মোগলদের ভোজন বিলাস ও খান-ই-সামান

মাহমুদুর রহমান

খানসামা একটি খুবই পরিচিত শব্দ। সাহিত্য থেকে শুরু করে নানা উৎসে শব্দটি পাওয়া যায়। খানসামা মূলত একজন পুরুষ রাঁধুনিকে বোঝায়। তবে তার কাজ কেবল পাকশালেই শেষ হয় না। তিনি ঘরদোরের দায়িত্বেও থাকতে পারেন। বাবুর্চি ও খানসামার মধ্যে এখানেই পার্থক্যটা তৈরি হয়। বাবুর্চির কাজ রেসিপি অনুসারে খাদ্য তৈরি করা আর খানসামা সেসবের পরিকল্পনা থেকে আরম্ভ করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন। খানসামার দায়িত্ব পাকশাল থেকে খাবার ঘরেও বিস্তৃত। খানসামা পদটি যখন সৃষ্টি হয় তখন ডাইনিং বা টেবল ম্যানার এখনকার মতো ছিল না, তবে ছিল নিজস্ব রীতি। সে রীতিতে খাবার পরিবেশনে খানসামার দায়িত্ব থাকত। তার তত্ত্বাবধানে খাবার সময় সবকিছু পরিচালিত হতো।

খানসামা শব্দটি উর্দু। একে বিশ্লেষণ করলে দুটি অংশ পাওয়া যায়—খান ও সামান। খানসামা আসলে খান-ই-সামান। এখানে খান অর্থটি মালিক বা তত্ত্বাবধায়ক এবং সামান বলতে গৃহস্থালি জিনিসপত্রকে বোঝানো হয়। মোগল শাসনামলে নানা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এ ধারার নামকরণ করা হতো। মীর-ই-বহর ছিলেন নৌবাহিনীর প্রধান, তেমনি খান-ই-সামান ছিলেন প্রয়োজনীয় নানা পণ্যের রক্ষণাবেক্ষণকারী। সেখান থেকেই ক্রমে বিবর্তিত হয়ে খানসামা শব্দটি এসেছে। ধীরে ধীরে গৃহস্থালির সঙ্গে রসুই যুক্ত হয়ে যায় এবং খানসামা রসুইয়ের সঙ্গে মূলধারায় যুক্ত হয়ে পড়েন। তার দায়িত্ব হয় রসুইঘরের দেখভাল। সেখান থেকে ক্রমে আরো কিছু পরিবর্তন আসে। ধনী পরিবারের তিনি হয়ে ওঠেন তত্ত্বাবধায়ক ও রক্ষণাবেক্ষণকারী। আজকের দিনের কেয়ারটেকার বললে ভুল হয়, খানসামাকে আসলে বলা যায় ‘বাটলার’।

কোনো কোনো সূত্রে খানসামাকে প্রধান রাঁধুনি বলে উল্লেখ করা হয়। আদতে ব্যাপারটি পুরোপুরি তা নয়। মোগল শাসনামলে মোগল প্রাসাদের নিয়ম অনুসারে শাহি খানসামা, শাহি বাবুর্চির সঙ্গে মিলে নির্দিষ্ট দিন বা কয়েকদিনের রান্নার আয়োজন সম্পর্কে পরিকল্পনা করতেন। এই পরিকল্পনায় তার অন্তর্ভুক্তি ছিল অবশ্যম্ভাবী ও অবশ্যকর্তব্য। কেননা রসুইসহ অন্যান্য সব ‘সামান’ থাকত তারই অধীনে। সুতরাং শাহি বাবুর্চি তার কাছ থেকেই ‘রসদ’ সংগ্রহ করতেন। রসদের পরিমাণ ও প্রয়োজন সম্পর্কে তাদের যৌথ প্রয়াস ব্যতিরেকে এ কাজ সম্ভব ছিল না। বিশেষত মোগল হারেমে বাদশাহসহ অন্যদের জন্য প্রতিদিন প্রচুর খাদ্য রান্নার প্রয়োজন হতো। এ ছিল এক স্বতন্ত্র বিস্তৃত কর্মযজ্ঞ।

