কিছু এর রেখে যাই

আলী আহমাদ রুশদী আলী আহমাদ রুশদী প্রায় বারো বছর আগে একবার মনে হয়েছিল দিন ফুরিয়ে আসছে, অথচ কোথাও কি তেমন করে আমার চিহ্ন থাকবে? বহু বছর পর কেউ কি জানবে যে আমিও ছিলাম? সে সময় প্রথম শুরু করেছিলাম এই স্মৃতিকথা লেখা। মনে হয়েছিল আমার জীবন থেকেও হয়তো কারো জানার কিছু থাকবে, অথবা নিছক সময় কাটানোর জন্যই কেউ হয়তো পড়ে দেখবে। কিন্তু তারপরে সাংসারিক নানা ব্যস্ততায় লেখাটা আর শেষ করা হয় নি। কিছুদিন ধরে আমার স্ত্রী, তিন মেয়ে এবং জামাতা আশিক জানতে চাইতো লেখাটা কতদূর হলো। তারা প্রায়ই উতসাহ দিত লেখাটা শেষ করার জন্য। আমি খুব একটা যে আমল দিতাম তা না, মনে হতো এই সাধারণ একটা জীবনের গল্প জেনে কার কি লাভ হবে? এই ব্যস্ত সময়ে কার অবসর আছে অবিখ্যাত অপরিচিত কাউকে জানবার? তবুও মানুষ তো নিজের ছায়া দেখতে ভালোবাসে। অন্যদের চোখে পরিচিতির আভাস দেখতে চায়। মাঝেমাঝেই আমার লেখার কিছু অংশ ফেসবুকে শেয়ার করেছি। কিছু কিছু প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল অথবা খবরের কাগজে। সবসময়েই দেখেছি বহু মানুষ লেখাগুলো আগ্রহের সাথে পড়ছেন, সুন্দর মন্তব্য করছেন। এতে করে খুব উতসাহ পেলাম, মনে হলো এবার ঠিকঠাকভাবে শেষ করি লেখাটা। আমার বড় নাতনি করিমুন্নেসা এখন মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সে লেখাপড়া করছে সাহিত্য ও দর্শন নিয়ে। আমার জীবন, আমার অতীত, আমার কাজ নিয়ে তার প্রবল আগ্রহ। তার জন্ম এই দেশে, এই সময়ে, অথচ তার পূর্বসূরীদের সময় নিয়ে সে জানতে চায়। আমার ছোট…

বিপজ্জনক সময়ের সামনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র

ডক্টর জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি ‘একদলের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা’র দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। বিরোধীরা নির্বাচন বয়কট করলেও, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ আরও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে শেখ হাসিনা শিগগিরই সমসাময়িক ইতিহাসের সবথেকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নারী সরকার প্রধান হয়ে উঠবেন। কিন্তু এমন রাজনৈতিক আধিপত্যের ঝুঁকিও রয়েছে। সারা বিশ্বেই এই এক দলের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রায়ই এমন সব রোগের বিকাশ ঘটায়, যা দেশের শাসনব্যবস্থার ক্ষতি করে। তবে রাজনীতি, সরকার এবং অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা এই সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করতে পারে।বাংলাদেশের এক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থাযদিও এই এক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। তবে এটিকে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে, যেখানে একটি নির্দিষ্ট দল বড় একটি সময়ের জন্য রাজনীতি, সংসদ, সরকার এবং নীতিনির্ধারণে আধিপত্য বিস্তার করে। ৭ই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ জয়ের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। যদিও আওয়ামী লীগ এখন ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে কম সংসদীয় আসন দখল করে আছে, তবে এর রাজনৈতিক আধিপত্য আসলে অনেক বেশি।গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে এবারেরটিসহ মোট দুটি নির্বাচন বয়কট করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নির্বাচনে বিএনপি সদস্যদের যোগদানে প্ররোচিত করতে এবং পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য ব্যানারের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কিছু আসনে তার সদস্যদের দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ।ফলস্বরূপ নির্বাচনে কিছু সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে, বিশেষ করে স্বতন্ত্র এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীদের…

