আমার রাজনৈতিক চেতনা

আমি রাজনীতিবিদ নই, কিন্তু আমি আপাদমস্তক রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ। স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকে আমার মাঝে এ চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর দু:শাসন দেখে দেখে যখন যৌবনে পা দিয়েছি, তখন জাতীয়তাবোধের চেতনা আমাকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে লড়তে নিয়ে গেছে রণাঙ্গনে। হ্যাঁ, অসম সাহসে ভর দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। দেশকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার সশস্ত্র সংগ্রামে শরীক আমার অনেক সহযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেছে। তাদের এ আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়নি। আমরা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পৃথিবীর দেশে দেশে আজ উড়তে থাকা লাল-সবুজ পতাকা একজন মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক হিসেবে আমাকে গর্বিত করে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্ধশত বছর অতিক্রম করেছে। কিন্তু ফেলে আসা পঞ্চাশ বছরেও কি আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি? সামগ্রিক মূল্যায়নে একথা স্বীকার করতেই হবে যে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছি। আজ বিদেশি শাসকরা দেশ শাসন না করলেও যে রাজনৈতিক দলগুলোর শিখণ্ডিরা বাংলাদেশকে শাসন করছেন, তাদের আচার আচরণই প্রমাণ করে যে তারা দেশ শাসন করেন নিজেদেরকে জমিদার এবং জনগণকে প্রজা ভেবে। ক্ষমতার মোহে তারা জনগণকে তোয়াক্কা করেন না, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনের বিষয়বস্তুতে পরিণত করেন। রাজনীতিবিদদের এ মানসিকতা নতুন কিছু নয়। পাকিস্তান আমলে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে যখন দেনদরবার চলছিল তখনো তারা তাদের ক্ষমতার জন্য যতটা প্রয়োজন ততটুকু গ্রহণ করে পাকিস্তানি হানাদারের সঙ্গে আপস করে নিরাপদ দূরত্ব বজায়…

গোলাম আলীর কণ্ঠে দুটি গজল ও নুসরত ফতেহ আলী খানের দুটি কাওয়ালি

উপমহাদেশের বিখ্যাত গজল শিল্পী গোলাম আলী ও কাওয়ালি পরিবেশক নুসরত ফতেহ আলী খানের কণ্ঠে বেশ কিছু খ্যাতিমান কবি ও গীতিকারের কবিতা গজল ও কাওয়ালি প্রেমিকদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। অনেকে হয়তো গজল ও কাওয়ালির কথাগুলো যথাযথভাবে বুঝতে পারেন না, তা সত্বেও তারা আবেগ-তাড়িত হন। অনেকে আমাকে অনুরোধ করেন এগুলোর বাংলা তরজমা করে দিতে। আমি স্বউদ্যোগে তা করি, কেউ অনুরোধ করলে আরও অনুপ্রাণিত হই। এখানো গোলাম আলীর গাওয়া দুটি জনপ্রিয় গজল ও নুসরত ফতেহ আলী খানের দুটি জনপ্রিয় কাওয়ালির উর্দু উচ্চারণসহ বাংলা তরজমা উপস্থাপন করলাম। সাথে এগুলোর রচয়িতাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও যোগ করেছি। আশা করি পাঠকরা সাদরে গ্রহণ করবেন। আকবর ইলাহাবাদী (১৮৪৬-১৯২১) বিখ্যাত উর্দু কবি আকবর ইলাহাবাদী ১৮৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে আইন পেশায় যোগ দেন। এক পর্যায়ে তিনি তহশিলদার ও মুন্সেফ হিসেবেও কাজ করেন এবং তাঁর চাকুরি জীবন শেষ হয় একজন দায়রা জজ হিসেবে। ১৯২১ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর রচিত একটি কবিতা গোলাম আলীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। হাঙ্গামা কিউ বাড়পা “হাঙ্গামা হ্যায় কিউ বাড়পা, থোড়ি সি জো পী লি হ্যায়,ডাকা তো নেহি ডালা, চোরি তো নেহি কিয়া ÑÑউস মায় সে নেহি মতলব দিল জিস সে হো বেগানামাকসুদ হ্যায় উস মায় সে,সুরজ মে লাগে ধাবা ফিতরাত কে কারিশমে হ্যায়বুত হামকো কাহে কাফির,বুত হামকো কাহে কাফির আল্লাহ কি মরজি হ্যায়,না তজরুবা কারি যে ওয়াইজ কি ইয়ে বাতেঁ…

