্ত টিকে থাকবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন যে ব্রিটিশের পক্ষে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আরো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ভারত শাসন করা সম্ভব ছিল, কারণ তারা ব্রিটিশ জনগণকে কার্যকরভাবে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল যে তারা তাদের উপনিবেশগুলোর জনগণের মহান কল্যাণ সাধন করছে?
উত্তর: না, আমার মনে হয়, তারা পরবর্তী সময়ে এমন একটি অজুহাত দাঁড় করিয়েছে। ব্রিটেনের জন্য প্রধান সুবিধা ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের কল্যাণগুলো ব্রিটিশ দৈনিকগুলোতে দৃশ্যমান ছিল। ভারত থেকে লুণ্ঠিত অর্থে লন্ডনে রূপান্তর ঘটেছিল। উপনিবেশ থেকে লুণ্ঠিত অর্থে ব্রিটেনে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছিল, তা শুধু ভারতের অর্থ ছিল না, ওয়েস্ট ইন্ডিজের অর্থও ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ইক্ষু চাষ এবং অন্যান্য উৎস থেকে থেকে ব্রিটেন বিপুল অর্থ অর্জন করছিল। ঘানার গোল্ডেন কোস্ট, মালয়েশিয়ার রাবার। ব্রিটেন শুধু আমাদের দেশই লুণ্ঠন করেনি, তবে ব্রিটেন থেকে সবচেয়ে বেশি লুণ্ঠন করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এবং এই লুণ্ঠন কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ভারতীয়দের নিয়োগ করেছিল। তারা ভারতে সবচেয়ে বড় কল্যাণকারীতে পরিণত হয়েছিল, কারণ সেনাবাহিনীতে বা সিভিল সার্ভিসে হোক, উভয় ক্ষেত্রে ভারতীয়দের পেশা জীবন লাভজনক ও মর্যাদাপূর্ণ ছিল। যেসব ব্রিটিশ ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে কাজ করতো তারা বিশ্বে সর্বোচ্চ পরিমাণে বেতনের সুবিধাভোগী ছিল। অতএব ব্রিটেনের জন্য লাভের সীমা-পরিসীমা ছিল না। ব্রিটিশ জনগণের কাছে এসব দৃশ্যমান ছিল।
প্রশ্ন: আধুনিক উচ্চাকাক্সক্ষী ভারতীয় নাগরিকরা যে ব্রিটেনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ অথবা ‘কোহিনূর’ দাবী করছে, এ প্রেক্ষিতে আপনার বক্তব্য কি?
উত্তর: আধুনিক উচ্চাকাক্সক্ষী ভারতীয়রা একটি পর্যায়ে সম্ভবত একথা বলতে পারে, “চলো, আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই। এটা অতীতের ব্যাপার। এখন আর এ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কি লাভ? চলো, আমরা ভবিষ্যতের পানে মনোনিবেশ করি।” এ বিষয়ে আমি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। এ প্রসঙ্গে এক নৈশভোজে ইরাইলের পরলোকগত প্রেসিডেন্ট সাইমন পেরেসের সঙ্গে অত্যন্ত স্মরণীয় আলোচনার কথা আমার মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন তিনি ইতিহাসকে ঘৃণা করেন এবং তিনি চান না যে তার নাতিনাতনিরা ইতিহাস শিখুক, কারণ ইতিহাস আপনাকে শুধু ঘৃণা করতে শেখায় এবং অতীতকে ভোলার জন্য সামনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। অনেকের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে এ যুক্তি যথার্থ। ইসরাইলিরা জানে যে তারা তাদের অতীতকে ভুলতে পারবে না, কারণ বর্তমানের মুখে অতীত তাদের পানে তাকিয়ে আছে। ভারতের ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই যে আমাদের ইতিহাস জানার কারণ ও প্রয়োজন হচ্ছে, আমরা যদি জানতে না পারি যে আমরা কোথা থেকে আসছি, তাহলে আমাদের পক্ষে কিভাবে বোঝা সম্ভব যে আমরা কোথায় যাচ্ছি? আপনি যদি না জানেন যে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা কোন অবস্থায় ভারত ত্যাগ করেছিল, তাহলে আজ দেশ যে অর্জন করেছে, আমাদের পক্ষে তা কিভাবে পরিমাপ করা সম্ভব অথবা দেশ কোন দিকে যাচ্ছে বা যেতে পারে তা বোঝা সম্ভব নয়। সম্ভাব্য শিল্পায়ন থেকে আমরা দু’শ বছর পর্যন্ত বঞ্চিত ছিলাম। আমাদেরকে এখন চীনের সঙ্গে অথবা বিশ্বের যেকোনো অংশের সঙ্গে মোকাবিলা করতে চেষ্টা করছি। ব্রিটিশ শাসন না থাকলে আমরা কিছু বিষয়ে অন্যভাবে এগিয়ে যেতে পারতাম, এসব আজ বৈধ রাজনৈতিক যুক্তি, কিন্তু আমাদের এমন একচি অতীত রয়েছে, যা বর্তমানকে ব্যাখ্যা করে।