কুয়াশা ফিরিয়ে দিল বিমান ফোবিয়া

শাকিল রিয়াজ এয়ারওয়েজের টিকেট কাটা ছিল ইকোনমি ক্লাসের। প্লেনে বোর্ডিং করার সময় ডেস্কের মেয়েটি বললো, স্যার আপনার টিকেট আপগ্রেড করে দেয়ার নোট এসেছে। আপনি বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন। কোনও বাড়তি খরচ ছাড়াই। আমি অবাক হলাম। বিজনেস ক্লাসের টিকেটের দাম ইকোনমি ক্লাসের পাঁচ গুণ বেশি। স্টকহোম-ঢাকা ইকোনমি ক্লাসের দাম যদি ১২ হাজার ক্রাউন (১ লাখ ৩০ হাজার টাকা) হয় তবে বিজনেসের দাম প্রায় ৬০ হাজার ক্রাউন। জিজ্ঞাসা করলাম কেন এই বাড়তি সুবিধা। কম্পিউটারে আরেকবার চোখ বুলিয়ে জানালো, ২০ বছর ধরে আপনি কাতার এয়ারওয়েজের প্রিভিলেজ ক্লাবের মেম্বার। অনেক কিউ-মাইল এবং পয়েন্ট জমা আছে। এসব সহ আরো যেন কী কী বললো। শেষে জানালো, আমাদের বিজনেস ক্লাবের সিট খালি থাকলে এভাবে আমরা কাউকে কাউকে পিক করি যাদের সঙ্গে আমাদের আস্থার সম্পর্ক রয়েছে। অফিসারকে ধন্যবাদ জানিয়ে আপগ্রেডেড বোর্ডিং কার্ড নিয়ে প্লেনে উঠলাম। খরচ অনেক বেশি বলে জীবনে মাত্র ২/৩ বার বিজনেসে ভ্রমণ করেছি। তাও নিজের ইচ্ছায় নয়, অন্যের ইচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে। এবারের বাইরে আরও একবার ফাও ভ্রমণ করেছি বিজনেসে। সেবার ব্যাংকক থেকে স্টকহোমের পথে থাই এয়ারওয়েজ আমাকে ইকোনমি থেকে “তুলে” বিজনেসে সরিয়ে নেয় “চোখে চোখে” রাখার জন্য। শাপেবর হওয়া এই ঘটনার পেছনে ছিল বাংলাদেশের এক অসৎ ইমিগ্রেশন কর্তা। আমার যাত্রার শুরু ছিল ঢাকা। ঘুষ চেয়ে না পেয়ে নোট দিয়েছিল আমার ভিসা হয়তো প্রকৃত ভিসা নয় এই বলে। ব্যাংকক থেকে প্লেন ছাড়ার পরপরই এক অফিসার এসে আমাকে বিজনেস ক্লাসে নিয়ে যায় এবং পাসপোর্টটি নিজের কাছে…

একজন একনায়কের সঙ্গে বিমান ভ্রমণ

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু আমার সাত দশকের জীবনে চার জন সামরিক একনায়ক কর্তৃক শাসিত হয়েছি: — জেনারেল ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান, জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। শেষোক্ত দুই একনায়ককে দেখার ও তাদের সঙ্গে করমর্দনের এবং সর্বশেষ জনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বিমান ভ্রমণের ও তিনি ক্ষমতার গগন থেকে ছিটকে পড়ার পর তার সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপচারিতার সুযোগ হয়েছে। ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে চারজনের জনের মধ্যে কোনো মিল ছিল না। জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি ব্রিটিশ রয়েল মিলিটারি কলেজ, স্যান্ডহার্স্টের ক্যাডেট ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা-আসাম ফ্রন্টে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান অবিভক্ত ভারতে দেরাদুনে কর্নেল ব্রাউন কেমব্রিজ স্কুল ও পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইরাক, ইটালি ও উত্তর আফ্রিকায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৪২ সালে মুসোলিনীর নেতৃত্বাধীন ইটালির বাহিনীর হাতে বন্দি হয়ে যুদ্ধবন্দি শিবিরে আটক থাকাকালে তৃতীয় প্রচেষ্টায় তিনি পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মিরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিচালনা করেন। লেফটেন্যান্ট জিয়াউর রহমান করাচির একাডেমি স্কুলে এবং ডি,জে সিন্ধ গভর্নমেন্ট সায়েন্স কলেজে পড়াশোনার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করায় পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক “হিলাল-ই-জু’রাত”, তিনটি “সিতারা-ই-জু’রাত” ও আটটি “তমঘা-ই-জু’রাত” পদক লাভ করেন। ১৯৭১ সালের…

