কারাউইন : পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

হাবিব রহমান কিছু কিছু দেশ তাদের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে গর্ব করে। যেমন – নেপাল গর্ব করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট নিয়ে। যুক্তরাজ্য গর্ব করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্রিটিশ মিউজিয়াম নিয়ে। সৌদি আরব গর্ব করে জনসংখ্যার তুলনায় আয়তনে বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। আর উত্তর আফ্রিকার মুসলিম প্রধান দেশ মরক্কো গর্ব করে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিদার অনেক দেশ। যেমন – চীনাদের দাবি সাংহাইয়ের হাইয়ার স্কুল-ই পৃথিবীর প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ২২৫৭ সালে। পাকিস্তানের দাবি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের প্রথম। ভারতীয়দের দাবি বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য দলিলদস্তাবেজ পরীক্ষা করে, গিনেস বুকের রেকর্ড অনুসারে মরক্কার ফেজ নগরীর কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ই পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো-ও এই ধারণাকেই স্বীকৃতি দিয়েছে। আমার বিশ্ব ভ্রমণের তালিকায় প্রথম দ্রষ্টব্য থাকে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যভুক্ত স্থান। তারা অনেক গবেষণা করে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে এসব স্থানগুলোর স্বীকৃতি দেয়। তাই মরক্কো ভ্রমণের তালিকায় তানজিয়ার এবং ক্যাসাব্লাঙ্কা পরিদর্শনের পর এই দেশটিতে আমার গন্তব্যস্থল ছিল ফেজ নগরী। শুধু পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় দেখাই নয়, এটি একাধারে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শহর। হ্যান্ডিক্র্যাফটস ক্যাপিটাল হিসেবেও রয়েছে এর সুনাম। ফেজ নগরীর প্রধান আকর্ষণ চতুর্দিকে দেয়াল ঘেরা বাজার যা মেদিনা নামে পরিচিত। তাছাড়া লাল টুপি, ফেজ টুপি বা রুমি টুপির ইতিহাস-ও দেশটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ক্যাসাব্লাঙ্কা থেকে ফেজ নগরীর দূরত্ব ১৫৩ মাইল বা ২৪৬ কিলোমিটার। খোঁজ নিয়ে…

রবীন্দ্র মানসে সুফি প্রভাব

মুসা আল হাফিজ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১)  আধ্যাত্মিকতার মূলে আছে বিশ্ব নিয়ন্তার প্রতি বিশ্বাস। “সীমার মাঝে অসীম তুমি/বাজাও আপন সুর/আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ/ তাই এত মধুর।” এখানে ক্রিয়াশীল ছিলো  জোড়াসাকুর ঠাকুর পরিবারের ভাব-সাধনা,  ফার্সি কাব্য সংযোগ, উপনিষদ এবং  ব্রাহ্ম সমাজ ও রাজা   রামমোহন রায়ের (১৭৭২- ১৮৩৩) প্রভাব ।  রবীন্দ্র মনে আধ্যাত্মিক যে বোধ  তৈরি হয়, তা ব্রাহ্মমতের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছিলো  বৈদিক মন্ত্রের আত্মাকে । কিন্তু  বৈদিক আচারের উপর প্রাধান্য দিয়েছিলো বেদান্তবাদী হৃদয়ের ধর্মকে। “বৃথা আচার বিচার। সমাজের চেয়ে হৃদয়ের নিত্য ধর্ম সত্য চিরদিন।” হৃদয়ের ধর্মের অন্বেষা  পরম সত্তা। যিনি সব মানুষের হৃদয়ে মহত্ত্বের ও শ্রেয়োবোধের প্রেরণা দিচ্ছেন। চিত্রার ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতায় তার পরিচয় আছে। “কে সে? জানি না কে? চিনি নাই তারে শুধু এইটুকু জানি তারি লাগি রাত্রি-অন্ধকারে চলেছে মানবযাত্রী যুগ হতে যুগান্তর-পানে ঝড়ঝঞ্ঝা বজ্রপাতে জ্বালায়ে ধরিয়া সাবধানে অন্তরপ্রদীপখানি …।” রবীন্দ্রনাথের মরমিতা গভীরভাবে উজ্জীবিত ও বিনির্মিত ছিলো ফারসি ও হিন্দি কবিতার সুফি ভাবরসে। শেখ সাদী  (১২১০-১২৯১) হাফিজ (মৃত্যু :  ১৩৮৯) বা  রুমি (১২০৭Ñ  ১২৭৩) প্রতিধ্বনিত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতায় কবিতায়।   সুফিবাদর মন, তার  অপার্থিব মিলন-তিয়াস এবং  পরমানন্দময় ভাবাবেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ কতো গভীরভাবে একাত্ম ছিলেন, তার বিবৃতি নিজেই দিয়েছেন  পারস্য যাত্রী সফরনামায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ ফারসি ভাষার বন্ধনে যুক্ত ছিলেন হাফিজ-রুমিদের অধ্যয়নে। বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোতে বাংলার সাথে ফারসি চর্চা হতো অষ্টাদশ শতকে, এমনকি ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকেও। মুসলমান কবিগণ তো বটেই, হিন্দু কবি ও শিক্ষিত শ্রেনি ফারসিকে উপেক্ষা করতেন না। ভারতচন্দ্র…