আমি কখনো ক্ষতিপূরণ আদায়ের বড় প্রবক্তা ছিলাম না। অক্সফোর্ড যখন তাদের আলোচনায় ‘ক্ষতিপূরণ’ শব্দটি প্রয়োগ করে, তখন আমি ক্ষতিপূরণের ওপর কথা বলেছিলাম। কিন্তু আমার বক্তব্য ছিল দুশ বছরের জন্য প্রতীকি এক পাউন্ড ক্ষতিপূরণ। কিন্তু একজন সাবেক আমলা ও সাবেক মন্ত্রী হিসেবে আমি যথার্থই জানি যে ক্ষতিপূরণ আদায় কার্যকর করা আদৌ সম্ভব নয়। কোনো অর্থমন্ত্রী ্এ ধরনের একটি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না অথবা এটিকে বাধ্যবাধকতা হিসেবে নেবেন না। ফলে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ঘটনা ঘটবে না। আমি বরং দুটি বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দেই। প্রথমত ক্ষমা প্রার্থনা করা। এমনকি আমি আমার গ্রন্থে কথাটি বলেছি যে জালিয়ানাওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ পূর্তি ভারতবাসীর কাছে ব্রিটেনের ক্ষমা প্রার্থনা উপযুক্ত সময়। কারণ এ হত্যাকাণ্ড ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ; এ এটি ছিল কোনো ধরনের প্ররোচনা ছাড়া প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর বর্বরতম হত্যাকাণ্ড। দ্বিতীয়ত: ব্রিটিশের কিছু পরিমাণে হলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত তাদের স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত করার মাধ্যমে। তারা যে ঐতিহাসিক বিস্মৃতিতে ভুগছে তা অত্যন্ত লজ্জাকর।
প্রশ্ন: আপনি প্রাইভেট মেম্বারস বিলের আকারে ট্রান্সজেন্ডার রাইটস, সমকাম ও দেশদ্রোহকে অপরাধ বিবেচনা না করার ওপর মতো প্রগতিশীল আইন প্রণয়নের চেষ্টা করেছেন, যেগুলো ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইন বলে আপনারা সংশোধনী আনতে চেয়েছেন। আপনার কি মনে হয় না যে আপনার নিজ দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখন এ ধরনের আইন সংস্কারের অধিক সুযোগ ছিল?
উত্তর: যদি সঠিক বলতে হয়, তাহলে বলবো, এটা করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের ব্যবস্থায় আপনি অন্য কোনো মন্ত্রীর এখতিয়ারে যা আছে তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। যেমন মানব সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি বড় জোর আমার নিজ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে পরামর্শ দিতে পারি, এর বেশি কিছু নয়। দেশদ্রোহের আইন বাতিল প্রস্তাব করা অসমীচিন, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব। বিরোধী দলের একজন এমপি হিসেবে আমার জন্য প্রাইভেট মেম্বারস বিল প্রস্তাব করা অনেক সহজ। আমার হাত পা বাঁধা থাকে না। আমি যেকোনো মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট এবং ব্যাপক বিস্তৃত বিষয়ের ওপর প্রস্তাব করতে পারি। আমার সাতটি প্রাইভেট মেম্বাস বিল বিবেচনাধীন রয়েছে, কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের আপত্তির কারণে একটি বিলও পার্লামেন্টে উত্থাপিত হতে পারেনি। আমি একটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি যে একটি দল নিজেদের হিন্দুত্ব ও হিন্দু মূল্যবোধ রক্ষাকারী দল বলে দাবী করছে, তারা আসলে ঔপনিবেশিক পতাকা উর্ধে তুলে ধরার জন্য হিন্দু মূল্যবোধের সঙ্গে প্রতারণা করছে, এবং ভিক্টোরীয় নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে তাদের আচরণ ও কর্মকাণ্ডে, যা ব্রিটিশরা তাদের শাসনের কোনো পর্যায়েই পরিত্যাগ করেনি। যেমন, ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ বা