শতবর্ষে ট্রাকটেটাস: ও দার্শনিক ভিটগেনস্টাইনের জীবন

তীক্ষ্ণ ঈগলচঞ্চু নাসা, অল্পবয়সী ছোটখাটো একজন মানুষ যুদ্ধে যাচ্ছেন। তিনি সংস্কৃতিমনা অপরিমেয় ঐশ্বর্যের অধিকারী একটি অস্ট্রিয়ান পরিবারের সন্তান। তিনি কথা বলেন ভিয়েনা সার্কেলের দার্শনিকদের মতো করে উচ্চস্বরে, যদিও বার্ট্রান্ড রাসেলের মতো খ্যাতনামা দার্শনিকের সঙ্গে তর্ক করার মতো ইংরেজিটাও তাঁর আয়ত্তে। এ-কারণেই তিনি আশা করেন যে, রাসেল তাঁকে দর্শনের জগতে পা রাখার জন্য জায়গা করে দেবেন। সদ্যপ্রয়াত একটি ইস্পাত সাম্রাজ্যের গোত্রপতি, যিনি আশা করতেন যে, তাঁর সন্তানেরা কর্তব্যের শক্তি দিয়ে চালিত হবে, সেই কার্ল ভিটগেনস্টাইনের এই কনিষ্ঠ পুত্রটির নাম ল্যুডভিগ জোসেফ জোহান ভিটগেনস্টাইন। পিতা ইউরোপের একজন ধনকুবের ইস্পাতসম্রাট হলেও ল্যুডভিগ নিজে একজন সাধারণ সৈনিক হিসেবেই গোলন্দাজ বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দিয়ে যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত হয়েছেন। তাঁর পিঠের ঝোলায় রয়েছে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্গে দর্শনশাস্ত্রের একটি বই, হাতে-লেখা কিছু নোট – যা প্রধানত প্রতিজ্ঞা বা বিবৃতির যৌক্তিক ভাষা (Logical form of proposition) সংক্রান্ত। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যখন তা প্রকাশিত হয়, তখন খুব কম লোকই তা পড়ে দেখে। অবশ্য এর লেখক নিজেও ঠিক এমনটাই হবে বলে নিশ্চিত ছিলেন। তবে মাত্র ৭৫ পৃষ্ঠার ক্ষীণকায় এই বইটি, যার নাম Tractatus Logicus Philosophicus – তাঁকে সুধীসমাজে পরিচিত করায় একজন জিনিয়াস হিসেবে। দর্শনজগতের অনেক বোদ্ধার মতে, ক্ষীণতনু এ-বইটি বিশ শতকের দর্শনবিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই এবং ল্যুডভিগ ভিটগেনস্টাইন হচ্ছেন এ-শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন দার্শনিক। ভিটগেনস্টাইনের ট্রাকটেটাস জার্মান ভাষায় প্রথমবার প্রকাশ পায় ১৯২১ সালে, যা আধুনিক দর্শনের সবচেয়ে প্রভাবশালী একটি কাজ, হয়তো বা তারও চেয়ে আরো বেশি কিছু। এর…