সেই দৃষ্টি

মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আপনারা বিশ্বাস করুন বা না-ই করুন, আমি চাইনে কোন মানুষ আমার ততোটা প্রিয় হয়ে উঠুক যার প্রতিচ্ছবি আমার মনের মুকুরে অবরে সবরে প্রতিফলিত হবে। সেটা আমার সবচেয়ে বড় আপ্তজন মা-বাবারও না। কারণ আমি চাই না তাঁদের কারও প্রতিচ্ছবি আমার অন্তরে গেঁথে থাকুক। তাঁদের অবর্তমানে তাঁদের কথা স্মরণ করে আমি কষ্ট পাই। অথবা আমার অবর্তমানে তাঁরা কোন রকম আমার অভাববোধ করুন। যদিও আমি সেজদায় পড়ে আমার মা-বাবার জন্য দোয়া করি, রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।তবে সেজদায় পড়ে দোয়ার সময় ক্ষণিকের জন্য মা-বাবার আশীর্বাদাচ্ছন্ন মুখচ্ছবি আমার অন্তরে বাঙ্ময় হয়ে উঠে। আবার মুছে যায়। আমি তাঁদের মনে রাখতে চাই না। তাই কখনও তাঁদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলি না। কারণ চোখের দৃষ্টিই সর্বনাশা। সে মিথ্যে বলতে জানে না। সে সবসময় অকপট সত্য বলে। আমি যে আমার মা-বাবাকে জগতের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তা গোপন রাখার জন্যই তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলি না।এমনকি আমার বাবা কোন কারণে আমার প্রতি ক্রোধান্ধ হলেও তাঁর চোখের দিকে তাকাই না। অথবা আমার মা আমার জন্য দোয়া করে কেঁদে বুক ভাসালেও তাঁর মুখের দিকে তাকাই না। অথচ আমি জানি এবং মানি যে, মা-বাবার চোখের দিকে শ্রদ্ধাপূর্ণ ও মমত্ববোধের দৃষ্টিতে তাকালে চোখের জ্যোতি বাড়ে। পরম করুণাময় আল্লাহ্ পাকের করুণা লাভ করা যায়। আমি এমনই পামর যে জানি তবে মানি না। এর পরের স্তরের আমার আপ্তজন আমার সুপ্রিয় ভাই-বোন। আমি বড় কি ছোট, কোন ভাই-বোনের চোখের দিকে তাকাই না। অথচ…

শশী থারুরের সাক্ষাৎকার : এক লাখ পাউন্ড ঘুষের বিনিময়ে ঢাকার নওয়াব বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করেছিলেন