সূর্যের মতো উজ্জ্বল তরবারির মতো শানিত

মূল: অনিতা আমিরেজওয়ানি অনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু [ইরানের সাফাভি রাজবংশের প্রথম পর্যায়ের ইতিহাসের আলোকে লেখা অনিতা আমিরেজওয়ানির উপন্যাস ‘ইক্যুয়াল অফ দ্যা সান’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। সাফাভি রাজবংশের (স্থায়িত্ব: ১৫০১-১৭২২) অন্যতম সম্রাট তাহমাস শাহের (১৫১৪-১৫৭৬) কন্যা শাহজাদি পারী খান খানুম ১৫৪৮ সাল থেকে ১৫৭৮ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তিনি তাঁর সৎ ভাই ইসমাইল শাহকে বিষয় প্রয়োগে হত্যা করেছিলেন বলে সমসাময়িক ইতিহাসবিদরা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস পর পারীকে তাঁর সৎ ভাই মোহাম্মদ শাহ ও তাঁর স্ত্রী মাহদ-এ-ওলিয়া’র আদেশে হত্যা করা হয়। পারীর মৃত্যুর পর মাহদ-এ-ওলিয়া ইরানের কার্যত শাসকে পরিণত হন এবং দেড় বছর পর তিনিও নিহত হন। ] শাহজাদি পারী খানম চৌদ্দ বছর বয়সেই তেজস্বী, উদারতার গুণসম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি তীরন্দাজীসহ যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেছিলেন। তিনি ইরান শাহের বিশ্বস্ত পরামর্শকে পরিণত হন। তাঁর মাঝে কবি প্রতিভাও ছিল, কথার জাদুতে তিনি সকলকে মুগ্ধ করতে পারতেন। মহান এক রাজবংশে তাঁর জন্ম, যে বংশে বহু সাহসী নারীর জন্ম হয়েছে। তাঁর দাদি তাজলু খানুম মোসেলু, তাঁর দশ বছর বয়সী পুত্র তাহমাসকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করতে ভূমিকা রেখেছেন এবং ফুফু মাহিন বানু আমৃত্যু শাহ আহমাসকে পরামর্শ দিয়েছেন। চৌদ্দ বছর বয়সে পারী তাঁর ফুফুর স্থলে পিতা তাহমাসকে পরামর্শ দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন এবং পরবর্তী চৌদ্দ বছরে পিতার মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন তাঁর সকল সৎমাকে পেছনে ফেলে। পারীর তৎপরতা তাঁর বংশের সকল নারীর ভূমিকাকে ম্লান করে দিয়েছিল, কারণ তাঁর সাহসিকতার সীমা পরিসীমা ছিল না। শাহজাদি পরীর…

মাই স্টোরি

[ভারতের বিখ্যাত লেখিকা কমলা দাশ ১৯৩৪ সালে কেরালার মালাবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালে মারা যান। অর্ধশতাধিক উপন্যাস ও বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কমলা দাশ লেখালেখি করেছেন মালয়ালম ভাষায় এবং তিনি মালয়ালম ভাষার সেরা সাহিত্যিকদের অন্যতম।  তার বহু গ্রন্থ ইংরেজিসহ ভারতের প্রধান ভাষাগুলোতে অনুদিত হয়েছে। কমলা দাশ ভারতীয় নারীসমাজের মুক্তির নতুন পথপ্রদর্শন করেছেন তার লেখনীর মাধ্যমে। তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাই স্টোরি’ সত্যের প্রতি তার প্রেমের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। লক্ষ লক্ষ ভারতীয় পাঠক তার এই গ্রন্থ পাঠ করে তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। সমালোচনার কণ্টক তাকে বিদ্ধ করেছে, ক্ষতবিক্ষত করেছে। হুমকির মুখে পড়েছেন। এক পর্যায়ে হিন্দুধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করায় ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নতুন নাম গ্রহণ করেন ‘কমলা সুরাইয়্।া’ তিনি বলেছেন যে ধর্মান্তুরিত হওয়ায় তার আত্মীয়স্বজনরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মৌলবাদী হিন্দুরা তাকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। ইসলাম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, ইসলামের সারল্য এবং এ ধর্মে নারীর নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা তাকে মুগ্ধ করেছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘প্রকৃত সত্য আল্লাহই ভালো জানেন।’ ভারতীয় সমাজে নারীর অমর্যাদাকর অবস্থা সম্পর্কে তার আত্মোপলব্ধি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিটি শয্যা হচ্ছে এক একটি ক্রুশ, যে ক্রুশে নারীকে প্রতিনিয়ত বিদ্ধ করা হচ্ছে। মানুষ লালসার শিকার হয়, প্রেমে পড়ে না। আর নারী আত্মবিধ্বংসী প্রকৃত প্রেমে বিধ্বস্ত হয়।” কমলা দাশ তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাই স্টোরি’র ভূমিকায় লিখেছেন, “প্রথম বার হৃদরোগে আক্রান্তু হবার পর ডাক্তার…

বিয়ে বাড়ির রোস্ট

বিয়ে বাড়ির মুরগীর রোস্ট ছিল রবিউলের অত্যাধিক পছন্দের। বলা যায় তখন একটা মুরগীর রোস্টের জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারতো ও! কিন্তু হলে কি হবে বরযাত্রী দলে তো নেয়া হয়নি ওকে। রবিউল বরযাত্রী দলে জায়গা পায়নি বলে বাড়িতে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেলেন দাদীমা। উনি নাতির মাথায় হাত দিয়ে স্বান্ত্বনার সুরে বললেন, ‘ভাই তোমার লাগি আমি রোস্ট বানায়া দিমু।’ রবিউল দাদীর কথায় বিশেষ গুরুত্ব দিল না। নয় বছর বয়সেই ও বুঝে গিয়েছিল, বাড়িতে দাদীর কথার কোন দাম নেই। তাছাড়া দাদী কি ভবিষ্যদ্বানী করেন, নিজেই সেটা পরে মনে রাখতে পারেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, বাড়ির বানানো রোস্ট বিয়ে বাড়ির রোস্টের মতো কখনই এতো মজা হয় না। গ্রামের কাদের গাজীর ছেলে কবির গাজীর বিয়েতে এক পরিবার থেকে একজন হিসেবে দাওয়াত পেয়েছে রবিউলের বাবা শফিকুল ইসলাম। মেয়েপক্ষ থেকে বরযাত্রী সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই সংখ্যা ধরে রাখতে হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা কাদের গাজির। যে সময়ের কথা বলছি তখন বিয়ের সময় জিজ্ঞাসা করা হত, কয়টা কোস্টার যাবে? কোস্টার মানে পরিবহণ রুটের বাস। কারো বিয়েতে দুইটা কোস্টার ভাড়া করা মানে তারা বেশী ধনী, দাপট আছে। আর তিনটা করা মানে বিদেশে আত্মীয় স্বজন আছে।। কবির গাজীর বিয়েতে একটা কোস্টার ভাড়া করা হয়েছিল, কারণ তারা মধ্যবিত্ত। একটা কোস্টার হওয়াতে জায়গা পর্যাপ্ত ছিল না। যে কারণে বাড়ি গুনে শুধু পরিবারের প্রধানকে বলা হয়েছিল। ছোটদের কাউকে বলা হয়নি। পরিবারের প্রধান হিসেবে দাওয়াত পেয়েছিল রবিউলের বাবা। দাওয়াত দিয়ে গাজি বাড়ির…