সকলি গরল ভেল

আমার চোখের সমুখে অনেক মানুষের অনেক পরিবর্তন দেখেছি। অনেকে ছোট থেকে বড় হয়েছে। অনেকে কৃশকায় থেকে স্থুলকায় হয়েছে। অনেকে যুবক থেকে বৃদ্ধ হয়েছে। অনেকে ধনী থেকে দরিদ্র আবার অনেকে দরিদ্র থেকে প্রভূত বিত্তশালী হয়েছে। কতজন অসুস্থ থেকে সুস্থ জীবন ফিরে পেয়েছে আবার কত সুস্থ মানুষ সহসা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। কিন্তু আমার চোখের দেখা দু-জন মানুষ তাদের মৃত্যুর আগ-পর্যন্ত কোন পরিবর্তন দেখিনি। দুই জনই আমার অত্যন্ত প্রিয়জন। একজন আমার দাদী। অপরজন আমার শাশুড়ি। আমার দাদী ও শাশুড়ির মাঝে অনেক বেশি মিল ছিল। আমার দাদীর চেহারা গোলগাল ছিল। মুখে কোন দাঁত ছিল না। বেঁটে-খাটো মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় হাসিমুখে কথা বলতেন এবং কথায় কথায় মানুষের জন্য দোয়া করতেন। তিনি মানুষকে খাওয়াতে ভালোবাসতেন। কোন ভিক্ষুককে খালি হাতে দরজা থেকে ফিরিয়ে দিতেন না। তিনি নিজে যেমন হাসতেন তেমন অপরকেও হাসাতে পারঙ্গম ছিলেন। অহংকার কাকে বলে তা তিনি জানতেন না। তবে বেশ অভিমানী ছিলেন। যে কোন মানুষের প্রতি তাঁর অগাধ মমত্ববোধ ছিল। জীবনের প্রথম দিন তাঁকে যেভাবে দেখেছি বলে মনে পড়ে মৃত্যুর পরও তাকে তেমনই দেখেছি। আমার শাশুড়ির চেহারা খানিকটা লম্বাটে ছিল। মুখে কোন দাঁত ছিল না। তিনিও বেঁটে-খাটো মানুষ ছিলেন। তবে তিনি সামনে ঝুঁকে হাঁটতেন। তিনি সবসময় হাসিমুখে কথা বলতেন এবং কথায় কথায় মানুষের জন্য দোয়া করতেন। তিনি মানুষকে খাওয়াতে ভালোবাসতেন। কোন ভিক্ষুককে খালি হাতে দরজা থেকে ফিরিয়ে দিতেন না। তিনি নিজে যেমন হাসতেন তেমন অপরকেও হাসাতে পারঙ্গম ছিলেন। তিনি নিরহংকারী…

শেখ সা’দীর বাণী

(মধ্য যুগে ফারসি ভাষার অন্যতম সেরা কবি শেখ সা’দীর পুরো নাম আবু মুহাম্মদ মোসলেহ আল-দীন বিন আবদুল্লাহ শিরাজি (জন্মধ ১২১০-মৃত্যু: ১২৯১)। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তিনি তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘গুলিস্তান’ ও ‘বুস্তান’ এর জন্য বিখ্যাত। তিনি “শব্দের কারিগর” হিসেবেও খ্যাত। নবীকরিম সা: এর শানে তাঁর লেখা “বালাগাল উলাবি জামালিহী —’ এক অনন্য সৃষ্টি।) ****“একবার বাগদাদের প্রধান বাজারে আগুন লাগলে এক লোক আমার কাছে এসে বললো যে আমার দোকান আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমি উত্তরে বললাম, “আলহামদুলিল্লাহ!” — সকল প্রশংসা আল্লাহর। সেই মুহূর্তে আমি মানুষের সামনে লজ্জাবোধ করেছি যে আমি স্বার্থপরের মতো নিজের সুবিধা খুঁজেছি। আমি মাত্র একবার “আলহামদুলিল্লাহ” বলার জন্য আমাকে ক্ষমা করতে ত্রিশ বছর যাবত আল্লাহকে খুঁজছি।” ****“এক দুরাচারী বাদশাহ তার এক অনুরাগীর কাছে জানতে চাইলেন যে বাদশাহ’র জন্য উত্তম ইবাদাত কি! লোকটি উত্তর দিলেন, “আপনার জন্য সেরা ইবাদাত হচ্ছে দিনের অর্ধেক সময় নিদ্রিত থাকা, তাহলে অন্তত কিছু সময় জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।” ****“দশ জন দরবেশ একটি কম্বলের নিচে ঘুমাতে পারেন, কিন্তু দু’জন বাদশাহ একটি রাজ্য শাসন করতে পারেন না।” ****“একটি মণির টুকরা কাদায় পড়ে গেলেও সেটি অমূল্য। কিন্তু ধূলি যদি বেহেশত থেকে পতিত হলেও তা মূল্যহীন।” ****“সমুদ্রের গভীরে এত সম্পদ রয়েছে, যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। কিন্তু তুমি যদি নিরাপত্তা খোঁজো, তা পাবে সমুদ্র সৈকতে।” ****“এক ছাত্র তার ওস্তাদকে বললো: “লোকজন আমাকে খুব বিরক্ত করে, অনেকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসে। তাদের আসা-যাওয়ায় আমার মূল্যবান সময় নষ্ট…