শশী থারুরের সাক্ষাৎকার : এক লাখ পাউন্ড ঘুষের বিনিময়ে ঢাকার নওয়াব বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করেছিলেন (ভারতীয় পার্লামেন্টে কংগ্রেস দলীয় সদস্য, জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, লেখক ও তুখোড় বক্তা শশী থারুর তাঁর যোগ্যতাবলেই এখন ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে এক আলোচিত ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৬ সালের ১০ মার্চ তিনি লন্ডনের কেরালার এক দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন দুই বছর তখন তাঁর বাবা-মা তাঁকে নিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন’স কলেজ থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর পিএইডি করেন মাত্র ২২ বছর বয়সে। পেশাজীবন শুরু করেন জাতিসংঘে এবং ২০০৬ সালে ভারত জাতিসংঘ মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার সেক্রেটারি অফ স্টেট কন্ডোলিজা রাইস বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র মহাসচিব হিসেবে কোনো শক্তিশালী ব্যক্তিকে দেখতে চায় না। এরপর থারুর জাতিসংঘের চাকুরি ছেড়ে ২০০৯ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং তখন থেকে তিনি তিন বার কেরালার একটি আসনে লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারে থারুর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। থারুর বহু সংখ্যক ফিকশন ও নন-ফিকশন গ্রন্থের রচয়িতা এবং ভারতের ইতিহাস, রাজনীতি, সংস্কৃতির ওপর, বিশেষ করে ব্রিটিশের ভারত লুণ্ঠনের ওপর তাঁর গ্রন্থ অত্যন্ত পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বেশ কয়েকটি দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখেন। থারুরের চাচা পরমেশ্বরন থারুর ভারতে ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’ এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শশী থারুরের বাবা ‘দ্য স্টেটসম্যান’ গ্রুপের বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন।) “এন এরা অফ…

মেয়ে

মুজতাহিদ ফারুকী দেখ দেখ, এর চোখ দুইটা; কী মায়াবী! শায়লা মন্ত্রমুগ্ধ স্বরে মাহতাবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।শায়লার কোলে বিড়ালের বাচ্চা। বুকের কাছে জড়িয়ে রেখেছে। ছোট্ট একটা প্রাণ। বড় বড় চোখ মেলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। কিছু কি বলতে চায়! জানার উপায় নেই। মুরাকামির কাফকা অন দ্য শোর উপন্যাসের বুড়ো নাকাতাই কেবল বিড়ালের ভাষা বোঝে। তাদের সঙ্গে কথা বলে। নবী সোলেমানের কথা আলাদা। তিনি সব প্রাণী ও জিনের ভাষা বুঝতেন। পিঁপড়ারও। কিন্তু জীবন ফিকশন না, ফ্যান্টাসিও না।মাহতাব ডিভানে শুয়ে, চোখের সামনে খোলা বই। একবার চোখ ফিরিয়ে দেখে। মুচকি হেসে বলে, সত্যি, খুব মায়াময়। একদম নিশি বিড়ালীনী।সে আবার বইয়ে মন দেয়।শায়লার গালে আবিরের লালিমা! অস্পষ্ট। ‘নিশি বিড়ালীনী’র রহস্যে রঙিন। শুধু ওরা দুজনেই জানে। বছর ত্রিশেক আগে মাহতাবের গ্রামের বাড়ি। শীতের রাত। জীর্ণ টিনের ঘর। ফুটোফাটা দিয়ে আসে হিম বাতাস। লেপকাঁথা মানতে চায় না। হাড় কাঁপে। ঘন হতে হতে মাহতাবের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়ে নতুন বউ শায়লা। দুটি শব্দ, নিশি, বিড়ালীনী, ধরে আছে সেইসব সোহাগ রাত, রোমাঞ্চের স্মৃতি! প্রথম বর্ষায় কদমের কুঁড়ি। শায়লা শুধু মৃদু হাসে। এক পলকে কূপিত কটাক্ষ ছুঁড়ে চলে যায় ভিন্ন প্রসঙ্গে। বিড়াল ছানার মাথায় গলায় হাত বুলিয়ে আবার মুখ খোলে, অ্যাই শোনো না, এটা ছেলে, নাকি মেয়ে?একটু থমকায় মাহতাব। তাই তো! কথাটা তো মনেই আসেনি। লেজ সরিয়ে দেখে নাও তো! আমি ঠিক বুঝি না। এত ছোট! আচ্ছা, বড় হোক, তখন এমনিতেই বোঝা যাবে।জিতু কিন্তু বলেছে, এটা মেয়ে বাচ্চা। তাই নাকি?…