একজন আপোষহীন খলি মন্তাজ

বিলেকাসা ঝলমলে বিশাল হলরুম। মানুষে ঠাসা, কিন্তু কোন ফিসফাস নেই, অন্য কোন শব্দ নেই। শব্দ শুধু একজনের কথার, সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছেন। তার প্রতিটি শব্দ যেন সবাই গিলে খাচ্ছেন। যিনি কথা বলছেন তিনিই খলি মন্তাজ। অনেকেই তাকে দেখেছে, হয়ত এই প্রথম তাকে শুনছে। অনেকে তাকে শুনেও থাকতে পারে, কিন্তু এই প্রথম তাকে দেখছে। কিন্তু আমি তাকে এই প্রথম দেখলাম, তাকে এই প্রথম শুনলাম, এবং আমি আনন্দে কাঁপলাম। খলি মন্তাজ, দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। পত্রিকা জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কি অদ্ভুত সুন্দর তার কথা, পত্রিকা বুঝবে শুধু দেশ এবং মানবতা, একটি পত্রিকা হল সমাজ এবং দেশের জন্যে এক কলুষমুক্ত দর্পণ, সাংবাদিক হবেন সত্যের বাহক, দেশ এবং মানবতার খাতিরে একজন সাংবাদিক কখনোই মিথ্যার সঙ্গে আপোষ করতে পারেন না, একটি পত্রিকার সম্পাদক … আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকার আপোষহীন সম্পাদক খলি মন্তাজকে। এত দিনেও কোন শিক্ষক আমাকে সাংবাদিকতা বা পত্রিকা নিয়ে এরকম কথা বলতে পারেননি। খলি মন্তাজের প্রতিটি কথা আমার হৃদয়ে নতুন ভাবে বাজতে থাকে। আমি ঠিক করে ফেলি, পাশ করেই আমি খলি মন্তাজের দৈনিক কালিত কালিমা পত্রিকায় জয়েন করব, খুব কাছ থেকে সাংবাদিকতা শিখব খলি মন্তাজের কাছে। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে আমার ঘুম আসে না। এত বড় অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার কথা না। আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান স্যারের কারণে আমি এই সুযোগ পেয়েছি। বিশেষ একটি কারণে তিনি আমাকে খুবই পছন্দ করেন। খলি মন্তাজের কথায় এখনো মোহাবিষ্ট…

কারাউইন : পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

হাবিব রহমান কিছু কিছু দেশ তাদের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে গর্ব করে। যেমন – নেপাল গর্ব করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট নিয়ে। যুক্তরাজ্য গর্ব করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্রিটিশ মিউজিয়াম নিয়ে। সৌদি আরব গর্ব করে জনসংখ্যার তুলনায় আয়তনে বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। আর উত্তর আফ্রিকার মুসলিম প্রধান দেশ মরক্কো গর্ব করে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিদার অনেক দেশ। যেমন – চীনাদের দাবি সাংহাইয়ের হাইয়ার স্কুল-ই পৃথিবীর প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ২২৫৭ সালে। পাকিস্তানের দাবি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের প্রথম। ভারতীয়দের দাবি বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য দলিলদস্তাবেজ পরীক্ষা করে, গিনেস বুকের রেকর্ড অনুসারে মরক্কার ফেজ নগরীর কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ই পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো-ও এই ধারণাকেই স্বীকৃতি দিয়েছে। আমার বিশ্ব ভ্রমণের তালিকায় প্রথম দ্রষ্টব্য থাকে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যভুক্ত স্থান। তারা অনেক গবেষণা করে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে এসব স্থানগুলোর স্বীকৃতি দেয়। তাই মরক্কো ভ্রমণের তালিকায় তানজিয়ার এবং ক্যাসাব্লাঙ্কা পরিদর্শনের পর এই দেশটিতে আমার গন্তব্যস্থল ছিল ফেজ নগরী। শুধু পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় দেখাই নয়, এটি একাধারে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শহর। হ্যান্ডিক্র্যাফটস ক্যাপিটাল হিসেবেও রয়েছে এর সুনাম। ফেজ নগরীর প্রধান আকর্ষণ চতুর্দিকে দেয়াল ঘেরা বাজার যা মেদিনা নামে পরিচিত। তাছাড়া লাল টুপি, ফেজ টুপি বা রুমি টুপির ইতিহাস-ও দেশটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ক্যাসাব্লাঙ্কা থেকে ফেজ নগরীর দূরত্ব ১৫৩ মাইল বা ২৪৬ কিলোমিটার। খোঁজ নিয়ে…

রবীন্দ্র মানসে সুফি প্রভাব

মুসা আল হাফিজ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১)  আধ্যাত্মিকতার মূলে আছে বিশ্ব নিয়ন্তার প্রতি বিশ্বাস। “সীমার মাঝে অসীম তুমি/বাজাও আপন সুর/আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ/ তাই এত মধুর।” এখানে ক্রিয়াশীল ছিলো  জোড়াসাকুর ঠাকুর পরিবারের ভাব-সাধনা,  ফার্সি কাব্য সংযোগ, উপনিষদ এবং  ব্রাহ্ম সমাজ ও রাজা   রামমোহন রায়ের (১৭৭২- ১৮৩৩) প্রভাব ।  রবীন্দ্র মনে আধ্যাত্মিক যে বোধ  তৈরি হয়, তা ব্রাহ্মমতের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছিলো  বৈদিক মন্ত্রের আত্মাকে । কিন্তু  বৈদিক আচারের উপর প্রাধান্য দিয়েছিলো বেদান্তবাদী হৃদয়ের ধর্মকে। “বৃথা আচার বিচার। সমাজের চেয়ে হৃদয়ের নিত্য ধর্ম সত্য চিরদিন।” হৃদয়ের ধর্মের অন্বেষা  পরম সত্তা। যিনি সব মানুষের হৃদয়ে মহত্ত্বের ও শ্রেয়োবোধের প্রেরণা দিচ্ছেন। চিত্রার ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতায় তার পরিচয় আছে। “কে সে? জানি না কে? চিনি নাই তারে শুধু এইটুকু জানি তারি লাগি রাত্রি-অন্ধকারে চলেছে মানবযাত্রী যুগ হতে যুগান্তর-পানে ঝড়ঝঞ্ঝা বজ্রপাতে জ্বালায়ে ধরিয়া সাবধানে অন্তরপ্রদীপখানি …।” রবীন্দ্রনাথের মরমিতা গভীরভাবে উজ্জীবিত ও বিনির্মিত ছিলো ফারসি ও হিন্দি কবিতার সুফি ভাবরসে। শেখ সাদী  (১২১০-১২৯১) হাফিজ (মৃত্যু :  ১৩৮৯) বা  রুমি (১২০৭Ñ  ১২৭৩) প্রতিধ্বনিত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতায় কবিতায়।   সুফিবাদর মন, তার  অপার্থিব মিলন-তিয়াস এবং  পরমানন্দময় ভাবাবেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ কতো গভীরভাবে একাত্ম ছিলেন, তার বিবৃতি নিজেই দিয়েছেন  পারস্য যাত্রী সফরনামায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ ফারসি ভাষার বন্ধনে যুক্ত ছিলেন হাফিজ-রুমিদের অধ্যয়নে। বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোতে বাংলার সাথে ফারসি চর্চা হতো অষ্টাদশ শতকে, এমনকি ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকেও। মুসলমান কবিগণ তো বটেই, হিন্দু কবি ও শিক্ষিত শ্রেনি ফারসিকে উপেক্ষা করতেন না। ভারতচন্দ্র…

সেই দৃষ্টি

মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আপনারা বিশ্বাস করুন বা না-ই করুন, আমি চাইনে কোন মানুষ আমার ততোটা প্রিয় হয়ে উঠুক যার প্রতিচ্ছবি আমার মনের মুকুরে অবরে সবরে প্রতিফলিত হবে। সেটা আমার সবচেয়ে বড় আপ্তজন মা-বাবারও না। কারণ আমি চাই না তাঁদের কারও প্রতিচ্ছবি আমার অন্তরে গেঁথে থাকুক। তাঁদের অবর্তমানে তাঁদের কথা স্মরণ করে আমি কষ্ট পাই। অথবা আমার অবর্তমানে তাঁরা কোন রকম আমার অভাববোধ করুন। যদিও আমি সেজদায় পড়ে আমার মা-বাবার জন্য দোয়া করি, রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।তবে সেজদায় পড়ে দোয়ার সময় ক্ষণিকের জন্য মা-বাবার আশীর্বাদাচ্ছন্ন মুখচ্ছবি আমার অন্তরে বাঙ্ময় হয়ে উঠে। আবার মুছে যায়। আমি তাঁদের মনে রাখতে চাই না। তাই কখনও তাঁদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলি না। কারণ চোখের দৃষ্টিই সর্বনাশা। সে মিথ্যে বলতে জানে না। সে সবসময় অকপট সত্য বলে। আমি যে আমার মা-বাবাকে জগতের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তা গোপন রাখার জন্যই তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলি না।এমনকি আমার বাবা কোন কারণে আমার প্রতি ক্রোধান্ধ হলেও তাঁর চোখের দিকে তাকাই না। অথবা আমার মা আমার জন্য দোয়া করে কেঁদে বুক ভাসালেও তাঁর মুখের দিকে তাকাই না। অথচ আমি জানি এবং মানি যে, মা-বাবার চোখের দিকে শ্রদ্ধাপূর্ণ ও মমত্ববোধের দৃষ্টিতে তাকালে চোখের জ্যোতি বাড়ে। পরম করুণাময় আল্লাহ্ পাকের করুণা লাভ করা যায়। আমি এমনই পামর যে জানি তবে মানি না। এর পরের স্তরের আমার আপ্তজন আমার সুপ্রিয় ভাই-বোন। আমি বড় কি ছোট, কোন ভাই-বোনের চোখের দিকে তাকাই না। অথচ…

শশী থারুরের সাক্ষাৎকার : এক লাখ পাউন্ড ঘুষের বিনিময়ে ঢাকার নওয়াব বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করেছিলেন

শশী থারুরের সাক্ষাৎকার : এক লাখ পাউন্ড ঘুষের বিনিময়ে ঢাকার নওয়াব বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করেছিলেন (ভারতীয় পার্লামেন্টে কংগ্রেস দলীয় সদস্য, জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, লেখক ও তুখোড় বক্তা শশী থারুর তাঁর যোগ্যতাবলেই এখন ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে এক আলোচিত ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৬ সালের ১০ মার্চ তিনি লন্ডনের কেরালার এক দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন দুই বছর তখন তাঁর বাবা-মা তাঁকে নিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন’স কলেজ থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর পিএইডি করেন মাত্র ২২ বছর বয়সে। পেশাজীবন শুরু করেন জাতিসংঘে এবং ২০০৬ সালে ভারত জাতিসংঘ মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার সেক্রেটারি অফ স্টেট কন্ডোলিজা রাইস বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র মহাসচিব হিসেবে কোনো শক্তিশালী ব্যক্তিকে দেখতে চায় না। এরপর থারুর জাতিসংঘের চাকুরি ছেড়ে ২০০৯ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং তখন থেকে তিনি তিন বার কেরালার একটি আসনে লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারে থারুর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। থারুর বহু সংখ্যক ফিকশন ও নন-ফিকশন গ্রন্থের রচয়িতা এবং ভারতের ইতিহাস, রাজনীতি, সংস্কৃতির ওপর, বিশেষ করে ব্রিটিশের ভারত লুণ্ঠনের ওপর তাঁর গ্রন্থ অত্যন্ত পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বেশ কয়েকটি দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখেন। থারুরের চাচা পরমেশ্বরন থারুর ভারতে ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’ এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শশী থারুরের বাবা ‘দ্য স্টেটসম্যান’ গ্রুপের বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন।) “এন এরা অফ…