বিচিত্র খবর-বিচিত্র তথ্য

টার্গেট ১০০ সন্তান: ৬০তম শিশুর জন্মের পর আরও স্ত্রী খুঁজছেন তিনি! নাম তার সরদার হাজী জান মুহাম্মাদ খান, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার বাসিন্দা। সম্প্রতি ৬০তম সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। তবে তার লক্ষ্য ১০০ সন্তানের বাবা হওয়া। লক্ষ্য পূরণে আরও স্ত্রী খুঁজছেন তিনি। জানা গেছে, বর্তমানে জান মুহাম্মাদের ঘরে আছে তিনজন স্ত্রী। এখন চতুর্থ স্ত্রী খুঁজছেন তিনি। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জান মুহাম্মাদের স্ত্রীরা এখন পর্যন্ত ৬০ সন্তানের জন্ম দিলেও তাদের মধ্যে ৫৫ জন বেঁচে আছে। তারা সবাই সুস্থ আছে। বাকি পাঁচজন মারা গেছে। এতসব স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একই বাড়িতে বাস করেন জান মুহাম্মদ। পঞ্চাশ বছর বয়সী সরদার জান মুহাম্মাদ খান কোয়েটা শহরের ইস্টার্ন বাইপাস এলাকার বাসিন্দা এবং খালজি গোত্রের একজন সদস্য। তিনি একজন ফার্মাসিস্ট। ওই এলাকায় তার একটি ক্লিনিক আছে। জান মুহাম্মাদ খান তার ৬০তম সন্তানের নাম রেখেছেন খুশহাল খান। তিনি বলেন, খুশালের জন্মের আগে তার মাকে আমি উমরাহ করতে নিয়ে গিয়েছিলাম, এজন্য তাকে (সদ্যোজাত সন্তানকে) আমি হাজী খুশাল খান ডাকব।  এতজন সন্তানের নাম মনে থাকে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন নয়? জান মুহাম্মাদ আরও জানান, তিনি চতুর্থ বিয়ে করতে চান এবং সেজন্য তিনি পাত্রী খুঁজছেন। তিনি বলেন, আমার সব বন্ধুকে বলে রেখেছি আমাকে চতুর্থ বিয়ের জন্য একজন পাত্রী খুঁজে দিতে। বয়স হয়ে যাচ্ছে, তাই তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজটা সারতে চাই। তিনি একাই কেবল আরও সন্তান চান বিষয়টি এমন নয়, তার স্ত্রীরাও একইভাবে আরও সন্তান চান। তাদের সন্তানদের মধ্যে পুত্রের চেয়ে কন্যার সংখ্যা…