অচিন গ্রাম

বিলেকাসা আমার জন্যে ঢাকা শহর এক করুণ রসিকতা! ঢাকাকে কখনোই আমি আমার শহর বলে ভাবতে পারি না। এখানে সবই আছে, শুধু প্রাণ ভরানো আনন্দ নেই; আবার বেশি টাকা পাই বলে আমি ঢাকা ছাড়তে চাই না, কম টাকায় চলতে পারব না বলে গ্রামেও যাই না। তবে গ্রাম দেখার জন্যে প্রাণ সব সময়ই ছটফট করে। সুযোগ পেলে আর ছাড়ি না। এবার আমন্ত্রণ পেলাম আমার বন্ধু সুমনের কাছ থেকে। সুমন থাকে গ্রামে। কিছুদিন আমাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিল। কিন্তু শেষ করতে পারেনি। ফিরে গেছে গ্রামে। যে কয়দিন হলে ছিল তাতেই ওর সঙ্গে ভালো একটু বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এই বন্ধুত্ব এখনো টিকে আছে। ঢাকায় এলে সুমন আমার বাসায় উঠে। তখন ওর চোখে আমি দেখতে পাই লাউ ডগার লকলকে সবুজ সুখ, ওর চেহারায় থাকে দিগন্ত ছোঁয়া সবুজ মাঠের উপর সোনালি রোদের ঝিলিক। বেশ কয়েকবারই আমাকে ওদের বাড়িতে যেতে বলেছে, আমিও যেতে রাজি হই, আমি মন থেকেই রাজি হই, কিন্তু শেষে আর যাওয়া হয়ে উঠেনি। এবার আর না গিয়ে পারলাম না। শরীর মন দুটোই ঢাকা ছাড়ার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছে। ও বলা মাত্র চলে গেলাম ওদের গ্রামে। আমার মেয়েটাও আসতে চেয়েছিল, কিছু একটা কিছু ভেবে ওকে না করেছি। সবাইকে রেখে আমি একাই এসেছি। দুইদিন মাত্র থাকব, আমার ইচ্ছা এর মধ্যে যত রকম করে পারি গ্রাম চেখে দেখব। জার্নির ধকলে একটানা লম্বা ঘুম। ঘুম ভেঙ্গে শুনি বাইরে চাপ কলের শব্দ। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ভোর পাঁচটা বাজে। সুমনকে…

রেজরের প্রান্তসীমায় বাংলাদেশ

অভিনাশ পালিওয়াল (অভিনাশ পালিওয়াল– এসওএএস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের একজন শিক্ষক, ‘মাই ইনিমিস এনিমি: ইন্ডিয়া ইন আফগানিস্তান ফ্রম দ্য সোভিয়েত ইনভেসন টু দ্য ইউএস উইথড্রল’ বইয়ের লেখক। তার এই লেখাটি ১০ই ডিসেম্বর অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত)। বাংলাদেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও সহিংসতা এতটাই নিয়মিত যে, সরকারের বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান দমনপীড়নকে যেকোনো কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক শোরগোল বিস্তৃত হতে পারে। বিরোধী বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করেছে। এই সরকার ব্যবস্থা স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে। তাদের এই দাবির প্রেক্ষিতে সরকার প্রধান ক্ষুব্ধ  প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন- কখনো তিনি আর ‘আগুন সন্ত্রাসীদের’ ক্ষমতায় আসতে দেবেন না। এটাই হলো বাংলাদেশের সূক্ষ্ম রাজনীতি। এরই মধ্যে পশ্চিমাদের সমালোচনা, সম্প্রতি দূত পর্যায়ে যৌথ বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে নীরব রয়েছে ভারত ও চীন।  কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, বাংলাদেশ এখন রাজনৈতিক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে, যেমনটা ২০০৯ সালের পর আর প্রত্যক্ষ করা যায়নি। এই ‘ওল্ড স্কুল’, সুপরিচিত দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে উচ্চমাত্রায় উত্তেজনা এবং রাজনীতিকীকৃত একটি সংস্থার উত্তেজনা থেকে যে সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে তা অপ্রত্যাশিত। এই সংকেত গভীর গোলমালের ইঙ্গিত দেয়। একটি বিষয় হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিষয়ে জনগণের হতাশা অনেক বিস্তৃত ও গভীর। তা এতটাই যে, তাদের  ভেতর থেকে দমনপীড়নের ভয় সরে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিষয় হলো, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সরকারের প্রধান মিত্ররা নির্বাচনের খরচের উৎস সংকুচিত হয়ে আসায় অপশন পুনর্বিবেচনা করছেন। তৃতীয়ত, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি- কারও এই অর্থনৈতিক…