তবে খানসামাও রন্ধন বিষয়ে জ্ঞান রাখতেন। সে হিসেবে কখনো কখনো প্রধান বাবুর্চিও খানসামা হতেন। উল্টো করে বলা যায়, খানসামাই হতেন প্রধান বাবুর্চি। মোগল আমলে বাদশাহের খিদমতগারদের মধ্যে অনেক ভাগ ছিল। প্রত্যেক আলাদা কাজের জন্য ছিলেন একজন করে আলাদ্য খিদমতগার। পানিবাহক, কলমবাহকের জন্যও ছিল আলাদা আলাদা পদ। খানসামার বর্তমান যে পরিচয় বা পরিচিতি সেকালে বিষয়টি এমন ছিল না। হারেমের খাবার বা বাদশাহের জন্য তৈরি হওয়া খাবারের সঙ্গে কেবল বাবুর্চি নন, যুক্ত থাকতেন শাহি হেকিম। তিনি যুক্ত থাকতেন দুটো কারণে। প্রথমত বাদশাহের স্বাস্থ্যগত দিকটি লক্ষ রাখতেন। কোন ধরনের খাদ্য তার জন্য ক্ষতিকর তা লক্ষ রাখা ছিল হেকিম সাহেবের একটি অন্যতম দায়িত্ব। দ্বিতীয় কারণটি ছিল খাদ্যে কোনো প্রকার বিষ প্রবেশ করানো হলো কিনা তা দেখা। এ কাজটি মূলত খাদ্য পরিবেশনের পর হতো। মোগল আমলে খাদ্য কেবল প্রস্তুত করলেই হতো না। সেটি পরিবেশনের ছিল আলাদা রীতি। খানসামা ও বাবুর্চি যেমন শুরু থেকে যুক্ত হতেন, পরিবেশনের সময় বাদশাহের সামনে তাদের উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক। বাদশাহের খাবার নিরাপদ কিনা তা দেখা নয়, বরং প্রমাণ করা ছিল এদের দায়িত্ব। মূলত বাদশাহকে পরিবেশিত প্রতিটি পদ প্রধান বাবুর্চি খোদ সামান্য পরিমাণে খেয়ে প্রমাণ দিতেন যে ওই পদগুলো সব ধরনের বিষক্রিয়ামুক্ত। এরপরই বাদশাহ খাবার গ্রহণ করতেন। পরিবেশনের সময় খানসামার দায়িত্ব হতো পরিবেশনার সৌন্দর্য রক্ষা এবং যাবতীয় বিষয়াদি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে যাওয়া।

খানসামারা ছিলেন সবাই মুসলিম। তাদের কেউ কেউ শেখ আর কেউ পাঠান গোত্রের ছিলেন। পরবর্তী সময়ে অনেক পার্সিও খানসামা হয়েছেন। হাওয়ার্ড স্টকলারের মতে, খানসামারা ছিলেন ‘বুদ্ধিমান, তাদের ব্যবহার সুন্দর ও তারা অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল’। এরা লিনেনের সাদা পোশাক পরতেন, মাথায় বাঁধতেন পাগড়ি। বাকল্যান্ড তার মেনসার্ভেন্টস ইন ইন্ডিয়া প্রবন্ধে লিখেছেন ‘সে একটি বৃহৎ পাগড়ি বাঁধে এবং তার কোমরে থাকে মসলিনের একটি কাপড়।’ বাকল্যান্ড বা তার মতো সিভিল সার্ভেন্টরা খানসামা সম্পর্কে লিখেছেন কিন্তু তারও আগে লিখেছেন ফ্রান্সিস বার্নিয়েরের মতো পর্যটক। মোগল ভারতে আসা এ ইউরোপীয় পর্যটকের দৃষ্টিতে খানসামারা ছিলেন ইউরোপের ভিত্তিতে প্রাচ্যের গ্র্যান্ড চ্যাম্বারলেইন। তারা ছিলেন গৃহস্থালি কাজ ও শৃঙ্খলা দেখভালের সার্বিক দায়িত্বে।

