শতবর্ষে ট্রাকটেটাস: ও দার্শনিক ভিটগেনস্টাইনের জীবন
তীক্ষ্ণ ঈগলচঞ্চু নাসা, অল্পবয়সী ছোটখাটো একজন মানুষ যুদ্ধে যাচ্ছেন। তিনি সংস্কৃতিমনা অপরিমেয় ঐশ্বর্যের অধিকারী একটি অস্ট্রিয়ান পরিবারের সন্তান। তিনি কথা বলেন ভিয়েনা সার্কেলের দার্শনিকদের মতো করে উচ্চস্বরে, যদিও বার্ট্রান্ড রাসেলের মতো খ্যাতনামা দার্শনিকের সঙ্গে তর্ক করার মতো ইংরেজিটাও তাঁর আয়ত্তে। এ-কারণেই তিনি আশা করেন যে, রাসেল তাঁকে দর্শনের জগতে পা রাখার জন্য জায়গা করে দেবেন। সদ্যপ্রয়াত একটি ইস্পাত সাম্রাজ্যের গোত্রপতি, যিনি আশা করতেন যে, তাঁর সন্তানেরা কর্তব্যের শক্তি দিয়ে চালিত হবে, সেই কার্ল ভিটগেনস্টাইনের এই কনিষ্ঠ পুত্রটির নাম ল্যুডভিগ জোসেফ জোহান ভিটগেনস্টাইন। পিতা ইউরোপের একজন ধনকুবের ইস্পাতসম্রাট হলেও ল্যুডভিগ নিজে একজন সাধারণ সৈনিক হিসেবেই গোলন্দাজ বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দিয়ে যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত হয়েছেন। তাঁর পিঠের ঝোলায় রয়েছে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্গে দর্শনশাস্ত্রের একটি বই, হাতে-লেখা কিছু নোট – যা প্রধানত প্রতিজ্ঞা বা বিবৃতির যৌক্তিক ভাষা (Logical form of proposition) সংক্রান্ত। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যখন তা প্রকাশিত হয়, তখন খুব কম লোকই তা পড়ে দেখে। অবশ্য এর লেখক নিজেও ঠিক এমনটাই হবে বলে নিশ্চিত ছিলেন। তবে মাত্র ৭৫ পৃষ্ঠার ক্ষীণকায় এই বইটি, যার নাম Tractatus Logicus Philosophicus – তাঁকে সুধীসমাজে পরিচিত করায় একজন জিনিয়াস হিসেবে। দর্শনজগতের অনেক বোদ্ধার মতে, ক্ষীণতনু এ-বইটি বিশ শতকের দর্শনবিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই এবং ল্যুডভিগ ভিটগেনস্টাইন হচ্ছেন এ-শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন দার্শনিক। ভিটগেনস্টাইনের ট্রাকটেটাস জার্মান ভাষায় প্রথমবার প্রকাশ পায় ১৯২১ সালে, যা আধুনিক দর্শনের সবচেয়ে প্রভাবশালী একটি কাজ, হয়তো বা তারও চেয়ে আরো বেশি কিছু। এর…