রুয়ান্ডার স্মৃতি

নাসিরুজ্জামান নাসির জগন্ময় মিত্রের গাওয়া সেই বিখ্যাত কালজয়ী গান (তুমি আজ কত দূরে..) থেকে সুরটাকে যদি আলাদা করে ফেলেন তাহলে গানের যে কথাটা বা কম্পোজিশনটা পাবেন সেটা বলতে গেলে অনেকটাই সাধারণ মানের। কিন্তু এমন একটা সাধারণ মানের গীতের সাথে যখন ওই ভূবনজয়ী সুর আর অপূর্ব গায়কি ভঙ্গি যোগ হলো তখনই ওই গান হয়ে উঠলো হৃদয় ছোঁয়া, কালজয়ী। গীতা দত্তের গাওয়া “তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার….” গানের ক্ষেত্রে সেই একই কথা খাটে। ফলে মূল কথা হলো সুর আর গায়কি ভঙ্গি, কথাটা মোটামুটি হলেও ভাল গান হতে বাধা নাই। ২০১২ সালে আমেরিকায় অভিবাসী হবার পর যখন অনেক চড়াই-উৎরাই পার হচ্ছিলাম এমন সময় ২০১৪ সালের জুনে ইউএস এইড রুয়ান্ডা মিশনে সিনিয়ার পাবলিক হেল্থ এ্যাডভাইজার হিসেবে চাকরির ডাক পরলো। সব আয়োজন শেষে যাবার দিন-ক্ষণ এলো। বিদায় বেলায় দরজার চৌকাঠের কাছে দাঁড়িয়ে সহধর্মিনী ধরা-ধরা গলায় বললো “ফোন করো, চিঠি দিও, খাওয়া-দাওয়া ঠিক করে করো, শরীরের দিকে বিশেষ যত্ন নিও” এমনি আপাত অর্থহীন অগুনতি কথা। কিন্তু অতিমাত্রার এ সাধারণ কথাগুলোর সাথে ওই মুহূর্তে তার গায়কি (বলার) ভঙ্গি আর সুরের যে pathos (উদ্দীপনা) যোগ হলো সেটা জগন্ময় মিত্রের ওই সাধারণ কথার অপূর্ব গানের মতো কালজয়ী না হলেও রুয়ান্ডায় অবস্থানকালে করোনা ভাইরাসের মতো সে কথা আমার ফুঁসফুঁসের মধ্যে গেঁথে  গেলো। তার আগে ঠান্ডা মাথায় সে আমাকে to do and not-to-do এর একটা নাতিদীর্ঘ তালিকা মৌখিক ভাবে দিয়েছিলো। সে not-to-do গুলোর তালিকার একটা ছিল “পারলে হালাল মাংশ…