মোগল আমলের পর নবাবি আমলে খানসামারা অপরিহার্য হয়ে ওঠেন। অনেকে নিজ দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে পদোন্নতি লাভ করে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত হয়েছেন। একটি উদাহরণ পাওয়া যায় অযোধ্যায়। সেখানে নবাব সাদাত আলী খানের পুত্র গাজিউদ্দিন হায়দার শাহ ১৮১৪ সালে নবাবির দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি নবাব হলে পিতার খানসামা আগা মীরকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করেন। লন্ডনের কিংস কলেজের ইংরেজির প্রফেসর জাহানারা কবির বলেন, ‘খানসামারা ছিলেন সামন্ততান্ত্রিক ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষত যেসব ধনী ও অভিজাত গৃহে গার্হস্থ্য একটি বিস্তৃত বিষয় ছিল। ভারতে ব্রিটিশরা এই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার সার্বিক চেষ্টা করেন। মধ্যযুগীয় এ ব্যবস্থা আরো শাণিত করে এমন একটা পর্যায়ে নেয়া হয় যাকে আমি ওরিয়েন্টাল গথিক আড়ম্বর বলে অভিহিত করি।’ তার মতে দরবার, ‘হাজিরা, নজরানা ও অন্যান্য রীতিনীতির মতো খানসামা-সংস্কৃতিও ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে।’

খানসামা পদ ও তার কর্মের উত্পত্তি মোগল আমলে হলেও এর সঠিক পরিচয় বা বর্তমান পরিচিতি তৈরি হয় ব্রিটিশ আমলে। এখানে অনেকে ব্রিটিশ শাসনের দৃষ্টিভঙ্গির কিছু বিষয় তুলে ধরেন। যেমন আকবর আহমেদ মনে করেন মুসলিমদের খলিফা ও খানসামা শব্দটিকে ব্রিটিশরা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে। ২০০২ সালে প্রকাশিত Discovering Islam: Making sense of Muslim history and Society বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘খলিফা—মুসলিম শাসনের শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও খানসামা—মোগল ভারতের অন্যতম শীর্ষ রাজনৈতিক পদকে ব্রিটিশ শাসনকাঠামোতে সর্বনিম্ন পদে নিয়ে আসা হয়: নাপিত, কনিষ্ঠ মাঠকর্মী কেরানিরা হয়ে গেল খলিফা আর রাঁধুনিদের বলা হলো খানসামা।’

এখান থেকে দুটো বিষয় প্রণিধানযোগ্য। প্রথমত ব্রিটিশরা এ দুটো শব্দ ব্যবহার করেছিল ভুলভাবে। দ্বিতীয়ত, খানসামার উদ্ভব মোগল আমলেই এবং সেখানে তার দায়িত্ব ‘রান্না করা’ ছিল না। নবাব গাজিউদ্দিনের উদাহরণ থেকেই বোঝা যায় খানসামারা রাজনৈতিক দায়িত্বের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। আগা মীর কেবল বাবুর্চি হলে তাকে প্রধানমন্ত্রী করা হতো না। কিন্তু ব্রিটিশদের বিবরণ থেকে তাদের পরিচয় পরিবর্তিত হতে শুরু করে। বাবুর্চিরা খানসামা হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করেন। অন্যদিকে বলা যায়, মোগল কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসার পর তাদের কাজের ধারা বদলে যায় এবং খানসামারা বাবুর্চির কাজ করতে বাধ্য হন। তবে মোগল আমলের অব্যবহিত পরে অর্থাৎ নবাবি আমলে তাদের সম্মানের কমতি হয়নি।