দাম্ভিকতা ও রাশিচক্র

কারও দাম্ভিক বা আত্মম্ভরী মনোভাব কি আসলে নিজের প্রতি তার অবিচল আস্থার অভিব্যক্তি? বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত। অনেকে বলেন, এটি মানুষের ব্যক্তিত্বের বৈকল্য, এক ধরনের মানসিক ব্যাধি। একটি বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই যে ওইসব লোকজনই দাম্ভিক বা নার্সিসটিক (Narcissistic), যারা নিজেদের ভালোবাসেন এবং নিজেদের বিষয়াবলী ছাড়া অন্য কারও বিষয়ে তারা শুধু অমনোযোগীই নন, নিজের ওপর চরম আস্থার মুখোশের আড়ালে তারা তাদের সামান্য সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ব্যাপারটি বেশ জটিল। দাম্ভিক লোকজন দৃশ্যত আন্তরিক হলেও আবেগশূন্য; ‘ইয়েস,’ ‘নো,’ ‘ভেরিগুড’ এর বাইরে অগ্রসর হন না; তারা আত্মমগ্নতা ও আত্মতৃপ্তির মাঝে থাকেন। দাম্ভিকতা বা আত্ম-অহমিকার প্রধান লক্ষণগুলোর একটি হলো, এ ধরনের মানুষ তাদের আচরণ সম্পর্কে অবহিত, কিন্তু তারা এটা নিয়ে মাথা ঘামান না, কারণ তারা তাদের বৈশিষ্ট বা স্বভাবকে অস্বাভাবিক বা অবাঞ্ছিত বলে মনে করেন না।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক প্রিয়ভাজন প্রফেসর আশরাফ আহমেদ, যিনি বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপচিালকের দায়িত্বও পালন করেছেন, তাঁর ‘আত্মঅহমিকা’ নিবন্ধটি সম্পাদনা করতে গিয়ে বিষয়টির ওপর আরও কিছুটা আলোকপাত করার ইচ্ছা জাগ্রত হলো। কারণ আমি ‘খুদী’ বা ‘আমিত্ব’ নিয়ে কবি আল্লামা ইকবালের কবিতার নিচের অংশটুকু আমি প্রায়ই উচ্চারণ করি, চর্চা করি এবং আমার ঘনিষ্টজনদের আমল করতে বলি। কবিতাংশ হচ্ছে: “খুদী কো কর বুলন্দ ইতনা,কে হর তকদীর সে পেহলে,খুদা বান্দা সে খুদ পুছে,বাতা তেরি রেজা ক্যয়া হ্যায়?” (তোমার আমিত্বকে এত দৃঢ় করো,যাতে প্রতিবার ভাগ্য নির্ধারণের আগেআল্লাহ স্বয়ং তোমার কাছে জানতে চানবলো, তুমি কি চাও?) আমি জানি না,…

অপসংস্কৃতির বেড়াজালে যুবসমাজ: উত্তরণের উপায়

আলী ওসমান শেফায়েত সংস্কৃতি একটি জাতির প্রাণ। আর সভ্যতা হলো সেই জাতির দেহ স্বরূপ। প্রাণহীন দেহসত্তার যেমন কোনো মূল্য নেই, দেহহীন আত্মাও তেমনি মূল্যহীন। তাই বলা যায়, সংস্কৃতি ও সভ্যতা অনেকাংশে পরষ্পরের পরিপূরক। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে আধুনিক বিশ্বে প্রতিযোগিতার ময়দানে একটি উন্নত জাতি হিসেবে পরিভ্রমণ করার জন্য সংস্কৃতির চর্চা ও মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সংস্কৃতিহীন জাতি প্রাণহীন জড় পদার্থের ন্যায়। যার কোনো কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। কোনো আত্মা যদি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তাহলে সে আত্মা যেমন ধীরে ধীরে অপ্রত্যাশিত, কিন্তু অপ্রতিরোধ্য গতিতে চিরস্থায়ী বাস্তবতা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, ঠিক তেমনি একটি জাতির আত্মা নামক সংস্কৃতি যদি অপসংস্কৃতির মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে সে জাতিও ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে কিংবা অন্য জাতির উপনিবেশে পরিণত হবে, সন্দেহ নাই। মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় দেশ। এ দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ একত্রে বসবাস করে। আর এর ৯১% মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ার কারণেই এদেশে গ্রহণীয় সংস্কৃতি ইসলামী ভাবধারার হওয়ায় স্বাভাবিক। যার মূল সুর হলো তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত। যার জন্য মানুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রকৃতিগতভাবে সেদিকেই ধাবমান। কিন্তু পাশ্চাত্য সংস্কৃতিমনা ও সুবিধাবাদী কিছু বুদ্ধিজীবীদের প্রহরায় ইসলামী সংস্কৃতির মূলস্তম্ভ তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের শিক্ষা থেকে জাতি আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। অন্যদিকে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস দেশের সহজ-সরল মানুষদেরকে অক্টোপাসের ন্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে ও সাক্ষাৎ ধ্বংসের মুখে নিপতিত করছে। তথাকথিত আধুনিকতা, অপসংস্কৃতি ও সভ্যতা নামের অন্ধকার বেড়াজালে বন্দি হয়ে, মুসলিম জাতি আজ…