কবিতা

তুমি আছো বধির মাহবুব হাসান শীত-বাতাসের কামড়ে ঝরছে গাছের পাতা দিনগুলো ঘোলা আর শিশার মতো শিরশিরে ভয় আমাকে গেঁথে ফেলে শিক-কাবাবের মতো ঝলসে দেয়, শুধু আমাকেই? না, তোমাকেও গাঁথে? ক্ষমতার শিরে বসে তুমি শীতার্ত, ক্ষুধার্ত, ঘরহীন মানুষেরে তুমি বোঝো? বোঝো?? বোঝো??? তুমি তো নিঘর এক, সুদূরের কেউ একজন,তোমাকে চেনে না কেউ, তবু তোমার আশায় দিন কাটায়, রাত উজাড় কওে দেয়! কে তোমাকে পায়? কে জিগাতে পারে তার কষ্টের কথা তোমার কাছে? কে তার ক্ষুধার যন্ত্রণার সেরেনাদ শোনাতে পারে? কে পারে বলতে এই আসন্ন বরফ-কালের ভেজা পরিবেশে তার নিঘর জীবনের আর্তির শ্বাস কতো কষ্টের হোলিতে গাঁথা? তোমার কর্ণ গহ্বর আছে, কিন্তু সেখানে গরিব মানুষের চিৎকার পশে না। তোমার চোখ আছে, কিন্তু সেখানে কোনো দৃষ্টি নেই। তোমার আনন্দ বোধ আছে,হাস্যরস তৈরির ক্ষমতাও আছে, কিন্তু নেই সেখানে মানুষের জন্য অবাক করা ভালোবাসা। তোমার হৃদয় আছে, কিন্তু সেখানে নেই কিছু অনুভূতির তার, যাতে বাজতে পারে গরিব মানুষের বেদনার ধ্বনিপুঞ্জ আলাউদ্দিন খাঁ’র সেতারের মতো অনর্গল, আর তুমি, ওই যে নীলাকাশের মতোই পরাবাস্তবতার নিখিলে বসে শুধু দেখো মানুষের অধঃপতনের কারুকলা! তোমার ষোলকলা পূর্ণ হবে কবে? সনেটের দিন রেজাউদ্দিন স্টালিন  সনেটের দিন শেষ-কার তবে শুরু; সোনালি মোড়কে পেলে-নতুনের স্বাদ কিছুটা মিলবে,বোধে ছড়াবে অগুরু। পাঠক খু্ঁজবে ছন্দে আছে নাকি খাদ? অক্ষরবৃত্তের কাছে স্বরবৃত্ত শিশু, মাত্রাবৃত্ত শ্রম দেয় কুলিনের ঘরে। মুক্তছন্দ কি উদার ক্ষমাশীল যিশু- তাকেই আঁকড়ে আছিবাহিরে অন্তরে। আমরা কোথায় যাবো হাভাতে বর্ণের কতটুকু আঁকা যায়- আকালের ছবি?…

বাতাস যখন ভয়ঙ্কর

মিলন কিবরিয়া এমনটা হয় আমাদের। কোন কোন বিষয় আমাদের জীবনে এতোটাই স্বাভাবিক আর নিয়মিত যে তার গুরুত্ব আলাদা ভাবে টের পাই না। এই যেমন বাতাস। বাতাস আমরা না দেখতে পাই, না ধরতে পারি। অথচ বাতাসের সমুদ্রে আমাদের বসবাস, আমাদের বেঁচে থাকা। বাতাস নেই মানে আমি নেই, তুমি নেই, আমরা নেই। প্রাণের অস্তিত্ব নেই। বাতাসে আছে আমাদের জীবনের জ্বালানি অক্সিজেন। এই কোভিড সময়ে আমরা দেখেছি অক্সিজেন আমাদের কী ভাবে বাঁচিয়ে রাখে! বাতাস নাক-মুখ দিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। শ্বাস তন্ত্রের বিভিন্ন নালি পেরিয়ে পৌছে যায় আমাদের ফুসফুসে। সেখানে আছে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ছোট ছোট বায়ু থলি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই বায়ু থলির নাম অ্যালভিওলাস (Alveolus, বহু বচনে Alveoli)। এই বায়ু থলিগুলোর দেয়াল খুবই সূক্ষ, বাতাস এই বায়ু থলি থেকে রক্তে পৌঁছে যায় অনায়াসে আর তার মাধ্যমে সারা দেহে।  এই পুরো ব্যবস্থাপনা আমাদের সুস্থ থাকার, ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আমাদের অসুস্থতার কারণ হয়। অনেক সময় এই বায়ু থলি ফুটা হয়ে যায়। ফলে বায়ু থলির বাতাস ফুসফুস থেকে বের হয়ে আমাদের বুকের ভিতরে জমা হয়। ফুটা হলে বেলুন যেমন চুপসে যায় তেমনি ফুসফুসও চুপসে যায়, হতে পারে তা পুরোপুরি বা আংশিক। এই চুপসে যাওয়া ফুসফুসে বাতাস থাকে না বা কম থাকে। ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণও যায় কমে। অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে আমাদের শ্বাস কষ্ট হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থার নাম নিউমোথোরাক্স, সহজ বাংলায় বলতে পারি ‘বুকের ভেতর বাতাস জমা হওয়া’। নিউমোথোরাক্সের তীব্রতর ধরণকে বলে ‘টেনশান নিউমোথোরাক্স’ । এই…