খানসামারা গার্হস্থ্য দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি উদ্ভাবনের দিকে নজর রাখতেন। বাবুর্চি হন বা না হন তারা স্বাদু পদের মধ্যে নতুন কিছু না কিছু আনার চেষ্টা করতেন। নবাবি আমলের খানসামাদের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ‘ডিশ’ উদ্ভাবনের কৃতিত্বের কথা শোনা যায়। কিছু কিছু তারা নিজেরা তৈরি করতেন আর কিছু কিছু তৈরি হতো তাদের চাকরিদাতার মর্জিমাফিক। শিক কাবাবের নাম আমরা কেবল জানিই না, অনেকের রীতিমতো প্রিয় খাবার এটি। শিক ব্যবহার করে এ কাবাব বানানোর কারণে এহেন নামকরণ করা হয়েছে। কথিত আছে নবাব সিরাজদ্দৌলার জন্য শেখ শাহনেওয়াজ কাবাবটি তৈরি করেছিলেন। বলা বাহুল্য, শেখ শাহনেওয়াজ ছিলেন নবাব সিরাজদ্দৌলার খানসামা।

ঔপনিবেশিক তথা কোম্পানি ও ব্রিটিশরাজের সময়েও খানসামারা ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের কাজের ক্ষেত্র বদলে গিয়েছিল। সে সময়কার খানসামাদের সম্পর্কে এক ইংরেজ চিত্রকর লিখেছিলেন, ‘Khansamanship like Malvoilo’s greatness, commeth in three wise: some are born Khansamans–some achieve Khansamanship and others have Khansamanship thrust upon them.’ খানসামার আরো একটি পরিচয় রয়েছে। বাংলা উপন্যাসে ‘বাজার সরকার’ কথাটি বেশ পরিচিত। এ ব্যক্তির কাজ মূলত বাড়ি কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পণ্য ইত্যাদির তালিকা তৈরি ও খরচের একটি অনুমান করা। অনেকটাই ম্যানেজারিয়াল। মূলত মোগল আমল থেকে নবাবি আমল অবধি তারা এ কাজই করতেন। তাদের সব দায়িত্বের মূলে ছিল ব্যবস্থাপনা।

খানসামা কারা হতেন সেটিও একটি আলোচনার বিষয়। বিনয় ঘোষ তার কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত বইয়ের প্রথম খণ্ডে লিখেছেন, ‘খানসামাগিরি তিন উপায়ে করার সৌভাগ্য হয়। কেউ খানসামা হয়ে জন্মায়, কেউ খানসামাগিরির যোগ্যতা অর্জন করে, আবার কারো স্কন্ধে সেটা চাপিয়ে দেয়া হয়। মোট কথা, খানসামাগিরি রীতিমতো একটা লোভনীয় পেশা, যা ইংরেজ আমলে মুসলমানদেরই একচেটে ছিল। খানসামারাই ছিল ইংরেজ নবাবদের ঘরের গিন্নি। শুধু রান্নাঘরের নয়, ভাঁড়ারের চাবিকাঠিও তাদের হাতে থাকত। বাড়ির অন্যান্য চাকরবাকর সকলে খানসামার হুকুমের অধীন থাকত এবং তার মন জুগিয়ে চলত। খিদমতগার আর খানসামার তফাত আছে, পদমর্যাদার তফাত। খিদমতগার খানা টেবিলের চাকর, সাহেবদের টেবিলে খানা “সার্ভ” করাই তার প্রধান কাজ। কাজ করে সাহেব-প্রভুকে খুশি করতে পরলে খিদমতগিরি থেকে খানসামাগিরিতে পদোন্নতি হত। ঘরের ব্যাপারে খানসামা হল মুখ্যমন্ত্রী, আর তার ডেপুটি হল খিদমতগার। তারপর অবশ্য মন্ত্রী মণ্ডলীর মধ্যে পদের তারতম্য আছে গুরুত্ব হিসেবে। খিদমতগারের পরেই বাবুর্চি। মুসলমান ছাড়াও মগ, পর্তুগিজ ও কেওড়া জাতির হিন্দুরা বাবুর্চির কাজ করত।’

খানসামার ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে সেখানে হিন্দুদের নাম নেই। মুসলিমরাই হতেন খানসামা। এর একটি কারণ হতে পারে যে হিন্দুরা বাবুর্চি হতো না। স্টকলার জানিয়েছেন, মগ বাবুর্চিরা কোনো ধরনের কাজে আপত্তি করত না। মূলত হিন্দুরা গরু তো দূর মুরগিও কাটতে চাইত না। সেক্ষেত্রে মুসলিমদের সমস্যা ছিল শুয়োরে। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় যে খানসামাদের মধ্যে মুসলমানেদর প্রাধান্য কীভাবে হয়? এর উত্তরও বিনয় ঘোষের লেখার মধ্যেই রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, খানসামা হওয়ার একটি উপায় হলো ‘কেউ খানসামা হয়ে জন্মায়।’ কথাটির অর্থ হলো এটি পারিবারিক পেশা। মোগল ও নবাবি আমলে মুসলিমরাই খানসামার কাজ করতেন। ফলে পরবর্তী সময়ে তাদের পরিবারের সদস্যরাও এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে। তাই ইতিহাসে খানসামাদের লক্ষ করলে তাদের মধ্যে মুসলিমদের নামই বেশি পাওয়া যায়। সেকালে মোগল বাদশাহ ও তার পরিবারের খাবার পরিবেশনে খানসামাদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মোগল মিনিয়েচার ও অন্যান্য চিত্রকর্মে দেখা যায় বাদশাহর দস্তরখানের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন খানসামা। ১৫৯০ সালের একটি মোগল চিত্রকর্মে বাবরের ভোজের আয়োজনে খানসামাদের উপস্থিতি স্পষ্ট। নবাবি আমলেও নবাবের রসুইয়ের পাশাপাশি ভাণ্ডারের দেখভাল করতেন খানসামারা।

মোগল ও নবাবি আমলের পর তাদের সেই দায়িত্বভার কমে যায়। তারা পরিণত হন কোম্পানি ও ব্রিটিশ রাজের কর্মচারীতে। খানসামাদের গার্হস্থ্য দায়িত্ব আসলে সে সময় থেকেই শুরু হয়। কেননা ভারতে ব্রিটিশরা যখন পরিবার নিয়ে থাকতে শুরু করেন তখন প্রয়োজন হয়েছিল দক্ষ কর্মী, যে গৃহস্থালি কর্মে দক্ষ। মেমসাহেবদের পক্ষে তো পুরো ঘর সামলানো সম্ভব নয়। তবে তারা সে সময়েও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। বিনয় ঘোষের ভাষায়, ‘নবাবি আমলের হারাম বা দরবারি পরিবেশে খানসামা-খিদমতগাররা কী অভিনয় করত, তা নিয়ে কোনো রঙিন রূপকথা রচনা করতে চাই না। নবাবি আমল তখন অস্তাচলে, মুসলমান নবাবি আমল। তার সঙ্গে ঢাকাই ও মুর্শিদাবাদি কালচারও অস্ত যাচ্ছে। কিন্তু তার অস্তগামী বর্ণচ্ছটা নতুন ইংরেজ-নবাবি আমলের কলকাতা কালচারের ওপর প্রতিফলিত হচ্ছে। খানসামারা আর মুর্শিদাবাদের বাবুর্চিখানার নায়ক নয়, কলকাতার ইংরেজদের কিচেনের নায়ক। ইংরেজ নবাবদের এই আদি যুগটাকে প্রায় খানসামাদের যুগ বলা চলে।’