দেশদ্রোহ আইন ব্রিটেনে অনুরূপ আইনের তুলনায় অনেক বাজে, কারণ এ আইনটি তারা প্রণয়ন করেছিল বিশেষভাবে উপনিবেশের জনগণকে দমন করার উদ্দেশে। অতএব, আমি ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতে যতগুলো সরকার এসেছে তাদের সকলকে দায়ী করি এ ধরনের একটি কালো আইন বাতিল না করার জন্য। বলা হয় যে নেহরু আইনটি বাতিল করতে চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে এটি বিদ্বেষপ্রসূত একটি আইন। যৌন বিষয়ক আইনগুলোও একইভাবে ব্রিটিশদের তৈরি এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গিই এতে প্রতিফলিত হয়েছে এবং কোনো হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এ ধরনের বিধিনিষেধের কথা পাওয়া যায় না। ভারত যৌন বিষয়ে সবসময় একটি নমনীয় ও অনুমোদনযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এসেছে। কিন্ত আমরা পাইকারিভাবে ভিক্টোরীয় নৈতিকতা গ্রহণ করেনি। হিন্দুত্বের তথাকথিত প্রবক্তারা উদারপন্থীদের কোনঠাসা করে রাখছে যৌন বিষয়ক আইন যা শিথিল করা আবশ্যক তার পরিবর্তে আইনগুলোতে যথারীতি বহাল রাখার স্বার্থে।
প্রশ্ন:: আপনি এ পর্যন্ত ষোলোটি বই লিখেছেন। আপনার কর্মব্যস্তার মধ্যে লেখালেখিতে প্রচুর সময় ব্যয় করছেন। আপনি কিভাবে সময় বের করেন?
উত্তর: যারা বলেন যে তারা সময় পান না, তারা আসলে সময়ের মাঝে হারিয়ে যান। আপনাকে এমন কিছু বেছে নিতে হবে, যার মধ্যে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন। আমি সময় হারাই না, আমার বেছে নেয়ার বিষয়ও হারাই না। ইশ্বর আমাকে যে সময় দিয়েছেন, আমি তার প্রতিটি সেকেন্ড উপযুক্তভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। অনেকে আমার সমালোচনা করেন যে আমি আমার সাধ্যের চেয়ে বেশি করার চেষ্টা করছি, আমার মা একই চিন্তা করেন। তিনি মনে করেন যে আমার কিছু কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলা উচিত। কিন্তু আমি কোনোভাবে সময় বের করে নেই। আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কেন এসব করি, কারণ আমি পৃথিবীর অনেক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে আমি একজন মানুষ এবং আমার অনেক কাজে আমি মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করি আমার লেখালেখির মধ্য দিয়ে। কাজটি নি:সন্দেহে কঠিন এবং আমি স্বীকার করি যে আমি যথেষ্ট সময় ঘুমোতে পারি না, তেমন কোনো বিনোদনে অংশগ্রহণ করি না এবং খুব বেশি মুভি দেখিনা বা খেলাধূলা আমার পছন্দের ব্যাপার হলেও খেলাধূলায় সময় ব্যয় করি না, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেই, ক্রিকেট ম্যাচ দেখি না।
প্রশ্ন: আপনি সর্বশেষ কোন মুভি দেখেছেন?
উত্তর: মুভি কমই দেখা হয়। তবে মনে হয় কোনো এক উইকএন্ডে আমি ‘বজরঙ্গী ভাইজান’ এবং ‘বাহুবলী’ মুভি দুটি দেখেছি। অনেক সময় বিমান ভ্রমণকালে মুভি দেখা হয়, তা সত্বেও ফ্লাইটে বেশির ভাগ সময় আমি বই পড়ে কাটাই। কারণ সেটি একমাত্র সময় যখন আমি কোনো বিঘ্ন ছাড়া পড়তে পারি।
প্রশ্ন: এখন আপনি কোন বইটি পড়ছেন?
উত্তর: আমি আমার শেষ বিমানযাত্রায় অরবিন্দ আদিগা’র “সিলেকশন ডে’ বইটি সাথে নিয়েছিলাম, বেশ মজার একটি বই বলে মনে হয়েছে। কিন্তু অন্য কোনো কারণে বিমানে বইটি পড়া শুরু করতে পারিনি। মনে হয় পরের বিমান ভ্রমণকালে আমি বইটি পড়তে শুরু করবো।
প্রশ্ন: আপনার কাছ থেকে আমরা পরবর্তী বই কি আশা করতে পারি?
উত্তর: আমার প্রকাশকরা আমাকে ভারতের ৭০তম বার্ষিকীর ওপর কিছু করতে বলছিলেন, অনেকটা ভারতীয়-হীনতা ও ভারতীয় জনগণকে নিয়ে তুলনামূলক হালকা কোনো বিষয়ে। এরপর আমি ফিকশনে ফিরে যেতে চাই।
নয়া দিল্লি, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
অনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু