Category কবিতা

গোলাম আলীর কণ্ঠে দুটি গজল ও নুসরত ফতেহ আলী খানের দুটি কাওয়ালি

উপমহাদেশের বিখ্যাত গজল শিল্পী গোলাম আলী ও কাওয়ালি পরিবেশক নুসরত ফতেহ আলী খানের কণ্ঠে বেশ কিছু খ্যাতিমান কবি ও গীতিকারের কবিতা গজল ও কাওয়ালি প্রেমিকদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। অনেকে হয়তো গজল ও কাওয়ালির কথাগুলো যথাযথভাবে বুঝতে পারেন না, তা সত্বেও তারা আবেগ-তাড়িত হন। অনেকে আমাকে অনুরোধ করেন এগুলোর বাংলা তরজমা করে দিতে। আমি স্বউদ্যোগে তা করি, কেউ অনুরোধ করলে আরও অনুপ্রাণিত হই। এখানো গোলাম আলীর গাওয়া দুটি জনপ্রিয় গজল ও নুসরত ফতেহ আলী খানের দুটি জনপ্রিয় কাওয়ালির উর্দু উচ্চারণসহ বাংলা তরজমা উপস্থাপন করলাম। সাথে এগুলোর রচয়িতাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও যোগ করেছি। আশা করি পাঠকরা সাদরে গ্রহণ করবেন। আকবর ইলাহাবাদী (১৮৪৬-১৯২১) বিখ্যাত উর্দু কবি আকবর ইলাহাবাদী ১৮৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে আইন পেশায় যোগ দেন। এক পর্যায়ে তিনি তহশিলদার ও মুন্সেফ হিসেবেও কাজ করেন এবং তাঁর চাকুরি জীবন শেষ হয় একজন দায়রা জজ হিসেবে। ১৯২১ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর রচিত একটি কবিতা গোলাম আলীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। হাঙ্গামা কিউ বাড়পা “হাঙ্গামা হ্যায় কিউ বাড়পা, থোড়ি সি জো পী লি হ্যায়,ডাকা তো নেহি ডালা, চোরি তো নেহি কিয়া ÑÑউস মায় সে নেহি মতলব দিল জিস সে হো বেগানামাকসুদ হ্যায় উস মায় সে,সুরজ মে লাগে ধাবা ফিতরাত কে কারিশমে হ্যায়বুত হামকো কাহে কাফির,বুত হামকো কাহে কাফির আল্লাহ কি মরজি হ্যায়,না তজরুবা কারি যে ওয়াইজ কি ইয়ে বাতেঁ…

কবিতা

তুমি আছো বধির মাহবুব হাসান শীত-বাতাসের কামড়ে ঝরছে গাছের পাতা দিনগুলো ঘোলা আর শিশার মতো শিরশিরে ভয় আমাকে গেঁথে ফেলে শিক-কাবাবের মতো ঝলসে দেয়, শুধু আমাকেই? না, তোমাকেও গাঁথে? ক্ষমতার শিরে বসে তুমি শীতার্ত, ক্ষুধার্ত, ঘরহীন মানুষেরে তুমি বোঝো? বোঝো?? বোঝো??? তুমি তো নিঘর এক, সুদূরের কেউ একজন,তোমাকে চেনে না কেউ, তবু তোমার আশায় দিন কাটায়, রাত উজাড় কওে দেয়! কে তোমাকে পায়? কে জিগাতে পারে তার কষ্টের কথা তোমার কাছে? কে তার ক্ষুধার যন্ত্রণার সেরেনাদ শোনাতে পারে? কে পারে বলতে এই আসন্ন বরফ-কালের ভেজা পরিবেশে তার নিঘর জীবনের আর্তির শ্বাস কতো কষ্টের হোলিতে গাঁথা? তোমার কর্ণ গহ্বর আছে, কিন্তু সেখানে গরিব মানুষের চিৎকার পশে না। তোমার চোখ আছে, কিন্তু সেখানে কোনো দৃষ্টি নেই। তোমার আনন্দ বোধ আছে,হাস্যরস তৈরির ক্ষমতাও আছে, কিন্তু নেই সেখানে মানুষের জন্য অবাক করা ভালোবাসা। তোমার হৃদয় আছে, কিন্তু সেখানে নেই কিছু অনুভূতির তার, যাতে বাজতে পারে গরিব মানুষের বেদনার ধ্বনিপুঞ্জ আলাউদ্দিন খাঁ’র সেতারের মতো অনর্গল, আর তুমি, ওই যে নীলাকাশের মতোই পরাবাস্তবতার নিখিলে বসে শুধু দেখো মানুষের অধঃপতনের কারুকলা! তোমার ষোলকলা পূর্ণ হবে কবে? সনেটের দিন রেজাউদ্দিন স্টালিন  সনেটের দিন শেষ-কার তবে শুরু; সোনালি মোড়কে পেলে-নতুনের স্বাদ কিছুটা মিলবে,বোধে ছড়াবে অগুরু। পাঠক খু্ঁজবে ছন্দে আছে নাকি খাদ? অক্ষরবৃত্তের কাছে স্বরবৃত্ত শিশু, মাত্রাবৃত্ত শ্রম দেয় কুলিনের ঘরে। মুক্তছন্দ কি উদার ক্ষমাশীল যিশু- তাকেই আঁকড়ে আছিবাহিরে অন্তরে। আমরা কোথায় যাবো হাভাতে বর্ণের কতটুকু আঁকা যায়- আকালের ছবি?…

কবি মীর তকী মীর

খুশবন্ত সিংঅনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু আমি জানিনা, আমার মধ্যে কোন্ গুণটি অধিক- একজন প্রেমিকের, না একজন কবির। আমার মধ্যে প্রেম ও কবিত্ব দুটোই আছে। হৃদয়ঘটিত একটি ব্যাপার আমার বদনামের কারণ হয়েছে। কবিতা গোটা হিন্দুস্থানে আমার সুনাম ছড়িয়েছে। প্রেম আমাকে দিয়েছে মানসিক যন্ত্রণা আর কবিতা আমার মধ্যে উত্তেজনার সুড়সুড়ি দিয়েছে। প্রেম বা কাব্যচর্চা হতে যে বস্তুটি আমি পাইনি, তা হচ্ছে অর্থ। আমি যা আয় করেছি তা আমার কথামালার সূত্র ধরে। আমি উপলব্ধি করেছি, সুন্দরভাবে কাঁটা হীরকখন্ড এবং কাঁচের টুকরার মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারে না এমন লোকের সমাজে বাস করে আমাকে কী ভোজন করতে হবে তা স্থির করার কৌশল সুচারুভাবে রপ্ত করার চাইতেও আমার পৃষ্ঠপোষকের মর্জিই অধিক কার্যকর। আমার দরবেশতুল্য আব্বা মীর মোহাম্মদ আলী একদিন আমাকে বলেছিলেন, “বেটা, আমি তোমার ভবিষ্যত সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তোমার হৃদয়ে একটা আগুন জ্বলছে। আমার ভয় হচ্ছে, এই আগুন তোমাকে কী করে ফেলে।” আমার বয়স তখন মাত্র নয় বছর। তার কথা শুনে আমি হেসে ফেলেছিলাম। তার মধ্যে বয়সের প্রজ্ঞা ছিল। তিনি কেঁদেছিলেন, কারণ, তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, আমার মধ্যে প্রেমের যে আগুন জ্বলছে তা আমাকে প্রতিষ্ঠিত এবং ধ্বংস করবে। একদিন আসর নামাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে আব্বা বললেন, “বেটা, পৃথিবীটা দ্রুত বদলায় এবং এর সাথে পাল্লা দেয়ার সময় খুব কম। তাছাড়া জিন্দেগীর রাস্তাটা বড়ই বন্ধুর। তোমাকে প্রতিটি কদম ফেলতে হবে হিসেব করে। যে সময়টুকু আছে তা নিজেকে জানতে কাজে লাগাও।” তখন আমার বয়স মাত্র দশ বছর। যা খুশি করার…